ইবি শিক্ষকের বিরুদ্ধে স্ত্রীকে পাশবিক নির্যাতনের অভিযোগ 

প্রকাশ | ০৪ জুন ২০২৪, ২৩:৩০

ইবি প্রতিনিধি
ফাইল ছবি

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের সভাপতি সহকারী অধ্যাপক ড. সঞ্জয় কুমার সরকারের বিরুদ্ধে পাশবিক নির্যাতনের অভিযোগ করেছেন তার স্ত্রী জয়া সাহা। তবে নির্যাতনের বিষয়ে আদালতে মামলাও করেছেন তিনি। মঙ্গলবার (৪ জুন) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেস কর্ণারে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন তিনি। এসময় তার বাবা-মাও উপস্থিত ছিলেন।

নির্যাতনের শিকার জয়া সাহা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি নাটোরের উপরবাজার উপজেলার রতন কুমার সাহার বড় কন্যা। এদিকে সঞ্জয় কুমার পাবনা জেলার চড়াডাঙ্গা গ্রামের সুশান্ত কুমার সাহার পুত্র। 

জানা যায়, ২০১৫ সালে পারিবারিকভাবে সঞ্জয় ও জয়ার বিয়ে হয়। বিয়েতে জয়ার বাবা উপহার হিসেবে ২৫ লক্ষ টাকা, ২০ ভরি স্বর্ণালংকার, টিভি, ফ্রিজসহ প্রয়োজনীয় যাবতীয় ফার্ণিচার দেয়। তবে বিয়েরে পর থেকেই তাদের উভয়ের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে মনোমালিন্য শুরু হয়। গত বছরের জুন মাসে স্ত্রীকে জোরপূর্বক শ্বশুরবাড়ি রেখে আসে সঞ্জয়। তারপর থেকে উভয়েই একবছর আলাদা থাকছেন। তাদের সংসারে সাড়ে চার বছরের একটি পুত্র সন্তান রয়েছে। নির্যাতন নিয়ে আদালতে মামলাও করেছেন বলেও জানান তিনি।

লিখিত বক্তব্যে জয়া সাহা বলেন, সঞ্জয়ের সঙ্গে বিয়ের কিছুদিন যেতে না যেতেই আমার স্বপ্ন ভঙ্গ হতে শুরু করে। সে আমার উপর পাশবিক নির্যাতন শুরু করে আমার জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলে। কারণে অকারণে আমাকে মারধর শুরু করে। সে আমাকে কথায় কথায় নানারকম জঘন্য ভাষায় গালি দিত। তার পাশবিকতার হাত থেকে আমার ছোট ছেলেটিও রক্ষা পাইনি। আমি এই শিক্ষক নামের জ্ঞানপাপীর উপযুক্ত শাস্তি চাই।

সঞ্জয় কুমারের স্ত্রী জয়া সাহা আরও বলেন বলেন, সঞ্জয় চাইতো আমাকে যত বেশি নির্যাতন ও লাঞ্ছিত করা হবে আমার বাবা-মা এর দিক থেকে তার ততই প্রাপ্তিযোগ বৃদ্ধি পাবে। তাছাড়া সে চাইতো বেশি বেশি নির্যাতন করলে আমাকে বাবার বাড়ী পাঠাতে বেগ পেতে হবে না। আমাকে অকারণে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে শুরু হয় শারীরিক নির্যাতন যা মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও হার মানায়। হাত-পা তো সমানে চলতোই। সেন্ডেল, বেল্ট, ঝাঁটা, হাতা, খুন্তি, বেলনা থেকে শুরু করে হাতের কাছে যখন যা পেতো তাই দিয়েই আমাকে নির্দয়ভাবে নির্মম শারীরিক নির্যাতন করা হতো। মারতে মারতে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজও করা হতো।

জয়ার বাবা রতন কুমার সাহা বলেন, সঞ্জয় আমার মেয়েকে বিয়ের পর থেকে অমানবিক নির্যাতন করেছে। এক বছর আগে মেয়েকে আমার বাড়ি রেখে গেছে। এরপর আর যোগাযোগ করেনি। আমি একজন বাবা হিসেবে এই অন্যায়ের বিচার চাই।

অভিযুক্ত সহযোগী অধ্যাপক সঞ্জয় কুমার সরকার বলেন, ‘এটা আমাদের পারিবারিক বিষয়। আমার স্ত্রী সন্তানের জন্য আমার দরজা সবসময় খোলা। আমি তার সঙ্গে সংসার করতে চাই। পারিবারিক বিষয়ে এর বেশি মন্তব্য করতে চাচ্ছি না।’

এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, ‘আদালত যদি তাকে দোষী সাব্যস্ত করে তাহলে আমরা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিব।’

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে ভিসির কাছে ড. সঞ্জয় কুমার সরকারের বিরুদ্ধে ছাত্রীদের গভীর রাতে মেসেজ দেয়া ও উত্যক্ত করার অভিযোগ করেন এক ছাত্রী। এ ঘটনায় তৎকালীন ভিসি ড. সঞ্জয় কুমারকে তিরস্কার ও সতর্ক করেন। অভিযোগের পেছনে হাত থাকার সন্দেহে বিভাগে এক শিক্ষার্থীকে রুমে ডেকে হুমকি দেন ড. সঞ্জয়। এছাড়া সন্দেহভাজন ওই শিক্ষার্থীকে দু’টি কোর্সে ফেল করিয়ে দেয়ার অভিযোগও উঠে তার বিরুদ্ধে। সঞ্জয়ের নির্যাতন ও মানসিক চাপের কারণে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন ওই ছাত্রী। পরে এ ঘটনায় তদন্ত শেষে সঞ্জয়কে ওই ছাত্রীর সকল কোর্স থেকে সাসপেন্ড করা হয়।

যাযাদি/ এস