রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠা ও কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি: বাস্তবতা ও করণীয়’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার সকাল ১০টায় শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবনে রাবি যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন নিরোধ বিষয়ক অভিযোগ কমিটি এ সেমিনারের আয়োজন করে।

রাবি যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন নিরোধ কমিটির সভাপতি অধ্যাপক তানজিমা জোহরা হাবিবের সভাপতিত্বে সেমিনারে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সাদেকা হালিম, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মো. সুলতান-উল-ইসলাম, রাজশাহীর সাইবার ট্রাইব্যুনালের জজ জিয়াউর রহমান, এ্যাডভোকেট ইসমত আরা, রাবি যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন নিরোধ কমিটির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক মাহবুবা কানিজ কেয়া, জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক অধ্যাপক প্রণব কুমার পান্ডে, আইন বিভাগের অধ্যাপক মো. আবদুল আলিম, মনোবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সাদেকা বানু।

সেমিনার সঞ্চালনা করেন, রাবি যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন নিরোধ কমিটির সদস্য সচিব সহযোগী অধ্যাপক রনক জাহান সেমিনারটি সঞ্চালনা করেন।

সেমিনারে অধ্যাপক মো. সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, একজন মানুষ যখন তার শুভ চিন্তাগুলো হারিয়ে ফেলে তখন তার মানসিক রোগ হয়, মানসিক অসুস্থতা দেখা দেয়। সে তার যৌক্তিক কারণে নানাবিধ হীন অপরাধ করে। তবে এটা ঘটে যেতে থাকলে সমাজে তা ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়। আমরা দেখি সমাজে যদি কোনো অপরাধমূলক ঘটনা ঘটে তাহলে তা আইনের আওতায় আনা হয়।

কিন্তু তাকে সচেতন করার জন্য যে কার্যক্রম প্রয়োজন তা নেওয়া হয় না। আমরা চাই প্রকৃত অপরাধীরা শাস্তির আওতায় আসুক, তবে তাকে সচেতন করার পর। তারপরেও যদি তারা অপরাধ করতে থাকে, তবে তাকে চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনা উচিৎ। এমনকি সে হতে পারে পুরুষ, নারী, শিক্ষক, শিক্ষার্থী অথবা কর্মচারীসহ যে কেউ।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সাদেকা হালিম বলেন, বাংলাদেশে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি হচ্ছে। জাতীয় মহিলা পরিষদের রিপোর্ট অনুযায়ী ২০২২ সালে ৭১৫ জন নারী নির্যাতন ও ২২৬ জন নারী ধর্ষনের শিকার হয়েছে। তারা নির্যাতিত হওয়া সত্তে¡ও সমাজে তাদেরকে হেয় হতে হয়েছে। শুধু মেয়েদের ক্ষেত্রে নয় ছেলেরাও হয়রানির শিকার হয়ে থাকে।

বিভিন্ন তথ্যে উঠে এসেছে যে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রতিনিয়ত বিভিন্নভাবে শিক্ষার্থীরা যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা বলছে তা নিয়ে তারা কোথাও কোনো অভিযোগ করতে পারছে না। শিক্ষক কর্তৃক অনেক শিক্ষার্থী যৌন হয়রানির শিকার হলেও তারা অভিযোগ করতে পারেনা। এই পৃথিবীটা অনেক খারাপ জায়গা বিশেষ করে মেয়েদের জন্য। যতই আপনজন হোক না কেন মেয়েদেরকে যৌন হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। নারীদেরকে একটা প্লাটফর্ম নিশ্চিত করতেই হবে যেখানে নারীরা তাদের কথা বলতে ও তাদের অধিকার নিশ্চিত করতে পারবে।

সেমিনারে অধ্যাপক তানজিমা জোহরা স্বাগত বক্তব্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন নিপীড়ন ও হয়রানি রোধের কার্যক্রম তুলে ধরেন। তিনি জানান, এই বিষয়ে একটি অভিযোগ বাক্স রাখা হয়েছে; যেখানে শিক্ষার্থীরা তাদের নাম-পরিচয় ছাড়াই অভিযোগ জমা দিতে পারে। আমরা নিয়মিত তা খুলে দেখি কোনো অভিযোগ জমা পড়েছে কিনা।

তিনি বলেন, আমরা আবাসিক হলগুলোতে যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন নিরোধে সেমিনার করার পরিকল্পনা করেছি। যদি সেখানে এমন সেমিনার আয়োজন করা যায় তাহলে যৌন হয়রানির মাত্র আরো কমিয়ে আনা সম্ভব হবে বলে আমি মনে করি।

যাযাদি/ এম