বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১

জবি শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা: শিক্ষার্থীদের ৬ দফা দাবি ও আল্টিমেটাম

জবি প্রতিনিধি
  ১৬ মার্চ ২০২৪, ২১:১২
আপডেট  : ১৬ মার্চ ২০২৪, ২১:২৩
জবি শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা: শিক্ষার্থীদের ৬ দফা দাবি ও আল্টিমেটাম

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ফাইরুজ অবন্তিকার আত্মহত্যার ঘটনায় অভিযোগ উঠা সহকারী অধ্যাপক দ্বীন ইসলামকে সাময়িকভাবে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বরখাস্ত এবং সহপাঠী রায়হান সিদ্দিকি আম্মানকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। পাশাপাশি আম্মানকে গ্রেফতারের নির্দেশ এবং ঘটনা তদন্তে ৫ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ ঘটনায় মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

শনিবার (১৬ মার্চ) বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. মো. আইনুল ইসলাম এবং জনসংযোগ, তথ্য ও প্রকাশনা দপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ ফিরোজ আলম স্বাক্ষরিত পৃথক চারটি অফিস আদেশে এসব বিষয় জানানো হয়৷

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০০৫ এর ধারা ১১ (১০) মোতাবেক আইন বিভাগের শিক্ষার্থী রায়হান সিদ্দিকি আম্মানকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে৷ যা ১৬ মার্চ থেকে কার্যকর হবে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০০৫ এর ধারা ১১ (১০) মোতাবেক ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক দ্বীন ইসলামকে সহকারী প্রক্টরের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে এবং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে।

ঘটনা তদন্তে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৫ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। গঠিত কমিটিতে রয়েছেন শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. জাকির হোসেন (আহবায়ক), সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. আবুল হোসেন, আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. এস. এম. মাসুম বিল্লাহ, সংগীত বিভাগের চেয়ারম্যান ড. ঝুমুর আহমেদ এবং ডেপুটি রেজিস্ট্রার (আইন) এডভোকেট রঞ্জন কুমার দাস (সদস্য সচিব)। কমিটিকে অতি দ্রুত সময়েই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

জনসংযোগ, তথ্য ও প্রকাশনা দপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অভিযুক্ত শিক্ষার্থী রায়হান সিদ্দিকি আম্মানকে গ্রেফতারের জন্য ইতিমধ্যেই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে রাতেই এ বিষয়ে তাদের যেই প্রক্রিয়া আছে সেই মোতাবেক ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে৷ তারা তাদের প্রক্রিয়া মোতাবেক সবকিছু করবে।

প্রসঙ্গত, শুক্রবার রাতে সহপাঠী আম্মান সিদ্দিকী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক দ্বীন ইসলামকে নিজের আত্মহত্যার জন্য দায়ী করে ফেসবুকে পোস্ট দেন ফাইরুজ অবন্তিকা। এর কিছুক্ষণ পরেই কুমিল্লায় তার নিজ বাড়িতে গলায় ফাঁস দেন তিনি৷ পরবর্তীতে দ্রুত কুমিল্লা সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এ ঘটনার পর পরই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস উত্তাল হয়ে উঠে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে। অভিযুক্তদের দ্রুত বিচারের দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন তারা৷ পরবর্তীতে রাতেই জবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. হুমায়ুন কবীর চৌধুরী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে উপস্থিত হয়ে প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন শিক্ষার্থীদের।

তবে এই অভিযোগের বিষয়টি অস্বীকার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক দ্বীন ইসলাম বলেন, এর সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। মেয়েটার সাথে দেড় বছর আগে আমাদের কথা হয়েছে। আমি চাই এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হোক।

এই ঘটনায় অভিযোগ উঠা আইন বিভাগের শিক্ষার্থী আম্মান সিদ্দিকী বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে উনার সাথে কোন প্রকার যোগাযোগ করিনি৷ এমনকি ফেসবুক, মেসেঞ্জার বা কোন জায়গাতেই কানেক্টেড না আমি। আমাকে দোষী প্রমাণের জন্য এভিডেন্স লাগবে। এভিডেন্স ছাড়া এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন।

আত্মহত্যা করা জবি শিক্ষার্থী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকার মা তাহমিনা শবনম বলেন, মাত্র এক বছর আগেই স্বামীকে হারিয়েছি এবার ছেড়ে চলে গেল পরম আদরের মেয়ে। আমার মেয়েকে অভিযুক্ত শিক্ষক ও তার সহপাঠীরা মানসিকভাবে নির্যাতন করেছে। এ বিষয়ে বারবার অভিযোগ দিয়েও কোন প্রতিকার পাইনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে। আমি এই ঘটনার বিচার দাবি করছি।

অন্যদিকে এ ঘটনার দ্রুত তদন্ত ও সুষ্ঠু বিচার এবং শিক্ষক দ্বীন ইসলাম ও আম্মান সিদ্দিকী এর দ্রুত গ্রেফতার চেয়ে শনিবার বিকেল ৩ টায় মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

এ মানববন্ধন ও বিক্ষোভে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে ৬ দফা দাবি পেশ করা হয়। দাবিগুলো হলো- ১. হত্যার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত নিশ্চিত করতে হবে। ২. অভিযুক্ত শিক্ষক দ্বীন ইসলাম ও শিক্ষার্থী আম্মান সিদ্দিকীকে অবিলম্বে গ্রেফতার ও সুষ্ঠু বিচারের আওতায় আনতে হবে। ৩. দ্রুত সিন্ডিকেট ডেকে অভিযুক্তদের স্থায়ী বহিষ্কার করতে হবে। ৪. ভিক্টিম ব্লেমিং এবং ভিক্টিমের পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। ৫. বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বাদী হয়ে মামলা দায়ের করতে হবে। ৬. নারী নিপিড়ন সেল কার্যকর করতে হবে। দাবি আদায়ে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটাম দেওয়া হয়। দাবি পূরণ না হলে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে জানান শিক্ষার্থীরা।

যাযাদি/ এম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে