সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা সহ সকল কোটা পুনর্বহালের দাবি জানিয়েছে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা। বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ৩টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির অফিসে এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানান মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের সংগঠন 'মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড'।
সংবাদ সম্মেলনে আগামী ১লা মার্চ শুক্রবার বিকাল ৩টায় শাহবাগ প্রজন্ম চত্বরে মুক্তিযোদ্ধা কোটা সহ সকল কোটা পুনর্বহালের দাবিতে সমাবেশের ঘোষণা দেয়া হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন। আরোও উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড এর কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মাহবুবুল ইসলাম প্রিন্স, সহ-সভাপতি ফিরোজ আহমেদ সুজন, কানিজ ফাতেমা, শাহীন মাতুব্বর, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সুপ্রিয় চন্দ্র দাশ, ঢাকা কলেজ শাখার সাধারণ সম্পাদক আল ইমাম, দপ্তর সমন্বয়ক নুর আলম সরদার প্রমুখ ।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন বলেন, "১ম এবং ২য় শ্রেণীর সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা সহ সকল কোটা পুনর্বহালের দাবি জানাচ্ছে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড। মহান মুক্তিযুদ্ধে ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্ত ও দুই লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা লাভের পর ১৯৭২ সালে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নিজ হাতে গড়া প্রতিষ্ঠান 'বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ'র অঙ্গ সংগঠন 'মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড' দীর্ঘদিন যাবত মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের পাশাপাশি বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারদের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। এর ধারাবাহিকতায় আগামী ১লা মার্চ শুক্রবার বিকাল ৩টায় শাহবাগ প্রজন্ম চত্বরে বাতিল হওয়া ১ম ও ২য় শ্রেণীর সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটাসহ সকল কোটা পুনর্বহালের দাবিতে সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড, কেন্দ্রীয় কমিটি।সংবিধান অনুযায়ী বৈষম্যহীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা, নারী কোটা, প্রতিবন্ধী কোটা, জেলা কোটা ও আদিবাসী কোটা পুনর্বহালের দাবিতে এই সমাবেশের ডাক দেয়া হয়েছে।
সামাজিক সমতা নিশ্চিত করার জন্য অবশ্যই সাংবিধানিক অধিকার কোটা ব্যবস্থা পুনর্বহাল করতে হবে। চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা কখনোই বৈষম্য তৈরী করে না। কোটা ব্যবস্থা সবসময় বৈষম্য দূর করে সমতা নিশ্চিত করে। রাষ্ট্রে সকল শ্রেণি পেশার মানুষের সমান সুযোগ সৃষ্টি করে।
সংবিধানের ২৯ (৩) ক অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সমাজের যেকোন পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে সমাজের মূলধারায় ফিরিয়ে আনার জন্য রাষ্ট্র বিশেষ বিধান প্রবর্তন করতে পারবে। নারী, আদিবাসী, প্রতিবন্ধী, পিছিয়ে থাকা জেলাসমূহের শিক্ষার্থীদের জন্য জেলা কোটা পুনর্বহাল করার মাধ্যমে বৈষম্য দূর করে সকলের সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের হাজার হাজার সন্তানরা এখনো বেকার জীবন যাপন করছেন। অনেক বীর মুক্তিযোদ্ধারা এখনো অনেক কষ্টে দিনাতিপাত করছেন"।
তিনি আরো বলেন,"বীর মুক্তিযোদ্ধাদেরকে সম্মান দেয়ার পাশাপাশি ক্ষতি কাটিয়ে উঠার জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মুক্তিযোদ্ধা কোটা চালু করেছিলেন।বঙ্গবন্ধু সরকার ১৯৭২ সালে ৫ সেপ্টেম্বর এক আদেশের মাধ্যমে ৩০% মুক্তিযোদ্ধা কোটা, ১০% ক্ষতিগ্রস্থ নারী কোটা ও ৪০% জেলা কোটা রাখা হয়। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর নেমে আসে কালো অন্ধকার। ১৯৭৫-৯৬ সাল দীর্ঘ একুশ (২১) বছর মুক্তিযোদ্ধা কোটার কোন বাস্তবায়ন হয়নি।
১৯৯৬ সালে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি ক্ষমতায় আসার পর মুক্তিযোদ্ধা পরিবার স্বপ্ন দেখলো ভালো ভাবে বেঁচে থাকার। তিনি ১৯৯৭ সালের ১৭ মার্চ মুক্তিযোদ্ধা কোটা সন্তান পর্যন্ত বর্ধিত করলেন।
অনেক বীর মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের সন্তানদেরকে আর্থিক সংকটে লেখা পড়া করাতে পারেননি। তাদেরকে সামনে এগিয়ে আনার জন্য বিশ্বের অন্যান্য রাষ্ট্রের ন্যায় বঙ্গবন্ধু কোটা সুবিধা উপহার দিয়েছিলেন কিন্তু তা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হয়নি।
২০১৮ সালে ১ম ও ২য় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিল করে ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণিতে কোটা রাখার মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধা, আদিবাসী, প্রতিবন্ধী ও নারীদেরকে চরমভাবে অপমান করা হয়েছে। এই কালো সিদ্ধান্ত অবিলম্বে বাতিল করে সকল কোটা পুনর্বহাল করতে হবে"।
যাযাদি/ এম