ভেটেরিনারি শিক্ষা ও গবেষণার উন্নয়নের লক্ষ্যে ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) শুরু হচ্ছে দুই দিনব্যাপী ৩০তম বার্ষিক বৈজ্ঞানিক সম্মেলন। ‘স্মার্ট ভেটেরিনারি এডুকেশন অ্যান্ড ওয়ান হেলথ্’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বৈজ্ঞানিক সম্মেলনটি আয়োজন করছে বাংলাদেশ সোসাইটি ফর ভেটেরিনারি এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ (বিএসভিইআর) সোসাইটি।
বৈজ্ঞানিক সম্মেলনে শিক্ষাবিদ, গবেষক, মাঠপর্যায়ের ভেটেরিনারিয়ান ও উদ্যোক্তা, নীতিনির্ধারকসহ মোট ৪০০ জন অংশগ্রহণ করবেন। সম্মেলনে একটি বার্ষিক বক্তৃতা, একটি মূল প্রবন্ধ এবং দুইটি পূর্ণাঙ্গ বক্তৃতা সহ মোট ৬৮টি মৌখিক উপস্থাপনা এবং ৭৮ টি পোস্টার পেপার উপস্থাপন করা হবে। এছাড়া সম্মেলনে একটি সিম্পোজিয়াম সেশন, একটি প্লেনারি সেশন এবং আটটি ওপেন পেপার সেশন থাকবে। সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি এন্ড এ্যানিম্যাল সাইন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এবং ওয়ান হেলথ্রে জাতীয় সমন্বয়কারী অধ্যাপক ড. নিতিশ চন্দ্র দেবনাথ।
শুক্রবার (২৩ ফেব্রæয়ারি) ভেটেরিনারি অনুষদের মেডিসিন বিভাগের সম্মেলন কক্ষে সকাল ১০ টায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে এসব কথা বলেন বিএসভিইআরের সাধারণ সম্পাদক এবং বাকৃবির মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আরিফুল ইসলাম। অধ্যাপক ড. আরিফুল ইসলাম বলেন, ওয়ান হেলথ হলো মানুষ ও প্রাণীর স্বাস্থ্য এবং পরিবেশের সমন্বয়ে গঠিত উন্নত জনস্বাস্থ্যমূলক ব্যবস্থা, যা স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এবারের বৈজ্ঞানিক সম্মেলনে বিভিন্ন জুনোটিক রোগ (যা মানুষ থেকে প্রাণি ও প্রাণি থেকে মানুষে সংক্রমিত হয়) যেমন- বোভাইন য²া, অ্যানথ্রাক্স, ব্রæসেলোসিস, এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা, কোভিড-১৯, ডেঙ্গু, নিপাহ এবং আরও অসংখ্য চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ভেটেরিনারিয়ানদের করণীয় নিয়ে বিশদ আলোচনা করা হবে। এর ফলে একজন ভেটেরিনারিয়ান সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জন করতে পারবে। পাশাপাশি সম্মেলন থেকে গবাদিপশুর স্বাস্থ্য ও উৎপাদনশীলতা উন্নয়নে গবেষণা, শিক্ষা ও সম্প্রসারণ কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা হবে এবং স্মার্ট ভেটেরিনারি শিক্ষা ও ওয়ান হেল্থ উন্নতির জন্য কিছু পরামর্শ ও সুপারিশ করা হবে।
তিনি আরও বলেন, সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এবং বাংলাদেশ অ্যাক্রিডেটশন কাউন্সিলের সদস্য অধ্যাপক ড. মো. গোলাম শাহী আলম। তিনি এবারের সম্মেলনে বার্ষিক লেকচার অ্যাওয়ার্ডের জন্য নির্বাচিত হয়েছেন। এছাড়া উপস্থিত থাকবেন ভেটেরিনারি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল আউয়াল, প্রাণিসম্পদ সেবা বিভাগের মহাপরিচালক ড. মো. এমদাদুল হক তালুকদার, কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ড. নাথু রাম সরকার, রেনেটা লিমিটেডের এনিম্যাল হেলথ বিষয়ক পরিচালক মো. সিরাজুল হক ও ইন্টার এগ্রোভেট বিডি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. এ কে এম খসরুজ্জামান। অনুষ্ঠানের প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বাকৃবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমদাদুল হক চৌধুরী।
বৈজ্ঞানিক সম্মেলনের আয়োজক কমিটির সভাপতি ও বাকৃবি প্যাথলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. আবু হাদি নূর আলী খান বলেন, বর্তমানে রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণুর মধ্যে প্রায় ৬১ শতাংশ জীবাণু মানুষ এবং প্রাণী উভয়কেই সংক্রমণ করে। এর মধ্যে অনেক জীবাণু অ্যান্টিবায়োটিক এবং অন্যান্য রাসায়নিক প্রতিষেধক প্রতিরোধী। ফলস্বরূপ মানুষ ও প্রাণীর শরীরের জীবাণুগুলো পানি, মাটি ও পরিবেশের অন্যান্য উপাদানের মাধ্যমে আবার মানুষ ও প্রাণীতেই ফিরে আসছে। ঠিক এই কারণেই ওয়ান হেলথের বিষয়টি অনেক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। মানুষের চিকিৎসক, প্রাণী চিকিৎসক ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞ একই সারিতে এনে জুনোটিক রোগ সেগুলোর সঠিক ব্যবস্থাপনা ও নিয়ন্ত্রণ নিয়েই কাজ করে ওয়ান হেলথ।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বাকৃবির ভেটেরিনারি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল আউয়াল, বিএসভিইআরের সভাপতি অধ্যাপক ড. ফরিদা ইয়াসমীন বারি, আয়োজক কমিটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলম মিয়া এবং ভেটেরিনারি অনুষদের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকবৃন্দ এসময় উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, ভেটেরিনারি শিক্ষা ও গবেষণার উন্নয়নের লক্ষ্যে ১৯৯৪ সালে বিএসভিইআর প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রতি বছর বৈজ্ঞানিক সম্মেলনের আয়োজন করে তারা।
যাযাদি/ এসএম