যখন অধিকারের কথা আসে তখন নারী ও পুরুষের অধিকারের কথা আসে। কিন্তু হিজড়া সম্প্রদায়ের অধিকারের কথা আসে না। এইভাবেই অবহেলিত তৃতীয় লিঙ্গের মানুষেরা। হিজড়া শব্দটি শুনলেই আমাদের মাথায় এইটাই আসে রাস্তা ঘাটে, বাসে কিংবা ট্রেনে চাঁদাবাজি করা লোকজন। এইটাই এদের পেশা। কিন্তু কেনো এই সম্প্রদায়ের লোকজন এই কাজ পেশা হিসেবে বেচে নেয়। তা নিয়ে কেউ আর ভেবে দেখে না। রাষ্ট্রের কাছে, সামাজের কাছে তাদের সম্মানজনক ভাবে বেঁচে থাকার অধিকার আছে।শিক্ষা গ্রহণ করা, চাকুরী করা ইত্যাদি তাদের অধিকার। সে অধিকার কি তারা পাচ্ছে?
মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণাপত্র, ১৯৪৮ এর ধারা এক এ বলা আছে, সমস্ত মানুষ স্বাধীনভাবে সমান মর্যাদা এবং অধিকার নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। তাঁদের বিবেক এবং বুদ্ধি আছে; সুতরাং সকলেরই একে অপরের প্রতি ভ্রাতৃত্বসুলভ মনোভাব নিয়ে আচরণ করা উচিৎ।এছাড়া ধারা ২ এ কারো প্রতি কোনো বৈষম্য নয় ও ধারা ৬ এ মানুষের পৃথিবীতে সর্বত্র সমান অধিকারের কথা বলা হয়েছে।
বাংলাদেশ সংবিধানের তৃতীয় অধ্যায় ২৬ থেকে ৪৭ অনুচ্ছেদে মৌলিক অধিকার সম্পর্কে বলা হয়েছে। সেখানে সরকারি চাকুরি লাভের সমান সুযোগ, আইনের চোখে সবাই সমান,স্বাধীনতাভাবে চলাফেরা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা ইত্যাদি উল্লেখ্যযোগ্য।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রংপুর তিন আসনে জি এম কাদের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা তৃতীয় লিঙ্গের আনোয়ারা ইসলাম রানী বলেন,আমরা প্রথমেই সমাজের কাছে বৈষম্যের শিকার হই। মানুষের কটু কথা শুনতে শুনতেই আমাদের বড় হতে হয়। আমাদের পরিবারকেও কটু কথা শুনতে হয়। মানুষ আমাদের নিয়ে হাসি ঠাট্টা করে। আমরা বিয়ের অনুষ্ঠান বা কোনো আয়োজনেই থাকতে পারি না।তখন আমরা বাধ্য হয়ে আমাদের যে আলাদা জগৎ আছে গুরুর কাছে চলে যাই। শিক্ষা গ্রহণের যে সুযোগ সেই সুযোগ থেকেও আমরা বঞ্চিত হই। যার ফলে আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকায় অনেকেই বিচ্ছিন্ন আচরণ করতে পারে। সেটার জন্য সে একাই দায়ই নয়। এইটার জন্য সমাজই দায়ই।সমাজ যদি ছোট থেকে মেনে নিত। একটা পরিবারে এমন সন্তান জন্ম দিতেই পারে। সেটা সমাজ স্বাভাবিক ভাবে মেনে নিতে পারলে আমরাও আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ও অধিকার নিশ্চিত করতে পারতাম।
আমরা পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী নয়। আমরা পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠী। আমাদের পিছিয়ে রাখা হয়েছে বলে জানান তৃতীয় লিঙ্গের রানী।
এই ব্যাপারে সুজন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) রংপুর মহানগরের সভাপতি ফখরুল আনাম বেনজু বলেন,সংবিধান অনুযায়ী, একজন নাগরিক ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সমান অধিকার নিয়ে বসবাস করবে।
কিন্তু আমাদের সামাজিক ব্যবস্থার কারণে হিজড়া সম্প্রদায়ের প্রতি একটা উদাসীনতা কাজ করে। এরপরেও বর্তমানে হিজড়ারা এগিয়ে যাচ্ছে তারা অনেক ভালো করছে। অনেকেই পড়াশোনা করছে। মূলধারার রাজনীতিতেও আসতেছে। তবে এই সম্প্রদায়ের মানুষদের দক্ষতা সম্পন্ন ও যোগোপযোগী নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার জন্য সরকার কে আরো এগিয়ে আসা উচিৎ।
যাযাদি/এসএস