ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক নাদির জুনাইদের বিরুদ্ধে উঠা যৌন হয়রানির অভিযোগের ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করে বিচার প্রক্রিয়া শুরু করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ১০ দিনের আল্টিমেটাম দিয়ে ক্লাসে ফিরেছেন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। ১০ দিনের মধ্যে তদন্ত কমিটি গঠন করে বিচার প্রক্রিয়া শুরু না হলে আবারও ক্লাস বর্জন করে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা।
রবিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ ভবন প্রাঙ্গণে প্রেস ব্রিফিং করে আল্টিমেটাম দেন শিক্ষার্থীরা। এরপর শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ফিরে যান। প্রেস ব্রিফিংয়ে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বিভাগের ১৩ ব্যাচের শিক্ষার্থী রাফিজ খান।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘আমরা বিশ্ববিদ্যালয়কে স্পষ্টভাষায় জানিয়ে দিতে চাই যে ,আগামী ১০ দিনের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যদি নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করে বিচারিক প্রক্রিয়া এগিয়ে না নেয়, অথবা এতে কোনোরূপ অবহেলা, পক্ষপাতিত্ব অথবা স্বচ্ছতার ঘাটতি পরিলক্ষিত হয়, অথবা কোনো মহল বিচার প্রক্রিয়াকে কোনোভাবে প্রভাবিত করছে বলে প্রতীয়মান হয়, তাহলে পুনরায় ক্লাস বর্জন করে আন্দোলনে ফিরতে বাধ্য হবে।
’নম্বর কম দেওয়া' নিয়ে স্নাতকোত্তরের একটি ব্যাচের বেশ কিছু শিক্ষার্থীর অভিযোগ করেছে অধ্যাপক নাদির জুনাইদের বিরুদ্ধে।এরই মধ্যে গত ১০ ফেব্রুয়ারি অধ্যাপক নাদির জুনাইদের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ এনে প্রক্টরের কাছে লিখিত দেন বিভাগের এক ছাত্রী। সঙ্গে কিছু অডিও রেকর্ড ও মেসেজের স্ক্রিনশটও জমা দেন তিনি। যদিও অধ্যাপক নাদির জুনাইদ এসব অভিযোগ অস্বীকার করে এর পেছনে অন্য কিছু দেখছেন। বিভাগের পরবর্তী চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পাওয়ার আগে ব্যক্তিগত আক্রমণের শিকার হচ্ছেন বলে দাবি করেন তিনি
অধ্যাপক নাদির জুনাইদের বিরুদ্ধে উঠা যৌন হয়রানির অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত করে বিচারের দাবিতে ১১ ফেব্রুয়ারি থেকে ক্লাস বর্জন করে বিক্ষোভ নামেন বিভাগের সব ব্যাচের শিক্ষার্থীরা। শিক্ষক নাদির জুনাইদের অফিস কক্ষে তালা দেওয়ার পাশাপাশি শ্রেণিকক্ষের তালায় সিলগালা করে দেন শিক্ষার্থীরা।
এমনকি কক্ষের দরজায় ‘যৌন নিপীড়ক অধ্যাপক নাদির জুনাইদকে ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত’ সংবলিত পোস্টারও ঝুলিয়ে দেন তারা। এ ছাড়া আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপিও দেন।
পরে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে অধ্যাপক নাদির জুনাইদকে তিন মাসের ছুটি দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
ছুটির চিঠিতে বলা হয়, অভিযোগের যথাযথ অনুসন্ধান ও তদন্ত করার জন্য বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরবর্তী সিন্ডিকেট সভায় উপস্থাপন করা হবে এবং সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পরে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনের জন্য তাদের একাডেমিক কার্যক্রমে কোন প্রভাব পড়বে না এমন লিখিত নিরাপত্তার আশ্বাস চান বিভাগের চেয়ারম্যানের কাছে।
গত ১৫ ফেব্রুয়ারি বিকালে বিভাগের একাডেমিক কমিটির বৈঠক শেষে শিক্ষার্থীদের একাডেমিক নিরাপত্তা দেওয়া হবে এমন লিখিত আশ্বাস দেন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবুল মনসুর আহাম্মদ। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীরা রবিবার থেকে রুটিন অনুযায়ী ক্লাসে ফেরার ঘোষণা দেন।
যাযাদি/ এম