শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৯ কার্তিক ১৪৩১

বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি মুছে ফেলার প্রতিবাদে জাবি ছাত্রলীগ নেতার অনশন

জাবি প্রতিনিধি
  ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৮:০১
বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি মুছে ফেলার প্রতিবাদে জাবি ছাত্রলীগ নেতার অনশন

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি মুছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যঙ্গচিত্র অঙ্কনের ঘটনায় জড়িতদের শাস্তিসহ তিন দফা দাবিতে আমরণ অনশনে বসেছেন শাখা ছাত্রলীগের এক নেতা।

বৃহস্পতিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুর একটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে অবস্থান নিয়ে তিনি এ অনশন কর্মসূচি শুরু করেন। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত (শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা) একই দাবিতে অনড় থেকে তিনি অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন।

অনশনরত ঐ ছাত্রলীগ নেতা এনামুল হক এনাম। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ এন্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগের ৪৩ ব্যাচের (২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষ) শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি।

এনামের দাবিগুলো হলো- বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অবমাননাকারীদের অবিলম্বে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা, বিশ্ববিদ্যালয় ও জাতীয় আইনে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা, আট দিন পার হলেও জড়িতদের ব্যবস্থা গ্রহণে সংশ্লিষ্টদের উদাসীনতা বিষয়ে তদন্ত করা।

অনশনের বিষয়ে এনামুল হক এনাম বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু সকলের নেতা। একটি গোষ্ঠী সবসময়ই বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলার ঘৃণ্য চেষ্টায় লিপ্ত। ছবি মুছে ফেলার পর আটদিন হলেও জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন। অনেক চাপাচাপির পর তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। ব্যঙ্গচিত্র আঁকার পর একটি সংগঠন অহংকারবোধ থেকে বিবৃতি দিয়েছে, আবার তাদের অফিসিয়াল পেইজ থেকে প্রচারও করেছে। তাহলে তদন্ত কমিটি কিসের জন্য! অপরাধীদের ছাড় দেওয়ার জন্য নাটক করা হচ্ছে।’

ছাত্রলীগের দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু ১৮ কোটি বাঙালির মুক্তি সংগ্রামের অবিসংবাদিত নেতা। একটি রাজনৈতিক দল তার প্রতিকৃতি মুছে দেওয়া মতো সাহস দেখালো, ছাত্রলীগ কি এতটাই দূর্বল নাকি? এই ঘটনায় যারা জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে শীর্ষ নেতাদের বারবার আল্টিমেটাম দিলেও, তারা কার্যত কোন ব্যবস্থা নেয়নি।’

বিচার না হওয়া পর্যন্ত তিনি অনশন চালিয়ে যাবেন উল্লেখ করে বলেন, প্রশাসনের পক্ষে বিশ^বিদ্যালয়ের প্রক্টর এসেছিলেন। আমাকে অনেকভাবে বুঝিয়েছেন, কিন্তু আমি স্পষ্ট বলে দিয়েছি ঘটনায় জড়িতদের বহিষ্কার না করা পর্যন্ত আমি উঠবো না। ঘৃণ্য এই অপকর্মের বিচারের আগে জীবন গেলেও অনশন ভাঙবো না।

এদিকে ছাত্রলীগ নেতার দাবির সাথে সংহতি জানিয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে অনশনে বসেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ৪৪ ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং শাখা ছাত্রলীগের উপ-শিক্ষা ও পাঠচক্র বিষয়ক সম্পাদক মো: রিয়াজুল ইসলাম।

তিনি বলেন, ক্যাম্পাসে ধর্ষণ বিরোধী ছবি আঁকার জন্য অনেক জায়গা আছে, কিন্তু এটাকে কেন টার্গেট করা হলো? নতুন ব্যঙ্গচিত্র দেখলেই বোঝা যাবে, এটা যৌক্তিক কোন চিত্র নয়। যারাই এটা করেছে, তারা জামাত-শিবিরের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করেছে।

শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল বলেন, ‘সে (এনাম) যেসব দাবি জানিয়েছে, আমরাও প্রশাসনের কাছে একই দাবি জানিয়েছি। অভিযুক্তদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার ও রাষ্ট্রীয় আইনে বিচার দাবি করেছি। প্রশাসন ব্যবস্থা নিবেন বলে আমাদের আশ^স্ত করেছেন। প্রশাসনের ব্যবস্থা দেখে আমরা পরবর্তী কর্মসূচিতে যাবো।’

এর আগে, গত ৭ ফেব্রুয়ারি রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ও মানবিকী অনুষদ ভবনের দেয়ালে পূর্বে আঁকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি মুছে শেখ হাসিনার গ্রাফিতি অঙ্কন করে ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের একাংশের নেতাকর্মীরা। স¤প্রতি ঘটে যাওয়া ধর্ষণকাণ্ডের প্রতিবাদে এ গ্রাফিতি অঙ্কন করে ছাত্র ইউনিয়নের নেতাকর্মীরা।

গ্রাফিতি অঙ্কনের বিষয়টি স্বীকার করে ছাত্র ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান ধর্ষণ বিরোধী আন্দোলনকে সমর্থন জোগাতে এবং নিপীড়কদের হুঁশিয়ারি দিতে নতুন গ্রাফিতি আঁকা হয়েছে। প্রায় তিন বছর পার হওয়ায় শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি অস্পষ্ট হয়ে গিয়েছিলো। তাই চলমান ধর্ষণ বিরোধী আন্দোলনের প্রাসঙ্গিকতার ভিত্তিতে সেখানে অন্য গ্রাফিতি আকাঁ হয়েছে।’

এ ঘটনায় গত ১৩ ফেব্রুয়ারি রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তজার্তিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক মো. আব্দুল্লাহ হেল কাফীকে আহ্বায়ক করে চার সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কমিটিতে অন্য সদস্যরা হলেন- বাংলা বিভাগের অধ্যাপক খন্দকার শামীম আহমেদ ও চারুকলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এম এম ময়েজউদ্দীন এবং সদস্য-সচিব ডেপুটি রেজিস্ট্রার (প্রশাসন-২) এ বি এম আজিজুর রহমান। কমিটিকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন দাখিলের জন্য বলা হয়েছে।

যাযাদি/ এসএম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে