শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৯ কার্তিক ১৪৩১

দেশে অবৈধভাবে কর্মরত বিদেশী নাগরিকদের খেঁদিয়ে তরুণদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি আহ্বান বিশিষ্ট নাগরিকদের

ঢাবি প্রতিনিধি
  ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৯:৪৬
দেশে অবৈধভাবে কর্মরত বিদেশী নাগরিকদের খেঁদিয়ে তরুণদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি আহ্বান বিশিষ্ট নাগরিকদের

বাংলাদেশে অবৈধভাবে কর্মরত বিদেশী নাগরিকদের খেঁদিয়ে দেশের তরুণদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য আহ্বান জানিয়েছেন বিশিষ্ট নাগরিকরা। তবে ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে কাজ করলে আপত্তি নেই তাদের।

বুধবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন হলে 'বাংলাদেশে অবৈধভাবে কর্মরত বিদেশী নাগরিকদের খেঁদিয়ে বাংলাদেশী নাগরিকদের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে আন্দোলন উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলন এবং আলোচনা সভা'য় বক্তারা এসব কথা বলেন।

সাবেক সেনা কর্মকর্তা ও সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সারোয়ার হোসেন এর সঞ্চালনায় এবং সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী এডভোকেট মুহাম্মদ মহসিন রশিদ এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির সভাপতি ক্বারী আবু তাহের, কর্ণেল মোহাম্মদ হক, কর্ণেল মোঃ দিদারুল আলম,মেজর ইমরান কর্ণেল হেলাল উদ্দিন , মাওলানা মোশাররফ হোসেন ,নুরুল হুদা চৌধুরী মিরু প্রমুখ।

সাবেক রাষ্ট্রদূত এবং নৈতিক সমাজের আহ্বায়ক আমসা আমিন বলেন,"আমি মোটেই ভারত বিদ্বেষী নই। আমি ভারতের বন্ধু হতে চাই। কিন্তু ভারত তো আমার সাথে বন্ধুত্ব চায় না।নেপালে ভারত টিকতে পারে নি। মালদ্বীপে টিকতে পারে নি। শুধু মাত্র বাংলাদেশে সফল।

তিনি আরো বলেন,"এক সময় ভারতে ব্রিটিশ খেঁদাও আন্দোলন হয়েছে। মহাত্মা গান্ধী , মোঃ আলী এবং শওকত আলী সেই আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।ভয় আমাদের চেপে বসেছে। এতো ভয় পেলে চলবে না।

স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব আজ হুমকির মুখে। আমাদের কোন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী নাই। আমরা জনগণকে জাগিয়ে তুলতে পারছি না।কারণ জনগণ কোন রাজনীতিবিদ কে বিশ্বাস করে না।৫৩ বছর ধরে আমরা বিশ্বাসঘাতকতা করে যাচ্ছি আমরা।শত শত দলের নেতা নয়।সৎ এবং নীতিবান নেতৃত্ব লাগবে। তাহলে জাতি দ্রুত জাগবে। ভারতের আধিপত্য বাংলাদেশ মানবে না"।

জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি সিনিয়র সাংবাদিক শওকত মাহমুদ বলেন, "আমি এই আন্দোলনের প্রতি সংহতি প্রকাশ করছি। আমাদের জাতীয় জীবনের পরতে পরতে রয়েছে ভারত বশ্যতা।

১৯৯১ সালে আমি ফিল্ম সেন্সর বোর্ডের সদস্য ছিলাম। একমাত্র বেসরকারী সদস্য। সেই সময় একটি সিনেমা সেন্সর বোর্ডে গেল। সিনেমার নাম মনে নেই এখন। সিনেমার প্রথম দৃশ্য এই রকম --একটি মুরগি ঝুলন্ত বাঁশের উপর দিয়ে ডিম পাড়ে। তাতে লেখা বাংলাদেশ। মুরগির ডিম পাড়া মানে ভারতের পেট থেকে মুরগির ডিমের মতো বাংলাদেশের জন্ম। আমি বললাম, "আমি এই সিনেমার মুক্তির অনুমতি দিবো না। তৎকালীন তথ্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা বললেন যে আমার উপর অনেক চাপ দিয়ে যাচ্ছে। আমি বললাম, আমি অনুমতি দিবো না। আমার বিরুদ্ধে প্রগতিশীল চেতনার লোকজন শান্তি নগরে আন্দোলন করলো।

বেগম খালেদা আমাকে ফোন করলেন।উনি নিজেই দেখলেন। প্রথম দৃশ্য দেখেই উনি শেষ পর্যন্ত ঐ ছবির অনুমতি দিলেন না।সংস্কৃতির মাধ্যমে ভারত এখানে রাজত্ব কায়েম করেছে।

তিনি আরো বলেন,"সাংবাদিকরা অসহায়। আমাদের এখানে যারা ইংরেজি পত্রিকা বের করে, তারা এখানে ইংরেজি অনুবাদের লোক পায় না। ভারতের উপর নির্ভরশীল।

তিনি আরো বলেন,"ভারতীয় মুসলিমরা তাদের উপর নির্যাতনের প্রতিবাদে পদ্মভূষণ,পদ্মাভারত, ভারতরত্ন উপাধি বর্জন করলেও আমাদের যেসব লোক এসব পদবী পেয়েছেন তাঁরা কিন্তু বর্জন করছে না।সত্য বলার নির্দেশ স্বয়ং আল্লাহ তায়ালার নির্দেশ। সত্য কথা বলতে হবেই"।

গণ অধিকার পরিষদের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক কর্ণেল মিয়া মোহাম্মদ মশিউজ্জামান বলেন, "আমি নাচতে নেমেছি । সেখানে ঘোমটা দিলে চলবে না। বাংলাদেশে বিভিন্ন শিল্প কারখানায় কর্মরত অবৈধ বিদেশী নাগরিকদের তালিকা তৈরি করা উচিত। তারপর একটা জরিপ করে মালিকদের সাথে বোঝাপড়া থাকা উচিত। সকল মালিকরা অবৈধ বিদেশীদের কারখানায় রাখবে, তাদেরকে আমরা সামাজিকভাবে বর্জন করব ।প্রয়োজনে জাতীয় 'বেইমান' ঘোষণা দিবো।এসব অবৈধ বিদেশীদের জাতীয় পরিচয় পত্র সহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না থাকলে কাউকে বাসা ভাড়া দিবেন না"।

কর্ণেল ফেরদৌস বলেন ,"কচু পাতা কাটতে কাটতে ছোট ছেলেরা একদিন মানুষ কাটা শুরু করে। পত্রিকার খবর অনুযায়ী অবৈধভাবে কর্মরত বিদেশী নাগরিকদের সংখ্যা ১০ লাখ। কিন্তু বাস্তবে ২০-২৫ লাখ লোক এ দেশে অবৈধভাবে চাকরি করে।

তিনি আরো বলেন,"দেশ আমার ,মাটি আমার, ভারত তুমি কে?আমাকে শাসন করার" ! স্বতন্ত্র প্রার্থী ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক আবদুর রহিম বলেন, "আমি শহীদ পরিবারের সদস্য হিসেবে আমার মনে অনেক ক্ষোভ।ভারতীয় পণ্য বর্জন করতে হবে। আমাদের সার্বভৌমত্বের উপর যখন আঘাত হানে, তখন আবার কিসের ভারত? আমরা ভারতীয় পণ্য বর্জন করার আহ্বান জানাচ্ছি। লড়াই চালিয়ে যেতে হবে"।

ব্যারিস্টার উমর ফারুক বলেন,"কেজরিওয়াল ২ বছরের মধ্যে ভারতের দিল্লির মানুষের মন জয় করেছেন।কারণ তাঁর চাকরি জীবন খুবই স্বচ্ছ ছিল। আজকে আমাদের উপর অত্যাচার হচ্ছে,অন্যায় হচ্ছে এবং অনেক অনিয়ম -দুর্নীতি হচ্ছে। আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বাধ্য করবো। তাহলে আগামী দিন আমাদের জন্য শুভ হবে"।

খেলাফত আন্দোলন এর নেতা আবুল কাসেমী বলেন, " স্বাধীনতা অর্জন সহজ। কিন্তু রক্ষা করা কঠিন।সকল রাজনৈতিক দল গুলো কে এগিয়ে আসতে হবে দেশের স্বাধীনতা- সার্বভৌমত্ব রক্ষার স্বার্থে"।

বাংলাদেশ মুসলিম লীগ সাধারণ সম্পাদক আবুল খায়ের বলেন, "মরহুম জাস্টিস আব্দুর রহমান এবং শেরে বাংলা একে ফজলুল হকের ছেলে ফাইজুল হক কে সাথে নিয়ে আমি ১৯৮০ সালে বিদেশি পণ্য বর্জন আন্দোলন শুরু করেছিলাম। আজকে আবার সেই আন্দোলন নতুন করে গড়ে তুলতে হবে"।

সভাপতির বক্তব্যে এডভোকেট মহসিন রশিদ বলেছেন, "এই আন্দোলন সকল রাজনৈতিক দলের আন্দোলন।এই আন্দোলন কোন দলের বিরুদ্ধে নয়। ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে কাজ করলে সমস্যা নেই। তবে ওয়ার্ক পারমিট ছাড়া কাজ করলে আপত্তি আছে"।

তিনি আরো বলেন, "বাংলাদেশে এখন বেকারত্বের হার ১২% যা এ দেশের ইতিহাসে সর্বাধিক। বাংলাদেশের মানুষ যেখানে চাকরির জন্য বঙ্গোপসাগর থেকে ভূমধ্যসাগরে মৃত্যু বরণ করছে, সেখানে বিদেশী নাগরিকরা অবৈধভাবে চাকরি করে কিভাবে?

যাযাদি/ এম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে