উচ্চ ফলনশীল ও পুষ্টিগুণ সম্পন্ন তিসির জাত উদ্ভাবন করতে দেশ বিদেশ থেকে সংগৃহীত ২০ টি জিনোটাইপ নিয়ে গবেষণা করছেন দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) কৃষি অনুষদের প্রফেসর ড. শ্রীপতি সিকদার।
একসময় বাংলাদেশের গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে এই রবি শস্যটি প্রচুর চাষ হলেও বর্তমানে অনেক কমে গেছে। সাধারনত ফলন তুলনামূলক কম হওয়ায় এবং রবি মৌসুমের অন্যান্য শস্যের প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে থাকার কারণে কৃষকরা তিসি চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে বলে মনে করছেন গবেষকরা।
তিসি তেল ও আঁশ উৎপাদনকারী একটি গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ। তিসিগাছ লম্বায় প্রায় ৮০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হতে পারে। এর বেগুনি নীল ফুল ভোরবেলায় ফোটে এবং বিকেলে ঝরে যায়। এর কাণ্ডের বাকল বা ছাল থেকে আঁশ তৈরি করা হয়। বিদেশে সুন্দর লিনেনজাতীয় বস্ত্র তৈরিতে তিসির আঁশ ব্যবহৃত হয়। ঔষধি গুণসম্পন্ন তিসির বীজ থেকে উৎপন্ন হয় ভেষজ তেল যাতে রয়েছে ক্যান্সার প্রতিরোধী সব গুণাগুণ।এছাড়াও এই তেল বার্নিশ ও চিত্রকলার তৈলচিত্রের উপাদান হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। ছাপাখানার কলিতেও রয়েছে এর ব্যবহার।
প্রফেসর ড. শ্রীপতি সিকদার তার গবেষণা নিয়ে বলেন, আমাদের দেশে ভোজ্য তেলের সংকট দুর করার জন্য তিসির ওপর গবেষণা করছি। তিসি আবহমানকাল থেকেই আমাদের দেশে চাষ হয়ে আসছে। বর্তমানে নানা কারণে এটির চাষ এখন কমে প্রান্তিক হয়ে গেছে। কিন্তু এটি আমাদের দেশের পরিবেশের সাথে উপযোগী একটি শস্য। আমরা বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গা, ভারত ও বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে তিসির প্রায় ২০ টি জিনোটাইপ সংগ্রহ করে সিলেকশন পদ্ধতিতে বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা করে ৩ বছর পর্যবেক্ষণ করে উচ্চ ফলনশীল ও পুষ্টিগুণ সম্পন্ন জাত উদ্ভাবন করার চেষ্টা করছি। এতে করে কৃষক তিসি চাষে আগ্রহী হবে এবং এর ঔষুধি গুণের জন্য ভোজ্য তেলে খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে তিসির উৎপাদন ও উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবনের গবেষণা কার্যক্রম দেখে মুগ্ধ হয়েছেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান কৃষিবিদ ড. শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার ও বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. গোলাম ফারুক।
এসময় কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান কৃষিবিদ ড. শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার বলেন, আমরা আশা করছি হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমরা তিসির একটি উচ্চ ফলনশীল জাত পাবো। বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন অপ্রচলিত ফসল নিয়ে গবেষণার মাধ্যমে এই শস্যগুলো ধরে রাখতে পারবো। এই গবেষণা আমাদের পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিতে সহায়ক হবে।
তিসি গবেষণা মাঠ পর্যবেক্ষণ করে বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. গোলাম ফারুক বলেন, গবেষণা মাঠের তিসি গাছগুলোর অনেক সুন্দর বৃদ্ধি হয়েছে এবং কোনো রোগবালাই নেই। হাবিপ্রবি এধরনের গবেষণার মাধ্যমে এসব শস্যকে ধরে রাখছে। এর দীর্ঘ মেয়াদী পূর্ন গবেষণার মধ্যমে দেশবাসী এর উপকারিতা সম্পর্কে আরও স্পষ্ট ধারণা পাবে এবং এই তৈল জাতীয় শস্যের গ্রহণ যোগ্যতা বাড়বে।
তিসি গবেষণার প্রসংশা করে হাবিপ্রবি উপাচার্য প্রফেসর ড. এম. কামরুজ্জামান বলেন, যেহেতু তিসির মেডিসিনাল ভ্যালু অনেক বেশি এর ওপর গবেষণা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন দ্বার উন্মোচন করেছে। বর্তমানে আমাদের সেন্ট্রাল ল্যাব রয়েছে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি রয়েছে আশা করি এসব ব্যবহার করে তিসি নিয়ে আরো উচ্চতর গবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব রিসার্চ এন্ড ট্রেনিং এর অর্থায়নে ২০২২ সাল থেকে উচ্চ ফলনশীল তিসির জাত নিয়ে গবেষণা করছেন প্রফেসর ড. শ্রীপতি সিকদার ও তার শিক্ষার্থীরা।
যাযাদি/ এস