জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) আবাসিক হলে স্বামীকে আটকে রেখে বহিরাগত এক নারীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগে মূল অভিযুক্ত মোস্তাফিজুর রহমানসহ জড়িতদের বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে দেশের প্রচলিত আইনে মামলা দায়ের, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিস্কার, সনদপত্র স্থগিত এবং তাদেরকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে।
রোববার (৪ ফেব্রুয়ারি) বিকাল তিনটায় উপাচার্য অধ্যাপক ড. নূরুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জরুরি সিন্ডিকেট সভায় প্রক্টরিয়াল বডির প্রাথমিক প্রতিবেদন গ্রহণ করে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়৷
সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক, সিন্ডিকেটের তারিখ ৪ ফেব্রুয়ারি থেকে অভিযুক্ত মোস্তাফিজের সনদ স্থগিত ও ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে। পলায়নের নির্দেশদাতা শাহ পরান ও পলায়নে সহায়তাকারী হাসানুজ্জামানের ছাত্রত্ব শেষ হয়ে যাওয়ায় তাদের সনদ স্থগিত করা হয়েছে। একই সাথে হাসানুজ্জামানকে ক্যাম্পাসে অবাঞ্চিত ঘোষণা করা হয়েছে৷
ভুক্তভোগীর স্বামীকে ৩১৭ নং কক্ষে আটকে রাখার অভিযোগে মো. মুরাদ হোসেনকে সাময়িক বহিষ্কার ও সনদ প্রদান স্থগিত ও ক্যাম্পাসে অবাঞ্চিত ঘোষণা করা হয়৷ এছাড়া হলের তালা ভেঙে অভিযুক্তকে পলায়নে সহায়তা করার অভিযোগে সাব্বির আহমেদ সাগর ও এ এস এম মোস্তফা মনোয়ার সিদ্দিকীকে সাময়িক বহিষ্কার, সনদ স্থগিত ও ক্যাম্পাসে অবাঞ্চিত ঘোষণা করা হয়েছে।
এছাড়াও ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তে সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক ড. অজিত কুমার মজুমদারকে সভাপতি করে চার সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন, লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. ছায়েদুর রহমান, নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আফসানা হক এবং সদস্য সচিব আইন কর্মকর্তা মাহতাব-উজ-জাহিদ। কমিটিকে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
সিন্ডিকেট সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নূরুল আলম বলেন, ‘অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের সনদ স্থগিতের পাশাপাশি তাদেরকে ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত করা হয়েছে। ক্যাম্পাস বহিরাগতদের প্রবেশ ও অস্থায়ী দোকানপাট নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অছাত্রদের আবাসিক হল থেকে বের হওয়ার নির্দেশনা দিয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হবে। তারা বের না হলে বিধি অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গঠিত কমিটি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করবে।’
উল্লেখ্য, গতকাল শনিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে নয়টায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন আবাসিক হলের ৩১৭ নং কক্ষে স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে কৌশলে বোটানিক্যাল গার্ডেনের পেছনে নিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণ করেন আসামি মোস্তাফিজুর রহমান ও মামুনুর রশীদ মামুন। ঘটনা জানাজানি হলে অভিযুক্ত মোস্তাফিজকে পালাতে সহায়তা করে সাব্বির আহমেদ সাগর, হাসানুজ্জামান ও এ এস এম মোস্তফা মনোয়ার সিদ্দিকী। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর তাদেরকে হল থেকে আটক আশুলিয়া থানা পুলিশ। পরবর্তীতে মূল অভিযুক্ত মোস্তাফিজুর রহমান সকাল ৮টায় সাভার থানায় আত্মসমর্পণ করে। আটক চারজনকে হাজতে পাঠানো হয়েছে এবং তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়েছে।
যাযাদি/এসএস