বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ২৯ কার্তিক ১৪৩১

স্থানীয় সরকার শক্তিশালী করে অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বারোপ করেছিলেন বঙ্গবন্ধু : উপাচার্য ড. মো. মশিউর রহমান 

যাযাদি ডেস্ক
  ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৬:০৭
স্থানীয় সরকার শক্তিশালী করে অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বারোপ করেছিলেন বঙ্গবন্ধু : উপাচার্য ড. মো. মশিউর রহমান 

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. মশিউর রহমান বলেছেন, ‘স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা শক্তিশালী করার মধ্য দিয়ে অর্থনৈতিক উন্নয়নে সর্বাধিক গুরুত্বারোপ করেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠায় তাঁর দর্শন ছিল অনন্য। বঙ্গবন্ধুর সেই দর্শন নিয়েই আমরা এগিয়ে চলছি। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল’- এর চাইতে বড় প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ, রাষ্ট্র সৃষ্টির বিপ্লব বিকেন্দ্রীকরণ আর হতে পারে না। মানুষের ক্ষমতায়নে ‘আমাদের আর দাবায়ে রাখা যাবে না’- এর চাইতে উজ্জীবিত করার আর কোনো বিশেষ বক্তব্য ঔদার্য আর শক্তি নিয়ে বাঙালির জীবনে আর কখনো আসেনি। এই দুই বাক্য যুগলের মধ্যেই প্রশাসনিক এবং রাষ্ট্র ব্যবস্থার বিকেন্দ্রীকরণের স্পষ্ট আভাস রয়ে যায়।’

শনিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) বিকালে রাজধানীর ধানমন্ডিতে নগর কার্যালয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অঙ্গীভূত প্রতিষ্ঠান বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশ গবেষণা ইনস্টিটিউট আয়োজিত ‘রোল অব লোকাল গভমেন্ট ইন ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট: লেশনস ফর বাংলাদেশ’ শীর্ষক বিশেষ লেকচার অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন উপাচার্য।

বিশেষ লেকচার অনুষ্ঠানে স্পিকার হিসেবে ছিলেন বিশ্বব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট ড. জুনায়েদ কামাল আহমেদ। অনুষ্ঠানে নির্ধারিত আলোচক হিসেবে ছিলেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ প্রফেসর ড. মোজাম্মেল হক।

দেশের প্রথিতযশা সমাজবিজ্ঞানী ড. মশিউর রহমান বলেন, ‘জাতিরাষ্ট্র সৃষ্টির পরে বিজয় অর্জন করেছেন ঠিকই কিন্তু জাতির পিতার মধ্যে অতৃপ্তি ছিল। একারণে তিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে স্পষ্ট উচ্চারণ করেছেন। সাহসের সঙ্গে বলেছেন-প্রচলিত সমাজ আমি ভেঙ্গে ফেলব। নতুন সমাজ গড়ব। তিনি এর নাম দিলেন দ্বিতীয় বিপ্লব। দ্বিতীয় বিপ্লব যদি প্রতিষ্ঠা পেত তাহলে মানুষের মধ্যে সমতা প্রতিষ্ঠিত হত। এতে প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ এবং বিন্যস্ত করার যে স্পষ্ট ইঙ্গিত ছিল তা শুধু এই উপমহাদেশে নয়, বিশ্বে নতুন অর্থনীতির মডেল প্রবর্তিত হত। এর মধ্য দিয়ে সাধারণ মানুষের মুক্তি নিশ্চিত হত।’

উপাচার্য ড. মশিউর রহমান আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু বিশ্বাস করতেন পৃথিবী আজ দু’ভাগে বিভক্ত। শোষক আর শোষিত। তিনি ছিলেন শোষিতের পক্ষে। শোষিতের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার যে বিপ্লব বঙ্গবন্ধু করেছিলেন তার মধ্যে ছিল অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক সকল সূতিকাগার। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যার মধ্য দিয়ে আমাদের সেই শাশ্বত, চিরন্তন, অধিকারের সেই প্রাণ সঞ্জীবনী যার মধ্য দিয়ে মুক্তির মালা গাঁথতাম আমরা- সেটিকে হত্যা করা হলো। তারপরে বাংলাদেশের পথ অগণতান্ত্রিক, সামরিক যাঁতাকল। এরফলে এক ধরনের লুটেরা, ধনিক শ্রেণির সমাজ সৃষ্টি হয়েছে। সেই বৈষম্যমূলক বাস্তবতায় বঙ্গবন্ধু কন্যার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন। অর্থনৈতিক সমতা বিধানের যে সমাজ ব্যবস্থা বঙ্গবন্ধু গড়তে চেয়েছিলেন তা বিনষ্ট অবস্থায় তিনি পেয়েছেন। ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে তিনি কেঁদেছিলেন। সেই রক্তাক্ত বাড়িতে প্রবেশের অনুমতি তিনি পাননি। সেটি ছিল অধিকার হারা মানুষের স্পষ্ট অবস্থান। তা দেখেই বোঝা যায় মানুষের অসহায়ত্ব কত বেশি ছিল।’

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য বলেন, ‘পিতার রক্তাক্ত বাড়িতে কন্যাদ্বয়ের প্রবেশের অধিকার ছিল না। সেখান থেকেই বোধ করি তিনি বুঝতে পেরেছিলেন বাংলাদেশের মুক্তির পথ গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা, ভোট এবং ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠা। তিনি সেই সময়ে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলেননি। তিনি বলেছিলেন গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের কথা। ভোট ও ভাতের অধিকারের কথা। এরপর তিনি বলেছেন ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা। অতপর আমরা স্মার্ট বাংলাদেশের পথে আছি। এই পথ ধরেই আমরা উন্নত, সমৃদ্ধ ও আত্মমর্যাদশীল দেশ হিসেবে বিশ্বে পরিগণিত হব।’

নতুন জ্ঞান অনুসন্ধানের মাধ্যমে সমতার বাংলাদেশ সৃষ্টি মূল আকাক্সক্ষা জানিয়ে উপাচার্য বলেন, ‘বর্তমান সময়ে আমাদের আহ্বান গবেষণা, নতুন জ্ঞান অনুসন্ধান এবং মুক্তবুদ্ধি চর্চার মধ্য দিয়ে সমতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশ সৃষ্টি করা। বিতর্ক, নতুন ভাবনার সৃষ্টি ও বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা আগামী দিনে গবেষকদের জন্য ভিন্ন মাত্রা যোগ করবে। সৃষ্টি হবে বৈষম্যহীন নতুন সমাজ।’

বিশেষ লেকচার অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কর্নেল (অব.) সাজ্জাদ আলী জহির বীর প্রতীক, বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশ গবেষণা ইনস্টিটিউটের ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর ড. এ কে এম নূর-উন-নবী, অধ্যাপক ড. মো. আখতার হোসাইন, রেজিস্ট্রার মোল্লা মাহফুজ আল-হোসেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভিন্ন দপ্তরের বিভাগীয় প্রধান, শিক্ষক, গবেষক ও কর্মকর্তাবৃন্দ।

যাযাদি/ এম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে