হাবিপ্রবিতে র্যাগিংয়ের দায়ে বহিষ্কার প্রত্যাহার দাবিতে অবরোধ
প্রকাশ | ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৯:৪৫
দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে র্যাগিংয়ের দায়ে বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীদের বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রবেশদ্বার ও পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন ঢাকা দিনাজপুর মহাসড়ক অবরোধ করে কতিপয় শিক্ষার্থীরা।
বিদায়ী বছর সর্বোচ্চ বহিষ্কারের ঘটনা ঘটেছে উত্তরবঙ্গের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (হাবিপ্রবি)। শুধুমাত্র র্যাগিংয়ের অভিযোগেই বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাগিং প্রতিরোধ ও প্রতিকার নীতিমালা-২০২১ অনুযায়ী এই বছরে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার হয়েছে ২০২২ শিক্ষাবর্ষের ১২ জন শিক্ষার্থীকে।
বুধবার (৩১ জানুয়ারি) সকাল থেকে বহিস্কার আদেশ এর বিরুদ্ধে অবস্থানকারী ২০২২ ও ২০২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা প্রধান ফটকের সম্মুখে জড়ো হতে থাকে। এক পর্যায়ে প্রধান ফটক অবরোধ করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এসময় শিক্ষার্থীরা হাতে লিখা পোস্টার ও বিভিন্ন স্লোগানের মাধ্যমে বহিষ্কারের বিরোধিতা করেন। পরবর্তীতে বিকেল ৪ টা থেকে বহিস্কার বাতিলের এক দফা দাবিতে ঢাকা-দিনাজপুর মহাসড়ক অবরোধ করে ওই শিক্ষার্থীরা। পুনরায় র্যাগিং এর অভিযোগ ও বহিষ্কার আদেশ পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে রিভিউ করার আশ্বাস দিলেও অবরোধকারী শিক্ষার্থীরা বহিস্কার বাতিলের দাবিতে সড়ক অবরোধ করে রেখেছে।
আগস্ট মাসে ক্যাম্পাসে ও ক্যাম্পাস সংলগ্ন ছাত্রাবাসে ২০২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের র্যাগিং ও হয়রানির অভিযোগে মার্কেটিং বিভাগের ৬ জন শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার এবং ৩ শিক্ষার্থীকে কঠোরভাবে সতর্ক করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
সেসময় র্যাগিংয়ের ভুক্তভোগী মার্কেটিং বিভাগের ২৩ ব্যাচের শিক্ষার্থী মো. ওয়াসিম জানান, আমরা ওইদিন ভায়েদের মেসে গেছিলাম দেখা করতে নরমাল কথাবার্তা বলেছে ম্যানার শিখিয়েছে কিন্তু যেসব ভাইয়েদের নামে অভিযোগ করা হয়েছে সেরকম কিছু হয় নি।
সেপ্টেম্বর মাসে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন ছাত্রাবাসে র্যাগিং এর অভিযোগে কৃষি অনুষদের রাকিবুল হুদা তাজমুল ও আব্দুল্লাহ আল মামুন নামের দুই শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার ও দুই শিক্ষার্থীকে সর্তক করা হয়। একই মাসে শ্রেণীকক্ষে র্যাগিং এর অভিযোগে ফাইন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের আরো ২১ শিক্ষার্থীকে সতর্ক করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
সর্বশেষ ডিসেম্বর মাসেও একই অভিযোগে অর্থনীতি বিভাগের ২০২২ শিক্ষাবর্ষের তৌহিদুল ইসলাম তুরাগ ও সজীব হোসেন নামের দুই শিক্ষার্থীকে ২ সেমিস্টার এবং রোকনুজ্জামান চৌধুরী ও অনুপম রায় নামের দুই শিক্ষার্থীকে ১ সেমিস্টার করে বহিষ্কার করে। পাশাপাশি তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়। একইসঙ্গে ওই বিভাগের এফ. এন শাবিন, শাহীন আলম, জাহিদ হাসান, শাকির মাহমুদ ও ইয়াসির রহমান শাকিল নামের চারজন ছাত্রকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কঠোরভাবে সতর্ক করা হয়।
ওইদিন র্যাগিংয়ের দায়ে বহিষ্কৃত অর্থনীতি বিভাগের ২২ ব্যাচের শিক্ষার্থী সজীব হোসেন বলেন, যেদিন যে অভিযোগের ভিত্তিতে আমাদের বহিষ্কার করা হয়েছে ওইদিন আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে মেইন গেট দিয়ে যাওয়ার সময় একজন জুনিয়র মেয়ে মেইন গেটে অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলে আমরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায় তার বন্ধুদের খবর দি তারপর আমরা চলে যায়। পরে আমরা জানতে পারি আমাদের নামে নাকি অভিযোগ গেছে ওই মেয়ে কে আমরা র্যাগ দিয়েছি ক্লাসে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. মামুনুর রশিদ জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে র্যাগিং প্রতিরোধে এন্টি র্যাগিং স্কোয়াড কমিটি আছে তারা সকল প্রমাণ তথ্যাদি বিশ্লেষণ করে সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যাদের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট অভিযোগে সঠিক তথ্য প্রমাণ পাওয়া গেছে তার ভিত্তিতে র্যাগিং প্রতিরোধ ও প্রতিকার নীতিমালা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিয়েছে এন্টি র্যাগিং স্কোয়াড। এরপরেও শিক্ষার্থীদের আবেদনে আবারও এন্টি র্যাগিং স্কোয়াড কমিটি তথ্য প্রমাণগুলো পুনরায় বিশ্লেষণ করবে এবং অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হবে বলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
উল্লেখ্য যে, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ৯ টি ধারা সম্বলিত 'হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় র্যাগিং প্রতিরোধ ও প্রতিকার নীতিমালা ২০২১' কার্যকর করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এছাড়াও গঠন করা হয়েছিল এন্টি র্যাগিং স্কোয়াড নামের মূল কমিটি ও অনুষদ, বিভাগ, হল ও মেস অনুযায়ী উপকমিটি। এই নীতিমালা অনুযায়ী র্যাগিং এর অভিযোগ প্রমাণিত হলেই তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
যাযাদি/ এস