খেজুরের রস বাঙালির গ্রামীণ ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির অন্যতম অনুষঙ্গ। নানা প্রতিকূলতায় আবহমান বাংলার মন ভুলানো এই স্বাদের উৎসব এখন কোনঠাসা অবস্থায়। বাঙালির হারাতে বসা গ্রামীণ ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে পুনরুজ্জীবিত করতে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত হলো ‘রস উৎসব-২০২৪’।
মঙ্গলবার(২৩ জানুয়ারি) গাছের পাতা থেকে শিশির ঝরা টুপটাপ শব্দ আর পাখিদের কলরবে আন্দোলিত শীতের সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের নজরুল ভাস্কর্যের সামনে বসে রসের মেলা। রংপুর ডিভিশনাল স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন এই উৎসবের আয়োজন করে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে রস উৎসবের উদ্বোধন করেন। চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড.তপন কুমার সরকারের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক ড. আতাউর রহমান। এসময় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ মাসুম হাওলাদার সহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক কর্মকর্তা কর্মচারী ও শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক ড.সৌমিত্র শেখর বলেন ‘রস উৎসব মানে বাঙালি সংস্কৃতির উৎসে ফেরার চেষ্টা । আমাদের নিজস্ব মাটির যে রস এই অমৃত রসধারা এটি অনন্য। এই রস উৎসবের আয়োজন করায় আমি রংপুর ডিভিশনাল স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশনকে ধন্যবাদ জানাই।’
বাংলাদেশের খেজুরের রস নিয়ে কৃষিবিজ্ঞানীদের কাজের সুযোগ আছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আমরা জানি মধ্যপ্রাচ্যের খেজুর ভালো মানের, দেখতে বড়, দেখতে ভালো। এর খাদ্যপ্রাণ, খাদ্যমানের কারণে বিশ্বের নানা স্থানে ছড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যে কী খেজুরের রস পাওয়া যায়! আমরা একটা সন্দেহ হয়েছে এটা নিয়ে। পাওয়া গেলে আমরা নিশ্চয়ই শুনতাম। কোনো না কোনভাবে বোতলজাত হয়ে সেটি আমাদের কাছে পৌঁছুত। এখনো যেহেতু সেরকম কিছু শুনিনি তাই আমাদের খেজুরের রস নিয়ে ভাবতে হবে। এই রসটি আমাদের এই অঞ্চলের নিজস্ব সম্পদ কী না? এসব নিয়ে কৃষিবিজ্ঞানীদের কাজ করতে হবে। খেজুর রসকে নিয়ে আমরা আন্তর্জাতিক ভাবে এগুতে পারি।’
ড. সৌমিত্র শেখর আরও বলেন, ‘খেজুরের রস নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে অনেক নেতিবাচক প্রচারণা হচ্ছে। এটি ঠিক নয়। খেজুরের রসে নিপাহ ভাইরাসকে প্রতিরোধ করতে হবে। এই নিপাহ ভাইরাসের জন্য তো রস খাওয়া বন্ধ করা যাবে না। নিপাহ ভাইরাসের কথাভেবে রস পান বন্ধ করে দিলে আগামী ৫০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে খেজুরের গাছ বিলীন হয়ে যাবে।’
সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক কামরুল হাসান বলেন ‘শীতের মৌসুম এলেই এক সময় গ্রাম-বাংলার ঘরে ঘরে খেজুরের রস এবং রস দিয়ে তৈরি হরেক রকম পিঠাপুলির মহোৎসব চলত। সময়ের আবর্তনে বাঙালির জীবনস্মৃতিতে এটি এখন আদিচিত্র।বাঙালির জীবনাধারার পুরোনো সেই ঐতিহ্যটিকে টিকিয়ে রাখতেই এই রস উৎসবের আয়োজন। প্রতিবছর আমরা এই ধরনের আয়োজন অব্যাহত রাখব।’
এর আগে রংপুর অঞ্চলের দলগত সংগীতের মাধ্যমে রস উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। উৎসবে আগত সকলকে খেজুরের রস পান করানোর মাধ্যমে উৎসবটি শেষ হয়। উৎসব থেকে প্রাপ্ত অর্থ দুঃস্থ অসহায় শীতার্ত মানুষের শীতবস্ত্র প্রদানে ব্যয় করা হবে বলেও জানান আয়োজকরা।
যাযাদি/ এস