হাবিপ্রবি শিক্ষকের আবেদনে দিনাজপুরে হচ্ছে লিচু চত্বর
প্রকাশ | ১৩ জানুয়ারি ২০২৪, ১৩:০৬
দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ‘লিচু চত্বর’ বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন জেলা প্রশাসক শাকিল আহমেদ। লিচু চত্বর নির্মাণের জন্য শহরের প্রবেশমুখ দিনাজপুর সরকারি কলেজ মোড়কে প্রাথমিকভাবে নির্বাচন করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
জানা যায়, আদিকাল থেকে বাংলাদেশের মধ্যে দিনাজপুরে প্রথম লিচু চাষ শুরু হয়। তবে নির্দিষ্ট কোনো তারিখ বা সন জানা যায়নি। জনশ্রুতি রয়েছে ব্রিটিশ আমলে কোন একসময় সদর উপজেলার ৬নং আউলিয়াপুর ইউনিয়নের মাশিমপুর গ্রামের আব্দুল হক ভারতের বোম্বাই থেকে বেদানা লিচুর চারা নিয়ে এসে রোপণে করেন। সেই থেকে দিনাজপুরে লিচু চাষ শুরু হয়। একে একে বোম্বাই, মাদ্রাজি, হারিয়া বেদানা, কাঁঠালি, চায়না-থ্রি, গোলাপিসহ বিভিন্ন জাতের লিচু চাষ শুরু হয়। দিনাজপুরের লিচু দেশ-বিদেশে কদর অর্জন করলেও লিচু নিয়ে তেমন কোনো গবেষণা বা কাজ হয়নি। অথচ এ জেলায় লিচু চাষে রয়েছে দেড়শ বছরের ইতিহাস। সারাদেশে লিচু চাষ হলেও দিনাজপুরের লিচুর কদর আলাদা। দেশের মানুষ দিনাজপুরের লিচুকে প্রাকৃতিক রসগোল্লা হিসেবেও আখ্যায়িত করেন।
কৃষিপ্রধান এদেশের একেকটি জেলা একেকটি পণ্য উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত। দিনাজপুর জেলার জন্য একটি লোগো তৈরি করেছে প্রশাসন। যেখানে স্লোগান দেওয়া হয়েছে- ‘চাল লিচুতে ভরপুর, জেলার নাম দিনাজপুর’। যে লোগোটি জেলা উপজেলাসহ সব প্রশাসনিক দপ্তরে শোভা পাচ্ছে। তবে চাল, লিচু চাষের জন্য বিখ্যাত হলেও এ জেলায় নেই কোনো চাল বা লিচু চত্বর।
গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর জেলায় লিচু চত্বর স্থাপনের জন্য আবেদন করেন দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুর উপজেলার কৃতি সন্তান হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি অ্যান্ড এনিমেল সায়েন্স অনুষদের এনাটমি অ্যান্ড হিস্টোলজি বিভাগের প্রফেসর ড. নাজমুল হাসান পারভেজ। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আবেদনের সঙ্গে তিনি দিনাজপুর সরকারি কলেজ মোড়ে লিচু চত্বরের একটি নকশা সংযুক্ত করে দেন। তার আবেদনের প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক লিচু চত্বর বাস্তবায়নের জন্য ২৯ নভেম্বর ডাক যোগে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানকে চিঠি দেন। এর আগেও বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তি উদ্যোগে দীর্ঘ দিন থেকে দিনাজপুরের মানুষ লিচু চত্বর স্থাপনের দাবি জানিয়ে আসছেন।
লিচু চত্বরের আবেদনের ব্যাপারে প্রফেসর ড. নাজমুল হাসান পারভেজ বলেন, নিজের এলাকার তথা দেশের জন্য ভালবাসার অনুভূতি থেকেই আমার এই উদ্যোগ গ্রহণ। দিনাজপুর জেলা চাল ও লিচুর জন্য বিখ্যাত। কিন্তু এই জেলায় প্রাপ্ত লিচুফলের কোন ভাস্কর্য নেই। বাংলাদেশের রাজশাহীতে যেমন রয়েছে আম চত্বর এবং টাঙ্গাইলের মধুপুরে আনারস চত্বরের মত আমাদের দিনাজপুরে এমন লিচু চত্বর তৈরী করা বিশেষ প্রয়োজন যা আমাদের দিনাজপুর জেলাকেও বাংলাদেশ তথা সারা বিশ্বে লিচুর জন্য আরো নতুন করে পরিচিত করে তুলবে।
লিচু চত্বর স্থাপনের ব্যাপারে দিনাজপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. দেলওয়ার হোসেন বলেন, দিনাজপুরে একটি লিচু চত্বর করার সিদ্ধান্ত ছিল। শিক্ষকের আবেদন আমাদের কাজকে আরও তরান্বিত করবে। প্রাথমিকভাবে দিনাজপুর সরকারি কলেজ মোড়ে লিচু চত্বরটি করার প্রস্তুতি চলছে। তবে এর থেকে আরও ভালো জায়গা যদি পাওয়া যায় সেখানেও এটি করা যেতে পারে। যার মাধ্যমে দিনাজপুরের লিচু চাষের ইতিহাসকে তুলে ধরা হবে।
দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক নূরুজ্জামান বলেন, জেলায় পাঁচ হাজার ৪৯০ হেক্টর জমিতে লিচুর বাগান রয়েছে। এ বাগানগুলোতে লিচু উৎপাদন হয় প্রায় ৪৫ হাজার মেট্রিক টন। যা দিনাজপুরের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করে। আমরাও চাই দিনাজপুরে লিচু চত্বর স্থাপিত হোক।
যাযাদি/ এসএম