মঙ্গলবার, ০৬ মে ২০২৫, ২৩ বৈশাখ ১৪৩২

১৭ বছরে যত অর্জন যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

যবিপ্রবি প্রতিনিধি
  ২৪ জানুয়ারি ২০২৩, ২১:৩৯
১৭ বছরে যত অর্জন যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
১৭ বছরে যত অর্জন যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

দেশের প্রথম স্বাধীন জেলার ৩৫ একরের ক্যাম্পাস যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (যবিপ্রবি) এখন বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। কিশোর বয়সের এই যবিপ্রবি যেন প্রবীণ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর চেয়ে অগ্রগামী হয়ে নেতৃত্ব দিচ্ছে শিক্ষা ও গবেষণায়।

বিভিন্ন দেশ ও জাতি যখন করোনা মহামারী নিয়ে ভীত সন্ত্রস্থ ঠিক তখনই প্রফেসর ড. মোঃ আনোয়ার হোসেন স্যারের নেতৃত্বে একদল শিক্ষক নিজের কাঁধেই তথা বিশ্ববিদ্যালয়েই কোভিড-১৯ টেস্ট সেন্টার এবং গবেষণার জন্য ল্যাব স্থাপন করে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে যবিপ্রবি।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে দেশকে নেতৃত্বের শীর্ষস্থান ধরে রাখতে যবিপ্রবি নির্মাণ করেছে স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু একাডেমিক ভবন। নতুন এই ভবনে সংযুক্ত হবে অত্যাধুনিক ল্যাব, শিক্ষার্থীদের শিক্ষা ও গবেষণায় আরও সংযুক্ত করতে যবিপ্রবি ২০২৩ সালের মধ্যে হবে সম্পূর্ণ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়।

এই প্রতিবেদনে ১৭ বছরে পদার্পণ করা অপ্রতিরোধ্য কিশোর যবিপ্রবির কিছু অসাধারণ অর্জনের খন্ডাংশ তুলে ধরেছেন যায়যায়দিন এর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি শেখ সাদি।

গবেষণায় যবিপ্রবি: ২০২১ সালে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে একুশে পদক প্রাপ্ত হন বিশিষ্ট অনুজীব বিজ্ঞানী যবিপ্রবির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আনোয়ার হোসেন।

বিশ্বের প্রথম সারির চিকিৎসা ও বিজ্ঞানবিষয়ক প্রকাশনা নিবন্ধ প্রকাশনা সংস্থা এলসেভিয়ার কর্তৃক স্কোপাস ডাটা সর্বশেষ র‌্যাঙ্কিংয়ে দেশের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ১ম স্থান অর্জন এবং দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে নবম (৯ম) স্থানে রয়েছে যবিপ্রবি।

প্রতি বছর এলসেভিয়ার ও স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি, ইউএসএ সম্মিলিতভাবে বিশ্বসেরা ২% বিজ্ঞানীদের একটি তালিকা প্রকাশ করে থাকে। অন্যান্য বছরের ন্যায় ২০২২ সালে যবিপ্রবি থেকে তিন (৩) জন বিজ্ঞানী এই তালিকাতে স্থান অর্জন করে নিয়েছে। কম্পোজিট স্কোরের উপর ভিত্তি করে এই তালিকায় যবিপ্রবি থেকে ১ম স্থান অর্জন করেছেন ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. ইঞ্জিনিয়ার ইমরান খান, ২য় স্থান অর্জন করেছেন পেট্রোলিয়াম এন্ড মাইনিং ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোঃ আমিনুল ইসলাম এবং ৩য় স্থান অর্জন করেছেন কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোঃ জাভেদ হোসেন খান। ২০২২ সালে যবিপ্রবির প্রকাশিত মোট গবেষণা পত্রের সংখ্যা ৩৫০ টি।

জিনোম সেন্টার এবং করোনা মহামারী: বিশ্ব যখন কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত, পরিবারের কোনো সদস্য আক্রান্ত হলে পালিয়ে যাচ্ছিলো আত্মীয় স্বজনরা, সেই সময় দেশের ক্রান্তিলগ্নে যবিপ্রবির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আনোয়ার হোসেনের সাহসী নেতৃত্বে যবিপ্রবির একদল শিক্ষকবৃন্দ জিনোম সেন্টারে কোভিড-১৯ পরীক্ষা শুরু করেন, যা করোনাকালীন সময় থেকে আজও চলমান রয়েছে। কোভিড-১৯ শনাক্তের কীট আবিষ্কার, করোনার বিভিন্ন নতুন ভ্যারিয়ান্ট শনাক্ত, জিনোম সিকুয়েন্স ও জীবন রহস্য উন্মোচন সহ যবিপ্রবি প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে দেশ-জাতি তথা বিশ্বের কল্যাণে।

ফিশ মিউজিয়াম: যবিপ্রবির নিজস্বে অর্থায়নে ফিশারীজ এন্ড মেরিন বায়োসাইন্স (এফএমবি) বিভাগের শিক্ষকবৃন্দের অক্লান্ত পরিশ্রমে ২০১৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহৎ মৎস্য সংরক্ষণশালা ‘অ্যাকুয়াটিক বায়োডায়ভার্সিটি মিউজিয়াম’। সহজেই মাছের সঙ্গে পরিচিতি, বিলুপ্ত ও বিলুপ্তপ্রায় সব স্বাদু পানির মাছ ও সামুদ্রিক মাছ এবং অন্যান্য জলজ প্রাণি সংরক্ষণের মাধ্যমে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের শিক্ষা ও গবেষণা উন্নয়নে এ মিউজিয়াম তৈরি হয়েছে। এতে সংরক্ষিত আছে প্রায় ৪৭৫ প্রজাতির স্বাদু ও সামুদ্রিক প্রাণী। বর্তমানে মিউজিয়ামের তত্ত¡াবধানে রয়েছেন এফএমবি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোঃ সিরাজুল ইসলাম।

হ্যাচারি এ্যান্ড ওয়েট ল্যাব: গবেষণার পাশাপাশি দেশে উন্নতমানের মাছের পোনা সরবরাহ করছে যবিপ্রবির 'হ্যাচারি এ্যান্ড ওয়েট ল্যাব'। বর্তমানে যবিপ্রবির এই হ্যাচারী স্বাদুপানির পোনা সরবরাহে বিশ্বমানের দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম হ্যাচারী হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে, যা দেশের আর্থিক অবকাঠামো উন্নয়নে অগ্রগামী ভূমিকা পালন করছে। শিক্ষার্থীদের হাতে-কলমে শিক্ষার পাশাপাশি মৎস্যচাষীদের উন্নত পোনা সরবারহ ও দেশের মানবসম্পদ উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে ল্যাবটি। বর্তমানে রুই, মৃগেল, কাতলা, বিগেট কার্প, বাটা, সিলভার কার্প, পাঙ্গাশ মাছের উন্নতমানের পোনা রয়েছে ল্যাবটিতে। চাহিদা বৃদ্ধি পেলে শিং, মাগুর, পাবদা-খলশা'র পোনাও উৎপাদন করা হবে। তবে বেশি আর্থিক বরাদ্দ পেলে চিংড়ি'র পোনা নিয়েও গবেষণার আগ্রহ প্রকাশ করেছে ল্যাব কতৃপক্ষ। ল্যাবটিতে কেজি প্রতি রেণু'র সংখ্যা প্রায় ৪-৫ লক্ষ। এছাড়া কাঁকড়া ফ্যাটেনিং প্রকল্পও প্রায় শেষের দিকে।

ক্রীড়াঙ্গনে যবিপ্রবি: সাম্প্রতিক সময়ে ক্রীড়াঙ্গনে যবিপ্রবি অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে। বঙ্গবন্ধু আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় স্পোর্টস চ্যাম্পিয়নশিপ-২০২২ এ যবিপ্রবির নারী ক্রিকেটদল চ্যাম্পিয়ন হয় এবং এই চ্যাম্পে পুরুষ ক্রিকেটদল ১ম রানার্সআপ অর্জন করে। আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় হ্যান্ডবল খেলা-২০২২ এ নারী দল চ্যাম্পিয়ন হয়, টোকিও অলিম্পিক-২০২১ (এ্যাথলেটিক্স) এ খেলেছেন যবিপ্রবি শিক্ষার্থী জহির রায়হান। জাতীয় পর্যায়ে নতুন রেকর্ড গড়েছেন যবিপ্রবির শিক্ষার্থী ১৪ তম বারের মতো দেশের দ্রুততম মানবী শিরীন আক্তার, জাতীয় এ্যাথলেটিক্সে জহির রায়হান, সোনিয়া আক্তার এবং আশরাফুজ্জামান রচির রয়েছে স্বর্ণপদক অর্জনসহ বিভিন্ন রেকর্ডের কারিগর যবিপ্রবি শিক্ষার্থীরা। সাফ চ্যাম্পিয়নশীপ জয়ী বাংলাদেশের জাতীয় দলের নারী সদস্যদের মধ্যে ছিলেন যবিপ্রবি শিক্ষার্থী নিলুফার ইয়াসমিন নীলা। বাংলা চ্যানেল পাড়ি দিয়েছেন যবিপ্রবির দুই শিক্ষার্থী মিতু আক্তার এবং মোঃ তারেক হাসান। ক্রীড়াঙ্গনে আরও সম্পৃক্ততার জন্য যবিপ্রবি ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক মানের স্টেডিয়াম তৈরির পরিকল্পনা নিয়েছে এবং অনুমোদনের জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন করেছে।

উল্লেখ্য, উচ্চ শিক্ষার মাধ্যমে আধুনিক জ্ঞানচর্চা ও গবেষণার সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে ২০০৭ সালের ২৫ জানুয়ারি যশোর সদর উপজেলার চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের সাজিয়ালী মৌজায় ৩৫ একর জায়গাজুড়ে স্থাপিত হয় যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। যশোর শহরের ধর্মতলাস্থ ‘বৃষ্টি মহল’ নামে একটি ভাড়া বাড়িতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০০৮-০৯ শিক্ষাবর্ষে একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১০ সালের ২৭ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ক্যাম্পাসের উদ্বোধন করেন। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৮৭ জন শিক্ষক নিবিড় তত্ত্বাবধানে সাতটি অনুষদের অধীনে ২৬টি বিভাগে স্নাতক, স্নাতকোত্তর, এমফিল ও পিএইচডি প্রোগ্রামে মোট ৩ হাজার ৯ শত ৮২ জন শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত। বিভিন্ন গ্রেডের ১১৯ জন কর্মকর্তা এবং ২৮৩ জন কর্মচারী কর্মরত আছেন । শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য বর্তমানে পরিবহন পুলে ২৪ টি নিজস্ব বিভিন্ন ধরনের গাড়ি রয়েছে। এছাড়া ভাড়াকৃত ১০ টি দ্বিতল বাস রয়েছে শিক্ষার্থীদের জন্য। যবিপ্রবির কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে রয়েছে ১৫ হাজার ৬২৮ টি বই। শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার পাশাপাশি সামাজিক কাজ সাংস্কৃতিক চর্চা, এবং দেশের নেতৃত্ব উপযোগী করে গড়ে তোলার জন্য রয়েছে বিএনসিসি, ডিবেট ক্লাব, সাংবাদিক সমিতির মতো ১৮ টি ক্লাব ও সংগঠন।

যাযাদি/ এম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে