পাকিস্তান ভারতীয় নিবন্ধিত বিমান ও এয়ারলাইন্সের জন্য তাদের আকাশসীমা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় ভারত থেকে ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যে যাওয়ার ফ্লাইটগুলোর সময়কাল বেড়েছে এবং এই রুটের বিমান ভাড়াও বৃদ্ধি পেয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা পাকিস্তানের এই পদক্ষেপের ফলে ভারত মধ্যপ্রাচ্যগামী ফ্লাইটের ভাড়া ৩০% এবং ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকাগামী টিকিটের দাম প্রায় ৪০% বৃদ্ধি করবে বলে ঘোষণা দিয়েছে।
দিল্লির বিমানবন্দরের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ভারত থেকে ছেড়ে যাওয়া বিভিন্ন ভারতীয় ও বিদেশী এয়ারলাইন্সের প্রায় ৫৫০টি ফ্লাইট দৈনিক পাকিস্তানের আকাশসীমা ব্যবহার করে।
উত্তর ভারত থেকে ভারতীয় বিমান সংস্থাগুলোর অন্তত ১২০টি ফ্লাইটকে এখন দক্ষিণে মুম্বাইয়ের আকাশসীমার উপর দিয়ে যেতে হবে, তারপর আরব সাগরের উপর দিয়ে পশ্চিম দিকে উড়ে মাস্কাটের আকাশসীমায় প্রবেশ করে তাদের নিয়মিত রুটে চলতে হবে।
এয়ারপোর্টস অথরিটি অফ ইন্ডিয়ার (এএআই) একজন প্রাক্তন কর্মকর্তা হিন্দুস্তান টাইমসকে বলেছেন, পাকিস্তানের আকাশসীমা এড়িয়ে চলার কারণে উত্তর ভারতের বিমানবন্দর থেকে ইউরোপ, কানাডা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া সমস্ত ফ্লাইটের সময়কাল ৯০ মিনিট পর্যন্ত বাড়তে পারে।
এয়ারলাইন কর্মকর্তাদের মতে, দিল্লি থেকে ইউরোপ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডায় নন-স্টপ ফ্লাইট পরিচালনাকারী এয়ার ইন্ডিয়া সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হবে।
এয়ার ইন্ডিয়া এক্স (পূর্বের টুইটার) -এ একটি পোস্টে বলেছে, “পাকিস্তানের আকাশসীমা সমস্ত ভারতীয় এয়ারলাইন্সের জন্য বন্ধ ঘোষণা করার কারণে, আশা করা হচ্ছে যে উত্তর আমেরিকা, যুক্তরাজ্য, ইউরোপ এবং মধ্যপ্রাচ্যগামী বা সেখান থেকে আসা কিছু এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইট বিকল্প দীর্ঘ পথে চলাচল করবে।”
মধ্যপ্রাচ্যে ফ্লাইট পরিচালনাকারী ইন্ডিগো বলেছে, “চলমান পরিস্থিতি এবং পাকিস্তানের আকাশসীমা বন্ধের কারণে কয়েকটি আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের সময়সূচী প্রভাবিত হতে পারে। আমরা অসুবিধা কমানোর জন্য কাজ করছি।”
ভারতের নতুন এয়ারলাইন আকাসা এয়ার জানিয়েছে, সংস্থাটি “সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসাবে পাকিস্তানের আকাশসীমার উপর দিয়ে উড়ে যাওয়ার প্রত্যাশিত যেকোনো ফ্লাইটকে পূর্বনির্ধারিতভাবে অন্য পথে চালিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটি আমাদের পরিচালনায় কোনও উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলবে না এবং আমাদের যাত্রীদের কোনও অসুবিধা সৃষ্টি করবে না।”
স্পাইসজেটের একজন মুখপাত্র বলেছেন, উত্তর ভারত থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে তাদের ফ্লাইটগুলো এখন বিকল্প রুটে পরিচালিত হবে। তিনি যোগ করেন, “ফলস্বরূপ, এই ফ্লাইটগুলো দীর্ঘ উড়ানের সময় বিবেচনা করে অতিরিক্ত জ্বালানি বহন করবে।”
একজন সাবেক এয়ারলাইন কর্মকর্তা উল্লেখ করেছেন, এই পরিস্থিতির ফলে বিমান ভাড়া বৃদ্ধি পাবে, কারণ দীর্ঘ রুটের কারণে এয়ারলাইন্সগুলোকে বেশি জ্বালানি ব্যবহার করতে হবে, যা খরচ বাড়িয়ে দেবে।
একজন এয়ারলাইন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, পাকিস্তানের আকাশসীমা এড়িয়ে চলার কারণে যুক্তরাজ্য ও ইউরোপগামী ফ্লাইটগুলোর জন্য এয়ারলাইন্সগুলোর জ্বালানি খরচ ১৫% এবং উত্তর আমেরিকাগামী গন্তব্যগুলোর জন্য প্রায় ১০% বেশি হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, “এই ধরনের পরিস্থিতিতে বিমান শিল্প সবসময়ই কঠিন আঘাত পায়। আশা করি এই পরিস্থিতি শীঘ্রই শান্ত হবে, কারণ এটি এয়ারলাইন্সগুলোর আয়ের উপর প্রভাব ফেলবে।”
এশিয়া ভিত্তিক এভিয়েশন কনসাল্টিং এবং সেফটি ফার্ম মার্টিন কনসাল্টিং-এর সিইও মার্ক ডি মার্টিন বলেছেন, “ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে এই ধরনের উত্তেজনা বৃদ্ধির জন্য এটি অত্যন্ত খারাপ সময়, বিশেষ করে গ্রীষ্মকালীন ছুটির ব্যস্ত মৌসুমের শুরুতে পাকিস্তানের ভারতীয়-নিবন্ধিত বিমানের জন্য আকাশসীমা বন্ধ করে দেওয়া।”
মার্টিন আরও বলেন, “সাধারণ হিসাবে, আমরা ধারণা করছি মধ্যপ্রাচ্যের গন্তব্যগুলোতে টিকিটের দাম কমপক্ষে ৩৫% এবং ইউরোপের গন্তব্যগুলোতে ৪০% এর বেশি বাড়বে। এছাড়াও, কার্বন নিঃসরণ এবং জ্বালানি খরচও বাড়বে।”
পাকিস্তানের আকাশসীমা বন্ধ হয়ে ভারতকে প্রভাবিত করার ঘটনা এটাই প্রথম নয়। ২০১৯ সালে, পুলওয়ামা হামলার পর দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধির পর ইসলামাবাদ একই ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছিল। তবে এবারের মতো সেবার শুধু ভারতীয় বিমান সংস্থার জন্যই নয়, বরং সমস্ত এয়ারলাইন্সের জন্য আকাশসীমা বন্ধ ছিল।