হতাশ লবণ চাষিরা,নেই ন্যায্যমূল্য
প্রকাশ | ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১৯:৩৩
কক্সবাজারের কুতুবদিয়ায় লবণ উৎপাদনের খরচসহ ন্যায্যমূল্য না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েছেন অসহায় চাষিরা। অনেকেই লবণ উৎপাদন নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দে পড়েছেন।
এদিকে, দেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সুযোগে সিন্ডিকেট চত্রুরা বিদেশী লবণ আমদানির পায়তারা চালাচ্ছেন। বিদেশি লবণ আমদানির কারণে বিগত ২০১৬ সাল থেকে একটানা লোকসানে লবণ চাষীদের মেরুদণ্ড ভেঙে গেছে। গত কয়েক বছর কিছুটা উন্নতি হলেও বিগত বছরগুলোর লোকসান এখনও পুষিয়ে উঠতে পারেনি লবণ চাষীরা।
বিসিকের (বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুঠির শিল্প) তথ্যমতে, গত মৌসুমে কুতুবদিয়ায় লবণ উৎপাদনের জমির পরিমাণ ৬ হাজার ৭শ ৫৮ দশমিক ৪৮ একর। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে লবণের চাহিদা ছিল ২৪ লাখ ৩৫ হাজার মে. টন। এরমধ্যে লবণ উৎপাদিত হয় ২৪ লাখ ৩৭ হাজার ৮শ ৯০ মে. টন। যা বিগত ৬৩ বছরের লবণ উৎপাদনের সর্বোচ্চ রেকর্ড ছিল।
উত্তর ধূরুং ইউনিয়নের লবণ চাষী শাহজাহান বলেন, দুই লাখ টাকা দিয়ে চার কানি লবণ চাষের জন্য লাগিয়ত নিয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় বেশি। লবণ উৎপাদনের জন্য মাঠ তৈরি করতে ২৮ হাজার টাকা খরচ হয়। পানি খরচ ৪৪ হাজার টাকা, পলিথিন খরচ ৩২ হাজার টাকা এবং লবণ উৎপাদনের শ্রমিক দুই লাখ টাকা সহ সব মিলিয়ে ৫ লাখ ৪ হাজার টাকা খরচ করে। এতে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে লবণ উৎপাদিত হবে ১৪শ মণ। প্রতি মণ (৫০ কেজিপ্রতি) লবণ উৎপাদন খরচ ৩৫০ টাকা। অন্যদিকে ভালো মানের প্রতি মণ লবণের বর্তমান বিক্রয় মূল্য ২০০ টাকা। সে হিসেবে ৪ কানি জমিতে লবণ উৎপাদন করে তাকে লোকসান দিতে হবে ২ লাখ ২৪ হাজার টাকা। দিন-রাত পরিশ্রম করে চাষিরা লবণের উৎপাদন খরচও তুলতে পারবেন না বলে জানান তিনি। একই কথা লেমশীখালীর ফরিদ উদ্দিন, ছোটন, করিম, বড়ঘোপের গিয়াস উদ্দিন আলমগীর হোসেন সহ অনেকেই।
এই অপরিশোধিত লবণ কয়েক হাত বদল করে পরিশোধের জন্য চট্টগ্রামের মাঝির ঘাট, চাক্তাই ও পটিয়ায় কারখানা গুলোতে নেয়া হয়। যা ক্রাশিং শেষে কারখানা থেকে বেরিয়ে এ লবণ কুতুবদিয়ায় বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৪০-৪৪ টাকা। অথচ প্রান্তিক চাষীরা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে পেল মাত্র কেজিপ্রতি ৪ টাকা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, লবণ চাষীদের স্বার্থে জমির লাগিয়ত যৌক্তিক পর্যায়ে থাকা প্রয়োজন। প্রতি বছর বাড়ানোর কোনো যৌক্তিকতা নেই। সরকার চাইলে জমির দাম নির্ধারণ করে দিতে পারে। এতে লবণ চাষীরা উপকৃত হবে। বর্তমানে এলাকাভেদে প্রতি কানি জমি ৫০ থেকে ৮০ হাজার টাকায় লাগিয়ত দেওয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুঠির শিল্প (বিসিক) কুতুবদিয়ার লবণ প্রদর্শনীর পরিদর্শক জাকের হোছাইন বলেন, কুতুবদিয়ার সিংহভাগ জমিতে লবণ উৎপাদন শুরু করেছে চাষীরা। চলতি মৌসুমে দেশের লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ২৬ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন। লক্ষ্যমাত্রা পূরণে গত (৯ - ২৪ নভেম্বর) রবিবার পর্যন্ত অর্থাৎ ১৫ দিনে কুতুবদিয়ায় লবণ উৎপাদিত হয়েছে ১১শ মেট্রিক টন। এছাড়াও গত বছরের উৎপাদিত লবণ ১০ হাজার মে. টন এখনও বিক্রি করতে পারেনি চাষীরা।
যাযাদি/ এম