হাসিনার পতনের পর বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে ভারত সরকার। এতে বিরাট ক্ষতির মুখে পড়েছে কলকাতার হোটেল-মোটেল। বাংলাদেশি পর্যটকদের অভাবে বড় ধরনের লোকসান গুনছে কলকাতার বিভিন্ন হোটেল ও খুচরা দোকানের ব্যবসায়ীরা। অনেকে বলছেন, করোনা মহামারির পর এমন দশায় আর কখনো পড়তে হয়নি তাদের। কথা বলতে গিয়ে অনেকে কান্নায় ভেঙে পড়েন।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া জানিয়েছে, সেন্ট্রাল কলকাতার দুই বর্গকিলোমিটারজুড়ে শতাধিক হোটেল ও তিন হাজারেরও বেশি দোকান রয়েছে। পর্যটকনির্ভর এই বাণিজ্যিক এলাকা ‘মিনি বাংলাদেশ’ নামে পরিচিত। মূলত বাংলাদেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের প্রভাব বেশ বাজেভাবেই পড়েছে এই এলাকার ব্যবসায়।
কলকাতা হোটেল অ্যান্ড রেস্তোরাঁ মালিক অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী কমিটির সদস্য মনোতোষ সরকার জানান, জুলাই থেকে মার্কুইস স্ট্রিটে আমার হোটেলের ৩০ রুমের মধ্যে মাত্র চার থেকে পাঁচটিতে বাংলাদেশিরা থাকছেন। ছাত্র আন্দোলন ও শেখ হাসিনাকে হটানোর আগে ২৬ থেকে ২৮ রুমে বাংলাদেশি অতিথিরা থাকতেন।
মনোতোষ সরকার জানান, যেসব হোটেলে ১০ থেকে ১২টি রুম আছে সেগুলো অস্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কারণ তাদের মাত্র এক বা দুটি রুম বুক হচ্ছে। ২০২১ সালে করোনার সময় ভ্রমণে বিধিনিষেধ থাকার সময় যে অবস্থা হয়েছিল এখন ঠিক একই পরিস্থিতি চলছে।
চট্টগ্রামের রাজন বিশ্বাস জানান, আগে যখন তিনি কলকাতায় যেতেন তখন বাংলাদেশি পর্যটকে হোটেলগুলো ভরা থাকত। কিন্তু ভারত সরকার বাংলাদেশিদের নতুন ভিসা দেওয়া বন্ধ করে দেওয়ায় এই অবস্থা তৈরি হয়েছে। রাজন বলেছেন, আমার আগেই ভিসা ছিল। তাই কলকাতায় এসেছি। কিন্তু যারা এখন ভিসার জন্য আবেদন করছেন, যদি এটি জরুরি মেডিকেল ভিসা না হয়, তাহলে তাদের ভিসা ইস্যু করা হচ্ছে না। খুব সম্ভবত বাংলাদেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতির জন্য ভারত চিন্তিত। এ কারণে ভিসা ইস্যুতে তারা কঠোর হয়ে গেছে।
কলকাতার নিউমার্কেটে বাংলাদেশি পর্যটকদের সবচেয়ে বেশি আনাগোনা দেখা যায়। কলকাতার স্থানীয় মানুষের চেয়ে বাংলাদেশি পর্যটকরাই এখানে বেশি আসেন। কিন্তু এখন বাংলাদেশিরা না থাকায় নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীরা অনেকটাই আশাহত হয়ে পড়েছেন। তারা বলছেন যদি ভারত সরকার বাংলাদেশিদের ভিসা প্রদানে এমন কড়াকড়ি অব্যাহত রাখে এবং এটি কয়েক বছর চলে তাহলে তাদের এই ক্ষুদ্র ব্যবসা পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যাবে।
নিউ মার্কেটের চকো নাট নামের একটি দোকান কর্তৃপক্ষ জানায়, তাদের বিক্রি দিনে ৩৫ হাজার থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা কমে গেছে। তারা চকলেট, বাদাম, মশলা ও প্রসাধনী বিক্রি করে ও একচেটিয়াভাবে বাংলাদেশি গ্রাহকদের জন্য সরবরাহ করতেন।
দোকানটির মালিক মো. শাহাবুদ্দিন বলেন, শুধু মেডিকেল ভিসায় আসা কয়েকজন গ্রাহকই এখন আমাদের দোকানে আসেন। কিন্তু ভ্রমণকারী বা যারা নিউমার্কেট থেকে পণ্য কিনে ঢাকায় বিক্রি করতেন, তাদের আগমন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে।
১২৪ বছরের পুরনো প্রসাধনীর দোকান রয়্যাল স্টোরের পঞ্চম প্রজন্মের মালিক অজয় শ বলেন, পরিস্থিতি শুধু আমাদের দোকানের জন্য নয়, পুরো বাজারের জন্যই ভয়াবহ। ২০০৮-০৯ সালে নিউমার্কেটে স্থানীয় ক্রেতার সংখ্যা একেবারে কমে যায়। ওই সময় থেকে মার্কেটটি বাংলাদেশিদের মধ্যে জনপ্রিয় হওয়া শুরু করে। মার্কেটের প্রায় সব দোকান তখন তাদের চাহিদা ও পছন্দ অনুযায়ী পণ্য বিক্রি শুরু করে। কিন্তু বাংলাদেশে শেখ হাসিনা বিরোধী আন্দোলন এবং ভিসা ইস্যু সংক্রান্ত ঝামেলার পর থেকে ক্রেতার সংখ্যা কমে গেছে।
তিনি বলেন, আমরা আগে প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫ জন বাংলাদেশি ক্রেতা পেতাম। যারা একেকজন গড়ে ১৫ হাজার রুপি খরচ করতেন। কিন্তু এখন আমরা দিনে পাঁচজন বাংলাদেশিও পাই না। আর তারা তাদের খরচের পরিমাণ কমিয়ে ১০ হাজার রুপিতে নিয়ে গেছেন।
যাযাদি/ এস