এস আলম গ্রুপের মোট ঋণের পরিমাণ কমপক্ষে ১,২৫,০০০ কোটি টাকা। প্রতিবেদন অনুযায়ী, এসব ঋণের অধিকাংশই এস আলমের আত্মীয়স্বজন এবং তার এলাকা চট্টগ্রামের পটিয়ায় এস আলম গ্রুপের সঙ্গে সম্পর্কিত নামসর্বস্ব কাগুজে কোম্পানির নামে নেওয়া হয়েছে।
বিতর্কিত এস আলম গ্রুপকে ঘিরে নড়েচড়ে বসেছে বাংলাদেশের আর্থিক খাত। গেল ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন ও নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ক্ষমতা গ্রহণের পর এস আলম গ্রুপের সম্পদের পরিমাণ নিয়ে ওঠা প্রশ্ন এখন জাতীয় আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এছাড়া, এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদ বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করেছেন।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, এসব ঋণের অধিকাংশই এস আলমের আত্মীয়স্বজন এবং তার এলাকা চট্টগ্রামের পটিয়ায় এস আলম গ্রুপের সঙ্গে সম্পর্কিত নামসর্বস্ব কাগুজে কোম্পানির নামে নেওয়া হয়েছে।
ক্রমবর্ধমান চাপের মধ্যে নবনিযুক্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর আশ্বস্ত করেছেন যে, এস আলমের সম্পদ বিক্রি করে পাওনাদারদের অর্থ ফেরত দেওয়া হবে।
এখন প্রশ্ন হলো, এস আলম গ্রুপের সম্পদের পরিমাণ এবং এর মূল্য আসলে কত?
গ্রুপের ওয়েবসাইটে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, এস আলমের প্রায় দুই ডজন কোম্পানির মোট সম্পদের মূল্য প্রায় ১.৫ লাখ কোটি টাকা।
গ্রুপের সমস্ত সম্পদের মধ্যে রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড প্রপার্টিজ খাতের আর্থিক মূল্য সবচেয়ে বেশি; যার পরিমাণ ২৫,৪৫৪ কোটি টাকা। এরমধ্যে ২৮ ইউনিট জমি ও ভবন ঢাকা এবং চট্টগ্রামে অবস্থিত।
এছাড়া, এস আলমের রয়েছে ২১,০৯২ কোটি টাকা মূল্যের কয়লা-চালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং ২০,০০০ কোটি টাকারও বেশি সম্পদসহ আমদানি এবং বাণিজ্য খাত।
৭টি ব্যাংক, একটি নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং একটি বীমা কোম্পানিতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অংশীদারিত্ব রয়েছে এস আলম গ্রুপের; যার সম্মিলিত সম্পদের আনুমানিক মূল্য অন্তত ৪,০০০ কোটি টাকা।
যদিও, শিল্প বিশ্লেষকদের মতে, এস আলমের অনেক সম্পদই অতিমূল্যায়িত। যেমন— ২৮ ইউনিট জমি ও ভবনের মূল্য ২৫,০০০ কোটি টাকার বেশি হতে পারে না।
এ সম্পর্কে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, "প্রতারকরা প্রায়ই মিথ্যা তথ্য দিয়ে এবং মূল্য বেশি দেখিয়ে সম্পদ মর্টগেজ রেখে ঋণ নেয়।"
তিনি বলেন, "আমি বিশ্বাস করি, এস আলম গ্রুপের সম্পদ, যার মূল্য প্রায় ১.৫ লাখ কোটি টাকা বলে দাবি করা হয়েছে, তা অতিমূল্যায়িত। বিষয়টি উদ্বেগের।"
অন্যদিকে, ব্যাংক এবং নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে নেওয়া এস আলমের ঋণের পরিমাণ সম্পর্কে এখন পর্যন্ত না জানা গেলেও সংশ্লিষ্টদের অনুমান, এসব প্রতিষ্ঠান থেকে এস আলম গ্রুপের মোট ঋণের পরিমাণ কমপক্ষে ১,২৫,০০০ কোটি টাকা।
এস আলমের সম্পদ : রিয়েল এস্টেট এবং সম্পত্তি ২৫,৪৫৪ কোটি টাকা, কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র ২১,০৯২ কোটি টাকা, টেক্সটাইল এবং স্পিনিং ২১,৩৫০ কোটি টাকা, ভোজ্য তেল পরিশোধন কারখানা ১৬,৯৩২ কোটি টাকা, আমদানি এবং ব্যবসা ২০,১৬৯ কোটি টাকা, গ্যালভানাইজিং প্ল্যান্ট, ৩,৯৩৪ কোটি টাকা, ফ্ল্যাট রোলিং প্ল্যান্ট, ২,৬১২ কোটি টাকা, সিমেন্ট কারখানা ১,৩৪২ কোটি টাকা কাঁচা চিনি পরিশোধন কারখানা, ৮,৯১৯ কোটি টাকা, গম পেষণকারী উদ্ভিদ, ৮,৯১৯ কোটি টাকা, পলিপ্রোপিলিন ২৪৩ কোটি টাকা, যাত্রীবাহী বাস ৩৪৫ কোটি টাকা, ইলেকট্রনিক মিডিয়া, টেলিযোগাযোগ, ১৮৩ কোটি টাকা শেয়ার, স্টক, বেঞ্চার, বন্ডে বিনিয়োগ ২২৮ কোটি টাকা, ২৮ আগস্ট পর্যন্ত ইসলামী ব্যাংকের ২৮% শেয়ারের মূল্য ১,৯১৫ কোটি টাকা খ অন্য পাঁচটি ব্যাঙ্ক, একটি এনবিএফআই এবং একটি বীমার শেয়ারের মূল্য আনুমানিক ২,০০০ কোটি টাকা।
যাযাদি/ এস