সোমবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১

সড়ক পরিবহন সেক্টরের নৈরাজ্য এবং চাঁদাবাজি বন্ধ করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি

কাজী দ্বীন মোহাম্মদ, বিশেষ প্রতিনিধি
  ২৫ আগস্ট ২০২৪, ১৫:২০
ছবি: যায়যায়দিন

সড়ক পরিবহন সেক্টরের দীর্ঘদিনের নৈরাজ্য এবং চাঁদাবাজি বন্ধ করে একটি নিরাপদ এবং সুশৃঙ্খল পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে কাজ করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি।

শনিবার (২৪ আগস্ট) সমিতির আহ্বানে অনুষ্ঠিত একটি প্রেস ব্রিফিংয়ে সংগঠনের আহ্বায়ক মো. সাইফুল আলম এই প্রতিশ্রুতি দেন। এ সময় তিনি বলেন, "সরকারের পাশাপাশি আমাদেরকেও সড়কে নিরাপত্তা এবং শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে নিরলসভাবে কাজ করতে হবে।"

প্রেস ব্রিফিংয়ের শুরুতে সাইফুল আলম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন এবং আহতদের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেন।

তিনি বলেন, "শ্রদ্ধা জানাই সকল ছাত্র-জনতাকে, যারা দেশের স্বার্থে স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন এবং পরিবহন সেক্টরের দীর্ঘদিনের অনিয়ম ও স্বৈরাচারী নেতৃত্বের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন।"

ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির নতুন আহ্বায়ক কমিটির গঠন প্রসঙ্গে আলোচনায় উঠে আসে, কিভাবে ২০০৮ থেকে ২০২৪ সালের আগস্ট মাস পর্যন্ত ঢাকা এবং দেশের অন্যান্য অঞ্চলে পরিবহন সেক্টরে চাঁদাবাজি, দখল এবং অন্যান্য অনিয়ম চালু ছিল। এই নৈরাজ্যকর পরিস্থিতিতে সাধারণ পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা বিপুল ক্ষতির সম্মুখীন হন। দীর্ঘ সময় ধরে পরিবহন মালিক সমিতির নেতৃত্বে থাকা স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী চাঁদাবাজি এবং একক কর্তৃত্ব কায়েম করে রেখেছিল।

তবে, সম্প্রতি ১৪ আগস্ট একটি তলবী সভায় সাধারণ পরিবহন মালিকরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আদলে নতুন নেতৃত্ব স্থাপনের মাধ্যমে সেক্টরের অনিয়ম দূর করার সিদ্ধান্ত নেন। মোঃ সাইফুল আলমকে আহ্বায়ক করে একটি ৩৫ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটি পরিবহন সেক্টরের স্বচ্ছতা এবং চাঁদাবাজিমুক্ত পরিবহন সেবা নিশ্চিত করতে কাজ করবে।"

আহ্বায়ক কমিটির প্রথম সভায়, মোঃ সাইফুল আলমের সভাপতিত্বে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি নিম্নলিখিত সাত দফা প্রস্তাব গ্রহণ করে:

১. যানবাহনে চাঁদাবাজি বন্ধ এবং যাত্রীবান্ধব পরিবহন সেবা নিশ্চিত করা।

২. সকল বাস টার্মিনাল ও কোম্পানি চাঁদামুক্ত রাখার ব্যবস্থা গ্রহণ।

৩. যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ও নিরাপদ সড়ক গড়তে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ।

৪. সড়ক দুর্ঘটনা কমানোর জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ এবং সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া।

৫. মালিক-শ্রমিক, প্রশাসন এবং ছাত্র-জনতাকে সম্পৃক্ত করে যাত্রীবান্ধব নিরাপদ সড়ক গড়ার জন্য টার্মিনাল ও অঞ্চলে কাউন্সেলিং এবং মোটিভেশন সভার আয়োজন।

৬. চাঁদামুক্ত, ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ গড়ে তোলা।

৭. গাড়ি পরিচালনার সুষ্ঠতা নিশ্চিত করতে টার্মিনাল ও অঞ্চলভিত্তিক প্রকৃত মালিকদের নিয়ে কমিটি গঠন।

আহ্বায়ক মোঃ সাইফুল আলম জানান, এই নতুন কমিটির লক্ষ্য শুধুমাত্র চাঁদাবাজিমুক্ত সড়ক গঠন নয়, বরং জনকল্যাণমূলক পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলা। সাইফুল আলম বলেন, "আমরা বিগত দিনের অনিয়ম দূর করে জনবান্ধব পরিবহন ব্যবসা গড়ে তুলতে চাই। সর্বোপরি, আধুনিক, নিরাপদ, ও বৈষম্যহীন পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে আমাদের প্রতিশ্রুতি অপরিবর্তিত থাকবে।" ভুল তথ্যের প্রতিবাদে সাইফুল আলম উল্লেখ করেন যে, কিছু গণমাধ্যমে, বিশেষ করে প্রথম আলোতে মির্জা আব্বাসকে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির উপদেষ্টা হিসেবে জড়িত থাকার বিষয়ে ভুল তথ্য প্রকাশিত হয়েছে।

তিনি স্পষ্টভাবে জানান, "মির্জা আব্বাস ২০০১ সাল থেকে পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতির পদ ছেড়ে দিয়েছেন এবং তারপর থেকে তিনি সমিতির কোনো কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত নন।"

প্রেস ব্রিফিংয়ে সমিতির পক্ষ থেকে আশা প্রকাশ করা হয়, চাঁদাবাজিমুক্ত নিরাপদ এবং জনকল্যাণমূলক সড়ক পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সকল মালিক-শ্রমিক, প্রশাসন, প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়া, সুশীল সমাজ এবং ছাত্র-জনতা একত্রিত হয়ে কাজ করবে।

এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে সাইফুল আলম আরও বলেন, "আপনাদের উপস্থিতি আমাদেরকে উৎসাহিত করেছে। ভবিষ্যতে নিরাপদ ও চাঁদামুক্ত সড়ক পরিচালনায় আপনাদের সহযোগিতা কামনা করছি।"

এই সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন। ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির যুগ্ন আহ্বায়ক এম এ বাতেন, মোঃ রফিকুল হোসেন কাজল, অধ্যাপক ইকবাল হোসেন, সদস্য কাজী জোবায়ের মাসুদ, কামাল হোসেন প্রমুখ।

যাযাদি/ এসএম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে