রোববার, ০৭ জুলাই ২০২৪, ২৩ আষাঢ় ১৪৩১

চসিকের সর্ববৃহৎ আলোকায়ন প্রকল্প : ভারতের সাথে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষর শনিবার

কাউছার আলম, চট্টগ্রাম
  ০৪ জুলাই ২০২৪, ২৩:৫৫
আপডেট  : ০৪ জুলাই ২০২৪, ২৩:৫৭
ফাইল ছবি

করোনা মহামারি, তিনবার প্রকল্প মেয়াদ বৃদ্ধি এরপর অনুমোদন প্রক্রিয়ায় কিছুটা দীর্ঘসূত্রিতার অবসান ঘটিয়ে নানা চড়াই উৎরাই পেরিয়ে অবশেষে চট্টগ্রাম মহানগরীকে আলোকিত করতে ২৬০ কোটি ৮৯ লাখ ৮৭ হাজার টাকা ব্যয়ে এলইডি লাইটের একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)।‘মডার্নাইজেশন অব সিটি স্ট্রিট লাইট সিস্টেম অ্যাট ডিফারেন্ট এরিয়া আন্ডার চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন’ শীর্ষক প্রকল্পটির মাধ্যমে সড়কবাতির আলোয় নগরীকে আলোকিত করতে এ প্রকল্প হাতে নেয় চসিক।

শনিবার (৬ জুলাই) নগরীর হোটেল রেডিসন ব্লুতে এ প্রকল্প নিয়ে ভারতের সাথে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। প্রধান অতিথি হিসেবে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম ভারতের প্রতিনিধি দলের সাথে চুক্তি সাক্ষর করবেন। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘শাপার্জি পালনজি অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড’ এর সাথে চসিকের চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার কথা রয়েছে। আনুষ্ঠানিকতা শেষেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেয়া হবে এবং দ্রুত প্রকল্পের ভৌত কাজ শুরু হবে। স্বাধীনতার পূর্ব থেকে এ পর্যন্ত শুধুমাত্র সড়ককে আলোকিত করতে চট্টগ্রামে এত বড় প্রকল্প আগে কখনো পাননি বলে চসিক সূত্রে জানা গেছে।

বৃহৎ এ প্রকল্প নিয়ে চসিক সূত্রে জানা যায়, পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহার করে ট্রাফিক এবং পথচারীদের জন্য কার্যকর ও টেকসই সড়কবাতির আলোয় নগরীকে আলোকিত করার অংশ হিসেবে এ যাবৎ কালের চসিকের এতো বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেন। ২০১৯ সালের ৯ জুলাই একনেক সভায় এ প্রকল্পটির অনুমোদন দেয়া হয়। চট্টগ্রাম মহানগরীর ৪১ ওয়ার্ডের বিভিন্ন সড়কজুড়ে এলইডি লাইট লাগানোর এই প্রকল্প বাস্তবায়নে ভারত সরকার ঋণ দিচ্ছে ২১৪ কোটি ৪৬ লাখ ৮২ হাজার টাকা এবং সরকারি তহবিল (জিওবি) থেকে দেয়া হচ্ছে ৪৬ কোটি ৪৩ লাখ ৫ হাজার টাকা। প্রকল্পটির বাস্তবায়ন শেষ হলে সিটি কর্পোরেশনের বিদ্যুৎ বিল কমে আসবে প্রায় অর্ধেকে নেমে আসবে। এছাড়াও বাতি গুলো নিয়ন্ত্রণের জন্য ৫০০ টি সুইচের বদলে চারটি কেন্দ্রীয় সার্ভার স্টেশনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রন করা হবে। তাতেও প্রায় ১২ লাখ টাকারও বেশি সাশ্রয় হবে বলে। এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যে দক্ষিণ বাকলিয়া ওয়ার্ডের মিয়াখান সওদাগর পোল থেকে ইসহাক সওদাগর পোল পর্যন্ত সড়কের একপাশে এলইডি লাইট স্থাপনের জন্য খুঁটি বসানোর কাজ শুরু করে দিয়েছে চসিক।

চসিক সূত্রে আরো জানা গেছে, জ্বালানি দক্ষতা উন্নয়নে পারস্পরিক সহযোগিতা জোরদারের লক্ষ্যে বাংলাদেশের ‘টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ’ এবং ভারতের ‘এনার্জি ইফিসিয়েন্সি সার্ভিস লিমিটেড (ইইসিএল)’ এর সঙ্গে ২০১৭ সালে একটি সমঝোতা চুক্তি হয়। এর প্রেক্ষিতেই প্রকল্পটি গ্রহণ করে চসিক। প্রকল্পটিতে বাংলাদেশ সরকারের মাধ্যমে এলওসি–৩ (লাইন অব ক্রেডিট) এর আওতায় ৮২ দশমিক ২০ শতাংশ অর্থের যোগান দিবে ভারত। ঋণ হিসেবে দেয়া এ অর্থের পরিমাণ ২১৪ কোটি ৪৬ লাখ ৮২ হাজার টাকা। অবশিষ্ট ১৭ দশমিক ৮০ শতাংশ বা ৪৬ কোটি ৪৩ লাখ ৫ হাজার টাকা দিবে বাংলাদেশ সরকার। চুক্তি অনুযায়ী ভারতের এক্সিম ব্যাংক তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের শর্ট লিস্ট পাঠায়। প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে ‘এনার্জি ইফিসিয়েন্সি সার্ভিসেস লিমিটেড’, ‘সিগনিফাই ইনোভেশন্স ইন্ডিয়া লিমিটেড’ এবং ‘শাপর্জি পালনজি অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড’। শর্ট লিস্টের প্রতিষ্ঠানগুলোয় দরপত্রে অংশ নেয়। বাছাই শেষে ‘শাপার্জি পালনজি অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড’কে চূড়ান্ত করা হয়।

প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এ পর্যন্ত তিনবার প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়। ২০২৬ সালের ৩০ জন পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ রয়েছে। চলতি অর্থবছরে প্রকল্পের আওতায় প্রতি ওয়ার্ডে আনুমানিক পাঁচ কিলোমিটার করে ২০৫ কিলোমিটার সড়কে আলোকায়নের কাজ সম্পাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

গৃহীত প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহার করে ট্রাফিক এবং পথচারীদের জন্য কার্যকর ও টেকসই সড়ক বাতির আলোক সুবিধা নিশ্চিত করা যাবে। রাত্রিকালীন শহরের সৌন্দর্য, ব্যবসায়িক সুবিধা ও সামাজিক নিরাপত্তা বৃদ্ধি পাবে। একইসঙ্গে কমবে কার্বন নির্গমন। এছাড়া শক্তি শোষণ সম্পর্কিত পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ট্রাফিক ও পথচারীর জন্য রাস্তায় আলোর সুবিধা নিশ্চিত হবে। পাশাপাশি স্মার্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমে সড়ক বাতির আলো নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।

এদিকে, প্রকল্পের ডিপিপি অনুযায়ী চসিক আওতাধীন নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডের প্রতিটিতে ৫ ফুটের বেশি প্রশস্ততার ১০ কিলোমিটার সড়ক এলইডি বাতির আওতায় আসবে। বিদ্যুৎসাশয়ী এ বাতি পাঁচ বছর পর্যন্ত জিরো রক্ষাণাবেক্ষণ খরচে চলবে। ওয়ার্ডগুলোতে ৪০, ৬০, ১০০ ও ২৫০ ওয়াটের মোট ২০ হাজার ৬০০টি এলইডি বাতি, ২০ হাজার ২৬৭টি জিআই পোল এবং ৫০৭টি কন্ট্রোল সুইচ বক্স বসানো হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে বিদ্যুৎ বিল কমে যাওয়াসহ বাতি নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয়ভাবে চারটি সার্ভার স্টেশন স্থাপন করা হবে। পোলসহ (কেবল, সার্ভার) প্রতিটি এলইডি বাতি স্থাপনে ব্যয় ধরা হয় ১ লাখ ৯ হাজার টাকা।

অপরদিকে নগরবাসীরা বলছেন, এখনো চসিকের বেশিরভাগ সড়ক আলোস্বল্পতায় ভুগছে। ভারত সরকারের এ প্রকল্পের আওতায় এবার যদি অন্ধকারাচ্ছন্ন সড়ক আলোকিত হয় তাহলে পুরো মহানগরী আলোকিত হবে।

সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, চসিকের ইতিহাসের এ যাবৎ কালের শুধু মাত্র আলোকায়নের জন্য এত বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন কখনো করা হয়নি। এত বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করব সেটা তো আমার না এমনকি চট্টগ্রামের মানুষেরও চিন্তা চেতনায় পর্যন্ত ছিল না। এ প্রকল্পের আওতায় প্রতি ওয়ার্ডে ৫-১০ কিলোমিটার সড়কে আধুনিক এলইডি বাতি দ্বারা আলোকায়ন করা হবে। থাকবে স্মার্ট কন্ট্রোল সুইচ সিস্টেম। জিআই পোল বসানো হবে। প্রকল্পের কাজ শেষ হলে শহরের প্রধান সড়ক থেকে অলিগলি পর্যন্ত আলোকিত হবে এবং ট্রাফিক ও পথচারীদের জন্য কার্যকর ও টেকসই সড়কবাতির সুবিধা নিশ্চিত হবে। প্রকল্পের আওতায় স্থাপন করা বাতিসমূহ ৫ বছর মেরামত খরচ সংশ্লিষ্ট স্থাপনকারী প্রতিষ্ঠান বহন করবে বিধায় কর্পোরেশনের রক্ষণাবেক্ষণ খাতে কোনো অর্থ ব্যয় হবে না।

প্রকল্প পরিচালক ও চসিকের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) ঝুলন কুমার দাশ বলেন, এ প্রকল্পটি অনুমোদনের পর দুই বছর করোনা মহামারীর কারণে সবকিছু থমকে ছিল। এরপর অনুমোদন প্রক্রিয়ায় কিছুটা দীর্ঘসূত্রিতা হয়েছে। যেহেতু এটা দুই দেশের প্রকল্প, তাই প্রতিটি কাজই দুই দেশেই অনুমোদন হয়ে এসেছে। এখানে দুই দেশের সরকারের অনুমোদনের বিষয় জড়িত। সেই হিসেবে অনুমোদন প্রক্রিয়ায় সময় একটু বেশি লেগেছে। এখন অপেক্ষা দৃশ্যমান বাস্তবায়নের পথেই।

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে