রাজধানীর হাটে বাড়ছে পশু, ক্রেতা কম

প্রকাশ | ১৪ জুন ২০২৪, ২০:৩২

যাযাদি ডেস্ক
ছবি-সংগৃহীত

পবিত্র ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে রাজধানী ঢাকায় কোরবানির পশুর হাটগুলোতে শুক্রবার পর্যন্ত বেচাকেনা সেভাবে জমে ওঠেনি। এ দিন অনেক ক্রেতাই হাটে ঘুরে গরু, ছাগল ও মহিষসহ বিভিন্ন পশু দেখে দাম যাচাই করেছেন। তাদের কেউ কেউ ‘ব্যাটে-বলে’ দাম মিলে যাওয়ায় গরু কিনে বাড়ি ফিরেছেন। তবে শনিবার থেকে হাট পুরোপুরি জমজমাট হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে হাটগুলোতে কোরবানির পশু নিয়ে এসেছেন ব্যাপারীরা। হাটে ছোট ও মাঝারি আকারের গরুর চাহিদা বেশি। অন্যদিকে ঢাকার অধিকাংশ বাসিন্দাদের কোরবানির পশু রাখার জায়গা নেই। সেইসঙ্গে পশুটির যত্ন করার লোকের অভাবের কারণে অনেকেই ইচ্ছা থাকলেও আগে পশু কিনতে পারছেন না। তারা ঈদের দু’দিন বা আগের দিন পশু কিনবেন বলে জানিয়েছেন। 

শুক্রবার দুপুর সোয়া ২টার দিকে সরেজমিনে ঢাকার গাবতলী পশুর হাটে দেখা গেছে, বিক্রেতারা পশুকে ভালো করে পছন্দের খাবার খাওয়াচ্ছেন। সাবান-শ্যাম্পু আর পানি দিয়ে ধুয়েমুছে পরিষ্কার করছেন পশুর শরীর। আবার কোন কোন বিক্রেতাকে কোরবানির পশুকে নানা সাজে সাজাতে দেখা গেছে। 

এমনই এক বিক্রেতা ইসমাইল হোসেন বলেন, আজ শুক্রবার, আশা করছি, বিকালের মধ্যেই হাট জমবে। তাই বিক্রির জন্য আনা পশুগুলোকে ধুয়েমুছে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে সাজিয়ে রাখছি। যাতে সহজেই ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যায়। 
মাঝারি সাইজের তিনটি গরু নিয়ে এসেছেন ঝিনাইদহ থেকে। তিনি বলেন, ‘হাটে এসেছি দুই দিন ধরে। দুই দিনে তেমন কোনো দরদাম হয়নি। যা হয়েছে, সেই দামে বিক্রি করলে পোষাবে না। যে কারণে ‘বেখাপ্পা’ দাম চাইছি না। কারণ বেশি দাম চাইলে, ক্রেতা দাম বলা তো দূরের কথা, শুনেই সোজা হাঁটা দেন। যে কারণে কোন কোন গরু ভেদে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত হাতে রাখছি। তবে আমার গরু যেহেতু মাঝারি সাইজের তাই দাম বাড়তি হাতে রেখেছি ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা। বৃহস্পতিবার থেকেই অধিকাংশ অফিস আদালত ছুটি হয়ে গেছে। তাই শুক্রবার বা শনিবার অবশ্যই কোরবানির পশু বেশি বিক্রি হবে বলে আশা করছি।’ 

পাশেই একটি মাঝারি আকারের গরু বিক্রি হলো। গরুটিকে ছোট পিকআপে তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ক্রেতা রুমেল আহমেদ বলেন, ভাই গরুটি ১ লাখ ৮০ হাজার টাকায় কিনেছি। পশুর দাম সহনীয় পর্যায়ে এসেছে। 

তিনি বলেন, গরুটি দুই দিন আগে বাজারে এসেছে। গরুটি পছন্দ হয় আমাদের। কিন্তু দামে মিলছিল না। বিক্রেতা দেশীয় জাতের গরুটি আড়াই লাখ টাকায় বিক্রি করবেন বলে ঠিক করেছিলেন। শেষ পর্যন্ত আশাতীত ক্রেতা না পেয়ে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। আমরাও আনন্দের সঙ্গে বাজেটের মধ্যে পেয়ে গেছি। তাই এখন খুশি মনে বাড়ি ফিরছি। বাড়িতে গরু রাখার জায়গা আছে। তাই আগাম কিনলাম। বাচ্চারা দেখে খুশি হবে। 

গরুটির বিক্রেতা সবুর বলেন, এর চেয়ে বেশি দাম আর হয়নি। এছাড়া গরু বিক্রি করে দেওয়ার আরও কিছু কারণের কথাও জানিয়ে তিনি বলেন, প্রতিদিন গরুটির পেছনে এক থেকে দেড় হাজার টাকা খরচ আছে। আমাদের থাকা খাওয়া আছে। এছাড়া হাটে গরু তোলার পর থেকেই প্রতিদিন শুধু গরু নয় প্রায় প্রতিটি কোরবানির পশুরই ওজন কমতে থাকে। হাটে তোলার পর কোরবানির পশুকে যতটা সতেজ দেখা যায়, দিন যত যেতে থাকে, পশুর সতেজতা তত নষ্ট হতে থাকে। প্রতিটি গরুর ওজন কম করে হলেও দেড় থেকে দুই কেজি করে কমতে থাকে। এছাড়া ভ্যাপসা গরমে অনেক পশুই অসুস্থ হয়ে পড়ছে। অনেকেই সঙ্গে করে টেবিল ফ্যান এনেছেন। অনেকে আবার হাত পাখা দিয়ে বাতাস করছেন। 

তিনি আরও বলেন, হাটে গরু তোলার পর থেকে পশু আর ঘুমাতে পারে না। কারণ ক্রেতা রাত দিন চব্বিশ ঘণ্টা এসে দরদাম করতে থাকেন। আর ক্রেতাকে কোরবানির পশু না দেখিয়ে কোনো উপায় থাকে না।  গাবতলী হাটে প্রবেশের পর দ্বিতীয় সারিতেই চোখে পড়বে তিনটি বিশাল আকারের গরু। কাছে গিয়ে পরিচয় দিয়ে জানতে চাইলে গরুর মালিক আওলাদ হোসেন জানান, গরু তিনটি লালন পালন করা হয়েছে সাভারের তামান্না ডেইরি ফার্মে। দুই দিন ধরে হাটে তুলেছেন। একজন ক্রেতাও একটি গরুরও দাম করেননি। আকারে ছোট গরুটির দাম চাওয়া হচ্ছে ১৫ লাখ টাকা। আরেকটি ২০ লাখ টাকা। বড় সাইজের গরুটির দাম চাওয়া হচ্ছে ২৫ লাখ টাকা। 

তিনি বলছিলেন, দাম শুনেই ক্রেতারা সোজা অন্যদিকে চলে যাচ্ছেন। ন্যূনতম দাম পর্যন্ত করছেন না। যে কারণে খানিকটা বিপাকেই রয়েছেন তিনি। এসব গরু কোনোভাবেই আর লালন পালন করা সম্ভব না। তিনটি গরুর জন্য চারজন লোক এসেছেন। গরুসহ তাদের প্রতিদিন প্রায় ৭ হাজার টাকা করে খরচ হচ্ছে। শুক্রবার ও শনিবারের মধ্যেই দরদাম যাই হোক গরু বিক্রি হয়ে যাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। 

গাবতলী হাটে ঢুকতেই ডান দিকের দ্বিতীয় অংশের প্রথম সারিতেই চোখে পড়ল বিশাল আকারের একটি কালো গরু। দেখা গেল গরুটিকে গোসল করানো হচ্ছে। তারা সারা শরীর ধুয়েমুছে দিচ্ছেন দু’জন। গরুটি দেখভাল করার জন্য সঙ্গে এসেছেন তিনজন। কোরবানির ওই গরুটির মালিক রাকিব হোসেন সুমন। নিজের পরিচয় দিয়ে গরু সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, শুক্রবার ভোরে গরুটি হাটে তোলা হয়েছে। তাদের বাড়ি ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশাল থানাধীন ধানখোলা গ্রামে। গরুটি ফ্রিজিয়াম জাতের। দাম চাচ্ছেন ৩০ লাখ টাকা। ভালোবেসে গরুটির নাম দিয়েছেন ‘কালো মানিক’। তিনি বলেন, হাট আসলে সেই অর্থে জমেনি। আশা করছি, শুক্রবার বিকাল থেকে শনিবার দিবাগত রাত পর্যন্ত পুরোপুরি হাট জমে যাবে। 

গাবতলী পশুর হাটের হাসিল আদায়কারী শাকিল আহমেদ বলছিলেন, গত দুই ঘণ্টায় তিনি ১২টি কোরবানির পশুর হাসিল কেটেছেন। এর মধ্যে সাতটি গরু, বাকিগুলো খাসি। প্রতিটি পশুর দাম ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকার মধ্যে। এবার ছোট ও মাঝারি সাইজের গরুর চাহিদা বেশি। সব  সময়ই এমন সাইজের গরুর চাহিদা একটু বেশিই থাকে। তবে এবার অন্যান্য বছরের তুলনায় এ ধরনের গরুর চাহিদা অনেক বেশি। 


যাযাদি/ এসএম