রোববার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

সদরঘাটে কর্মস্থলগামী মানুষের চাপ বাড়লেও নেই ভোগান্তি

কেরানীগঞ্জ (ঢাকা) প্রতিনিধি
  ১৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৬:২৭
সদরঘাটে কর্মস্থলগামী মানুষের চাপ বাড়লেও নেই ভোগান্তি

ঈদুল ফিতর ও বাংলা নববর্ষ উদযাপন শেষে করে ঘরমুখো মানুষের চাপ বেড়েছে রাজধানীর ঢাকার সদরঘাটে। দীর্ঘ ৬ দিনের ছুটি শেষে প্রথম কর্মদিবস সোমবার (১৫ এপ্রিল) দক্ষিণাঞ্চল থেকে লঞ্চযোগে আসা মানুষের চাপ গত দুই দিনের চেয়ে বেড়েছে। সে হিসেবে রাজধানীতে ফিরে আসা মানুষের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে।

এদিন রাজধানীর সদরঘাট ঘুরে এবং বাংলাদেশ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুসারে দেখা যায়, ৮টা পর্যন্ত সদরঘাটে ৭৮টি লঞ্চ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন গন্তব্য থেকে ঢাকায় এসেছে। ঘরে ফেরা মানুষের চাপ সামলাতে প্রায় সব লঞ্চ যাত্রী রেখে আবার যাত্রী আনতে দ্রুত টার্মিনাল ত্যাগ করছে।

বিআইডব্লিটিএ একসূত্র জানায়, ঢাকা-বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের ৪০টি নৌরুটে সরাসরি দিন ও রাত্রিকালীন সার্ভিস মিলিয়ে শতাধিক লঞ্চ ঢাকা-বরিশাল-ঝালকাঠি-পটুয়াখালী-বরগুনা-ভোলা রুটে সরাসরি যাতায়াত করছে।

তবে বিশেষ লঞ্চগুলো অতিরিক্ত যাত্রীদের চাহিদা বিবেচনা করে চলাচল করে। সাধারণ সময়ে লঞ্চগুলো বাই রোটেশন তালিকা অনুসারে চলাচল করে বলে জানা গেছে। সুন্দরবন-১০ সুপারভাইজার হাশেম খান জানান, লঞ্চগুলোতে ডেকের যাত্রী সংখ্যাই বেশি৷ নিম্ন ও মধ্যম আয়ের পরিবারগুলোই লঞ্চে যাচ্ছে।

সড়ক পথের চেয়ে তুলনামূলক ভাড়া কম ও যাত্রাপথ আরামদায়ক হওয়াতেই লঞ্চে যাত্রীর চাপ বাড়ছে বলে জানান তিনি। তিনি জানান, খুব সকাল থেকে এ পর্যন্ত ৭৮টি লঞ্চ ঢাকায় এসেছে। যেখানে গতকাল একই সময়ে ৯১টি লঞ্চ রাজধানীতে এসেছিল।

আজ সোমবার সকালে আসা প্রায় সকল লঞ্চ ঢাকায় যাত্রী রেখে দ্রুত টার্মিনাল ত্যাগ করেছে। লঞ্চগুলো হলো- এমভি সুন্দরবন-১৬, মানামী, অ্যাডভেঞ্জার- ১ ও ৯, সুন্দরবন-১০ ও ১৪, প্রিন্স আওলাদ, কুয়াকাটা-২, প্রিন্স রাসেল ৫, শুভরাজ-৯, সম্রাট ও প্রিন্স কামাল ইত্যাদি। বেশ কয়েকটি স্পেশাল সার্ভিস বরিশাল থেকে ঢাকা এসেছে।

তিনি আরও বলেন, টানা ৬দিনের ছুটি ছিল, এ কারণে মানুষ ধাপে ধাপে ফিরছে। গত দুইদিনের তুলনায় রাজধানীতে ফেরা মানুষের চাপ কিছুটা বেড়েছে। চলতি সপ্তাহের মধ্যে রাজধানী অধিকাংশ মানুষ কাজের টানে ফিরে আসবে। ভোলাগামী যাত্রী সুজন মাতুব্বর বলেন, আমরা লঞ্চের নিয়মিত যাত্রী। ঈদ উপলক্ষে অফিস ছুটি শেষ ঢাকা ফিরছি। পরিচিত হওয়ায় কেবিন বুকিং করতে কোনো সমস্যা হয়নি।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিপন উদ্দিন বলেন, ঈদের ছুটি কাটাতে গ্রামের বাড়ি বরিশালে গিয়েছিলাম। আজ ঢাকায় ফেরা মানুষের চাপ থাকলেও তা খুব বেশি নয়। পদ্মা সেতু হওয়ার কারণে লঞ্চের যাত্রী কমেছে। তারপরও অতিরিক্ত চাপ থাকায় আমাদের সকাল সাড়ে ৫টায় টার্মিনালে রেখে লঞ্চটি পুনরায় বরিশালের উদ্দেশ্যে ছেড়ে গেছে। এমডি ফারহান-৮ লঞ্চে পিরোজপুরে থেকে ঢাকা আসা রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা ফাহাদ শিকদার।

তিনি বলেন, ঘাটে ভিড় এবং যাত্রী বেশি থাকলেও সময়মতো লঞ্চ ঢাকা পৌঁছে। অন্যদিকে যাত্রী বেশি হওয়ায় অনেকেই লঞ্চে উঠতে পারেননি। তাই পরবর্তী লঞ্চের জন্য টার্মিনালে অপেক্ষা করছেন। পরিবার নিয়ে এই অপেক্ষাটা অনেকের জন্য ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

কর্ণফুলী-১১ লঞ্চের চালক আবু হাসান বলেন, এবারের ঈদে আজকেই ঢাকা ফেরার সবচেয়ে বেশি যাত্রী হয়েছে। তবে গত ঈদের মতো যাত্রী এখনও দেখছি না। লঞ্চ মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সালাম খান বলেন, যাত্রীর চাপ কিছুটা বেড়েছে। ছুটি শেষ সময়ে একটু ভিড় বাড়বেই। তবে সেটা আশানুরূপ নয়। অন্যবার এ সময়ে অতিরিক্ত যাত্রীর চাপ সামাল দিতে রোটেশন ভেঙে দিয়ে স্পেশাল লঞ্চ চলাচল করত। আর এ বছর নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শিডিউল লঞ্চই যাত্রী বোঝাই হচ্ছে না। আশা করছি শেষ পর্যন্ত যাত্রীর চাপ আরেকটু বাড়বে।

বিআইডব্লিটিএর বাদিং সারেং আলমগীর হোসেন গণমাধ্যমে বলেন, আজকে আসা প্রায় সকল লঞ্চ ঢাকায় যাত্রী রেখে দ্রুত টার্মিনাল ত্যাগ করেছে। বেশ কয়েকটি স্পেশাল সার্ভিস বরিশাল থেকে ঢাকা এসেছে। তিনি বলেন, লম্বা ছুটি ছিল।

এ কারণে মানুষ ধাপে ধাপে ফিরছে। গত দুদিনের তুলনায় রাজধানীতে ফেরা মানুষের চাপ আজ কিছুটা বেড়েছে। চলতি সপ্তাহের মধ্যে রাজধানীর অধিকাংশ মানুষ কাজের টানে ফিরে আসবে।

বিআইডব্লিউটিএর নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের ঢাকা নদীবন্দরের যুগ্ম পরিচালক ইসমাইল হোসেন বলেন, নদীপথে চলাচলকারী যাত্রীদের সেবা ও নিরাপত্তার জন্য বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা কাজ করছেন। টার্মিনালে যাত্রী উপস্থিতির ওপর নির্ভর করে বিশেষ লঞ্চ সার্ভিসের ব্যবস্থা করা হবে। কোনো অবস্থাতেই লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী বহন ও যাত্রী হয়রানি বরদাশত করা হবে না।

নৌ পুলিশ সদরঘাট থানার পরিদর্শক আবুল কালাম বলেন, যাত্রীদের নিরাপত্তা ও যাত্রী হয়রানি রোধে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এছাড়া সড়ক হকারমুক্ত করতে প্রতিনিয়ত অভিযান চালানো হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, সদরঘাট টার্মিনাল এলাকা ও বুড়িগঙ্গা নদীতে নৌ পুলিশের পাশাপাশি র‍্যাব সদস্যরা নিয়োজিত রয়েছেন। পাশাপাশি আনসার সদস্যরাও কাজ করছেন।

যাযাদি/ এম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে