বোরোর ধানের ফলন ভালো

উপকূলের শ্যামনগরে কৃষকের মুখে হাসি

প্রকাশ | ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ১০:৫৮

শ্যামনগর (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি
ছবি: যায়যায়দিন

উপকূলের সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলায় এবার বোরো ধানের ফসল ভালো হওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। বোরো চাষিদের দাবী ধানের ন্যায্য মূল্য পেলেই তারা খুব খুশি।

ধান উৎপাদনের অনুকুল পরিবেশ থাকায় বোরোর ফসল ভাল হওয়ার কারণ বলে কৃষকরা জানিয়েছেন। লবনাক্ত এলাকা শ্যামনগরে মিষ্টি পানির প্রাপ্যতা বেশি হলে বোরো আবাদ আরও বেশি হত বলে উপজেলা কৃষি অফিস মত প্রকাশ করেন।

উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে প্রকাশ উপজেলায় চলতি বছরে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে ২৭১৫ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে হাইব্রিড আবাদ ৯১৫ হেক্টর ও উফসি আবাদ ১৮০০ হেক্টর। গতবারে আবাদ হয় ২৩১০ হেক্টর। গতবার হাইব্রিড আবাদ ছিল ৮১০ হেক্টর ও উফসি ১৫০০ হেক্টর। জানা যায় প্রতিবছর বোরো ধানের আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে ।

বোরো ধানের ফলন হয়েছে হাইব্রিড চাউলে প্রতি হেক্টরে ৪.৮ মেট্রিকটন ও ধানে ৭.২ মেট্রিকটন। উফসি ফলন হয়েছে চাউলে ৪.০ মেট্রিকটন ও ধানে ৬.০ মেট্রিকটন। বিঘাপ্রতি মণে ধান হয়েছে হাইব্রিড ২৪ মণ ও উফসি ২০ মণ।

উপজেলার আবাদকৃত বোরো ধানের জাত ছিল হাইব্রিড এসএল-৮, মদিনা-১, ছক্কা, তেজগ্লোড ও ৭৭৭। উফসি জাত ছিল ব্রিধান-২৮, ব্রিধান-৬৭, ব্রিধান-৭৪, ব্রিধান-৮৯, ব্রিধান-১০০, বিনাধান-১০ ও বিনাধান-২৪।

এবার বোরো আবাদ বেশি হয়েছে শ্যামনগর ইউপিতে ও কম হয়েছে গাবুরা ইউপিতে। ইউনিয়ন অনুযায়ী ১২টি ইউপিতে বোরো আবাদের পরিমাণ হল ভূরুলিয়ায় ১৯৬ হেক্টর, কাশিমাড়ী ৩২৯ হেক্টর, শ্যামনগর ৩৫৯ হেক্টর, নুরনগর ১৭২ হেক্টর, কৈখালী ৩২৭ হেক্টর, রমজাননগর ১৩৮ হেক্টর, মুন্সিগঞ্জ ২১৯ হেক্টর, ঈশ^ীরপুর ২০৪ হেক্টর, বুড়িগোয়ালিনী ১৯৮ হেক্টর, আটুলিয়া ২৮৫ হেক্টর, পদ্মপুকুর ২৩৪ হেক্টর ও গাবুরা ৫৪ হেক্টর।

উপজেলার ভূরুলিয়া ইউপির বোরো চাষি লিয়াকত আলী বলেন দুই বিঘা জমিতে বোরো ধানের চাষ করেন। তিনি ফসল পেয়েছেন বিঘা প্রতি ২২ মণ। গতবারও তিনি বোরো ধান চাষ করেছিলেন এবার গতবারের তুলনায় ভাল ফলন পেয়েছেন বলে জানান। তবে তিনি অভিযোগ করে বলেন ইঁদুরের উপদ্রব কম থাকলে আরও বেশি ফলন পাওয়া যেতে।

মুন্সিগঞ্জ ইউপির জেলেখালী গ্রামের বোরো চাষি প্রশান্ত পরামান্য বলেন তিনি ৪ বিঘা জমিতে বোরো ধানের চাষ করে সর্বমোট ৮৭ মণ ধান পেয়েছেন। উভয় চাষি বোরো ধানের ফলন ভাল হওয়ার কারণ হিসাবে বলেন আবহাওয়া ভাল থাকা ও সেচ সুবিধা থাকা। তারা আরও বলেন দিনে দিনে চিংড়ী চাষের থেকে চাষিরা বেরিয়ে এসে বোরো ও আমন ফসল উৎপাদনে ঝুঁকে পড়ছে। শ্যামনগরে এবার আমন ধানের আবাদ হয়েছিল ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে। তবে আমন ফসলের চেয়ে বোরো ধানের ফলন বেশি পেয়েছেন বলে জানান।

শ্যামনগর কৃষি অফিসের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মহিউদ্দিন ও সুমন মন্ডল বলেন এবার বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে বলা যেতে পারে। তারা বলেন বোরো ধানের ফসল কৃষকরা মাঠ থেকে ঘরে তুলতে সক্ষম হয়েছেন ভাল ভাবে। মাঠে আছে আর মাত্র ১৫ ভাগ ধান যে গুলি খুব শিগগির ঘরে উঠবে।

উপজেলা কৃষি অফিসার নাজমুল হুদা বলেন সঠিক সময়ে সেচ সুবিধা, সার বিতরণ, কৃষি অফিসের পরামর্শ সহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা থাকায় বোরো ধানের ফলন বেশি পেয়েছেন বোরো চাষিরা।

শ্যামনগরের বিভিন্ন এলাকার বোরো চাষিরা জানান উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে খালগুলিতে মিষ্টি পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হলে বোরো আবাদ সহ অন্যান্য ফসলের আবাদ আরও বৃদ্ধি পাবে। কৃষি ফসলের আবাদ বৃদ্ধির সাথে সাথে খাদ্য স্বয়ং সম্পূর্ণ হবে। কৃষি অফিস সুত্রে জানা যায় বর্তমানে পুনঃ খনন যোগ্য খালের সংখ্যা ৪৩টি। উপজেলায় খাল রয়েছে ১২০টির অধিক।

উপজেলার কৃষকরা বলেছেন, ‘ফসল ভাল হয়েছে এবার দাম ভাল পেলে আমরা খুশি ‘