কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীতে ব্যাপকহারে বেড়েছে বাণিজ্যিকভাবে বস্তায় আদা চাষ। বাড়ির আনাচে-কানাচে, সুপারি বাগান, কলা বাগান, বাড়ির ছাদ, অনাবাদি ও পতিত জমিসহ বিভিন্ন জায়গায় বস্তায় মাটি ভরাট করে কিংবা টবে আদা চাষে আগ্রহ বেড়েছে কৃষকসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের।
কৃষকরা বলছেন সেচ, কীটনাশক ও সার প্রয়োগসহ বস্তা প্রতি উৎপাদন ব্যয় হয়েছে ৪০ থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত। অল্প পরিচর্যা আর উৎপাদন খরচের তুলনায় লাভ বেশি হওয়ায় আদা চাষ করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন তারা।
এছাড়াও বিয়ে, জন্মদিন, কুলখানি, আকিকাসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের তরকারি ও খাবারের স্বাদ বাড়াতে মশলা জাতীয় এই আদার ব্যবহার করে থাকেন রাঁধুনীরা। এমনকী বিভিন্ন রোগে ওষুধী হিসেবেও ব্যবহার করা হয় এটি। তাই বাজারে আদার চাহিদাও অনেক বেশি। ফলে আদা চাষে উৎসাহ বাড়ছে দিনে দিনে। আদা চাষের ফলে বেকারদের কর্মসংস্থান তৈরির পাশাপাশি স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এসব আদা যাবে দেশের বিভিন্ন জেলায়।
গাগলা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খাইরুল আলম জানান, গত বছর দৈনিক ভোরের দর্পণ ও বায়ান্নর আলোসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্য এবং ইউটিউবে আদা চাষের সাফল্য দেখে আগ্রহী হয়ে ওঠেন তিনি। শেষে এ বছর নিজেই সুপারী বাগানের ভেতর ৯০০ বস্তায় আদা চাষ করেছেন।
তিনি জানান ফলন ভালো হয়েছে। প্রতি বস্তায় অনেক লাভের আশা করছি। কৃষক বেলাল হোসেন জানান তিনিও বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম ও ইউটিউবে দেখে তার বন্ধু শফিকুল মিলে এ বছর নাগেশ্বরী ব্যাক মোড় সংলগ্ন জায়গায় প্রাথমিকভাবে ৩ হাজার বস্তায় আদা চাষ করেছেন। ফলন ভালো হয়েছে তাই ভালো লাভের আশা তাদের। পরের বছর আরও বেশি করে আদা চাষের পরিকল্পনাও রয়েছে এই দুই বন্ধুর।
এদিকে রায়গঞ্জ ইউনিয়নের বড়বাড়ী এলাকার আজিবর রহমান একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকুরি করতেন। চাকুরি ছেড়ে দিয়ে বাড়িতে ফিরলে বেকার হয়ে যান তিনি। পরে বাড়ির পাশে সুপারি বাগানের পাশে ৭৫০ বস্তায় আদা চাষ করেছেন তিনি। এতে বস্তা ক্রয়, মাটি ভরাট, সার প্রয়োগসহ সবমিলে তার খরচ হয়েছে বস্তা প্রতি ৪০ টাকা। এ বছর প্রতি বস্তায় ১ থেকে ২ কেজি পর্যন্ত আদা পাবেন বলে প্রত্যাশা তার।
পার্শ্ববতী শহিদুল ইসলামও তার সুপারি বাগানে সাড়ে ১২শ বস্তায় আদা চাষ করেছেন। তিনি জানান, আদা চাষে পরিশ্রমও, খরচও কম। আশানুরুপ ভালো ফলন হয়েছে। তবে কিছু বস্তায় আদাগাছে ছত্রাকের আক্রমণ হয়েছে তার। এজন্য কৃষি অফিসের সহায়তা কামনা করেছেন তিনি।
উপজেলা কৃষি অফিসার মো. শাহরিয়ার হোসেন বলেন, এ বছর উপজেলায় ব্যপকহারে বস্তায় আদার চাষ হয়েছে। চলতি মৌসুমে প্রায় ৩০ হাজার বস্তায় আদার চাষ হয়েছে। অল্প খরচ আর অল্প পরিচর্যার মাধ্যমে আদার ফলন ভালো হওয়ায় দিনদিন এই মশলা জাতীয় ফসল চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের।
মসলা জাতীয় এই আদা চাষে রোগবালাই নিরাময়সহ যাতে আদার ফলন ভালো হয়ে কৃষকরা লাভবান হয় সে ব্যাপারে কৃষি বিভাগের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাগণ সার্বক্ষণিক মাঠ পর্যায়ে গিয়ে কৃষকদেরকে পরামর্শ দিচ্ছেন।
যাযাদি/ এআর