সবজির দাম চড়া : নাভিশ্বাস ক্রেতাদের

প্রকাশ | ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ১৮:০৯ | আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ১৮:২০

চট্টগ্রাম ব্যুরো
ছবি: যায়যায়দিন

চট্টগ্রাম নগরের কাঁচাবাজারে উত্তাপ গত সপ্তাহের মতোই বহাল আছে। ডিম, মাছ, মাংস সবকিছুর দাম আগের সপ্তাহের মতোই আছে। এছাড়া সবজির অতি চড়া দরে স্বস্তির বদলে কাঁচা বাজারে নাভিশ্বাস নগরবাসীর।

ব্যবসায়ীদের দাবি, তাদের আড়ত থেকে বেশি দামে সবজি কিনতে হচ্ছে, তাই বিক্রিও করছেন বেশি দামে। আর সম্প্রতি হওয়া বন্যার প্রভাবও পড়েছে সবজির দামের ওপর।

শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) নগরের চৌমুহনী, রিয়াজউদ্দিন বাজার, অক্সিজেন, দুই নম্বর গেট, চকবাজার, কাজির দেউড়ি, আতুরার ডিপো, কর্ণফুলী কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, মানভেদে বেগুন প্রতিকেজি ১২০ থেকে ১৫০ টাকা, করলা ১২০ টাকা, কাঁকরোল ১২০ টাকা, পটল ১০০ টাকা, ঢেঁড়স ১০০ টাকা, দেশি গাজর ১১০ টাকা, চায়না গাজর ১৬০ টাকা, বরবটি ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা, ফুলকপি মানভেদে ১৪০ থেকে ১৭০ টাকা, বাঁধাকপি ৮০ থেকে ১০০ টাকা, মূলা ৮০ থেকে ১০০ টাকা ও শিম ২৫০ থেকে ২৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর টমেটোর কেজি ১৬০ থেকে ২২০ টাকা। এর মধ্যে শিম, টমেটো, ফুলকপির দাম কেজিপ্রতি ২০ থেকে ৩০ টাকার মতো কমেছে। বেগুনের দাম বেড়েছে কেজিতে অন্তত ১০ টাকা।

এ ছাড়া বাজারে কচুরমুখী ৮০ থেকে ১০০ টাকা, মিষ্টিকুমড়া ৭০ থেকে ৮০ টাকা, পেঁপে ৩০ থেকে ৫০ টাকা, শসা ৮০ টাকা, আলু মানভেদে ৪৫ থেকে ৭০ টাকা, লাউ ৬০ টাকা, চিচিঙ্গা ৮০ টাকা, ধুন্দুল ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কাঁচামরিচ ও ধনেপাতা ৩০০ থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এর মধ্যে মিষ্টিকুমড়া, লাউয়ের দাম বেড়েছে। কমেছে ধুন্দুলের দাম।

শাকের মধ্যে লালশাকের আঁটি ৩০ থেকে ৪০ টাকা, পাটশাক ২০ টাকা, পুঁইশাক ৪০ টাকা, পুঁইশাকের বিচি ১২০ টাকা, লাউশাক ৪০ টাকা, মূলাশাক ৪০ টাকা, ডাঁটাশাক ২০ টাকা, হলুদ ফুল ৪০ টাকা, কলার মোচা প্রতি পিস ৮০ টাকা, কচুশাক ২৫ টাকা, কলমি শাক ১০ থেকে ১৫ টাকা ও পালংশাক ২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। দেশি কচুর লতি প্রতি আঁটি ৮০ থেকে ১০০ টাকা এবং সরু লতি ৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। শাকের দাম গত সপ্তাহের মতোই দেখা গেছে।

বাজারে কমদামি মাছ হিসেবে পরিচিত পাঙ্গাস এবং তেলাপিয়াও বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ১৮০ থেকে ২২০ টাকায়। পাবদা মাছ আকারভেদে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, তেলাপিয়া ১৭০ থেকে ২২০ টাকা, রুই ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা, নারকেলি মাছ ২৪০ থেকে ২৫০ টাকা, লইট্ট্যা মাছ ২০০ থেকে ২৫০ টাকা।

এছাড়া, বাগদা চিংড়ি আকারভেদে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা, গলদা চিংড়ি ছোট ১০০০, মাঝারি ১২০০ এবং বড় ১৫০০ টাকা। চাষের কই মাছ ২৮০ টাকা, চাষের মাগুর ৫০০ টাকা, কোরাল ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা, টেংরা ৫৫০ থেকে ৭৫০ টাকা, ইলিশ মাছ আকারভেদে ১৩০০ থেকে ১৮০০ টাকা, কাতাল মাছ ৩৪০ থেকে ৩৫০ টাকা, আইড় মাছ ৮০০ টাকা এবং শিং মাছ কেজিপ্রতি ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

সামুদ্রিক মাছ হিসেবে পরিচিত রুপচাঁদা মাছ আকারভেদে ৮‘শ থেকে ১ হাজার টাকা, লাল কোড়াল ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা এবং কোড়াল ৫শ টাকা কেজিপ্রতি বিক্রি হতে দেখা গেছে।

বাজারে মাংসের দামও কিছুটা বেড়েছে। ব্রয়লার মুরগি প্রতিকেজি ১০ টাকা বেড়ে ২০০ টাকা, সোনালী মুরগি ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা, দেশি মুরগি প্রতিকেজিতে ১০ টাকা বেড়ে ৫৫০ টাকা, গরুর মাংস হাড়ছাড়া ৯৫০ টাকা এবং হাড়সহ ৭৫০ টাকা, খাসির মাংস ১০০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

মুদির দোকানে নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণের দাম অপরিবর্তিত আছে। ডালের দাম বরং কেজিপ্রতি অন্তত ৫ টাকা কমেছে। ছোট মসুরের ডাল ১৩৫ টাকা, মোটা মসুরের ডাল ১১০ টাকা, বড় মুগ ডাল ১৪০ টাকা, ছোট মুগ ডাল ১৭০ টাকা, খেসারি ডাল ১১০ টাকা, চনার ডাল ১৪৫ টাকা, ছোলা ১৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

চালের মধ্যে কাটারিভোগ আতপ ২৫ কেজির বস্তা দুই হাজার টাকা, বেতি আতপ ৩২০০ থেকে ৩২৫০ টাকা, হাফ সেদ্ধ নাজিরশাইল ২২০০ টাকা ও পাইজাম আতপ ১৭৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৬৭ টাকা, খোলা সয়াবিন তেল ১৫৩ টাকা, প্যাকেটজাত চিনি ১৩৫ টাকা, খোলা চিনি ১৩০ টাকা, দুই কেজি প্যাকেট ময়দা ১৫০ টাকা, আটা দুই কেজির প্যাকেট ১১৫ টাকা, খোলা সরিষার তেল প্রতি লিটার ১৯০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।

এছাড়া মুরগির ডিম ডজনপ্রতি ১৬৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আর খুচরা দোকানে বিক্রি হচ্ছে ১৭০ টাকায়। গত সপ্তাহের চেয়ে দাম অন্তত ৫ টাকা কমেছে। এ ছাড়া হাঁসের ডিম ডজনপ্রতি ২২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

পরিমল দাস নামে এক ক্রেতা বলেন, আমরা মধ্যম আয়ের মানুষ। বাজার করতে আসলে আমাদের অবস্থা বোঝা যায়। বাজারে ৮০ টাকার নিচে কোন সবজি নেই। অতি চড়া দরে সবজি বিক্রি হচ্ছে। দাম কমার লক্ষ্য নেই, বরং বাড়ছে সবকিছু।

খুচরা ব্যবসায়ী, আড়তদার, পাইকারি ব্যবসায়ী ও বেপারিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চট্টগ্রামে সবজি আসে বগুড়া, নরসিংদী, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর ও যশোর থেকে। তবে সাম্প্রতিক দাবদাহ ও বন্যায় এসব এলাকায় মাঠেই নষ্ট হয়ে গেছে বেশ কিছু সবজি। সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছেন শতশত কৃষক। তাদের কোনো প্রণোদনা বা সহযোগিতার আওতায়ও আনা হয়নি। বেড়েছে ফসলের বীজ ও সারের দামও। তাই চট্টগ্রামে যা সবজি সরবরাহ হয় এখন সেটা অর্ধেকের কমে নেমে এসেছে। তাতেই চড়া বন্দরনগরীর সবজির বাজার।

রিয়াজউদ্দিন বাজার আড়তদার ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ফারুক শিবলী জানান, সম্প্রতি বৃষ্টি এবং বন্যার কারণে প্রচুর ফসল নষ্ট হয়েছে। যার ফলে চট্টগ্রামে সবজির সরবরাহ কমেছে। আগে যেখানে প্রতিদিন চট্টগ্রামে ২৫ থেকে ৩০ ট্রাক (প্রতি ট্রাকে ১৩ টন) সবজি আসতো সেখানে এখন সর্বোচ্চ ৫ ট্রাক আসে। আগামী দুই মাসের মধ্যে সবজি সরবরাহ স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা আছে। তখন দাম কমতে পারে। মূলত সবজি উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার কারণেই দাম বেশি।

যাযাদি/এআর