ভোলায় মফিজের মাল্টা-কমলা চাষের ম্যাজিক
প্রকাশ | ১৭ অক্টোবর ২০২৪, ১০:৩৬ | আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০২৪, ১০:৪৯
ভোলা জেলায় গত ৫-৬ বছর ধরে শখ করে কিছু বাসা-বাড়িতে সবুজ মাল্টা চাষ করে। বাণিজ্যিকভাবে মাল্টা-কমলার চাষ হয়না। গত সিজন থেকে একসাথে মাল্টা এবং কমলার বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে। এছাড়া সমতল ভূমিতে এসব ফল হয়না বলে একটা প্রচলিত ধারণা ছিল। কিন্তু বাণিজ্যিভাবে মাল্টা এবং কমলা গাছের থোকায় থোকায় ঝুলতে দেখে এ ধারণা সম্পূর্ণ বদলে গেছে। ফলে ভোলার সমতল ভূমিতে মাল্টা-কমলা চাষের নতুন দুয়ার খুলে গেছে বলে মনে করেন কৃষি বিভাগ ও
উদ্যোক্তারা।
বোরহানউদ্দিন উপজেলা সদর থেকে ৫ কিলোমিটর দক্ষিণে কাচিয়া ইউনিয়নের দুই নাম্বার ওয়ার্ডের ঘোলপাড়-রতনপুর সড়কের পাশে এক স্বপ্নবাজ যুব উদ্যোক্তা
মাইনুদ্দিন মফিজ গড়ে তুলেছেন ৩ একর জমির উপর মাল্টা, কমলা বাগান। সাথে আছে থাই পেয়ারা। ইতিমধ্যে বেশীরভাগ মাল্টা বিক্রি হয়ে গেছে। কমলা হলুদ রঙ
ধারন করা শুরু হয়েছে। এ মাসের শেষের দিকে বিক্রি করা যাবে। উভয় ফল দেখতে যেমন সুন্দর খেতেও মিষ্টি ও সুস্বাদু।
এর পাশেই আছে নানা জাতের বিশাল সবজি বাগান। সবজি বাগানের মধ্যে কাটা নালায় আছে বিভিন্ন প্রকারের মাছ। প্রতিদিন দূরবর্তী এলাকা থেকে মানুষ নান্দনিক এ কৃষি ফার্ম দেখতে আসেন। যাবার সময় ছবি তোলে; ভিডিও ধারন করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়। কিছু বেকার যুবক বাগান করার পরামর্শও নিচ্ছেন।
সমগ্র ফার্ম পরিচালনা করছেন উদ্যোক্তা মাইনুদ্দিন মফিজ। ২০২২ সালে তিনি সরকারীভাবে বরিশাল ও খুলনা অঞ্চলের মধ্যে নিরাপদ সবজী উৎপাদন ও
বাজারজাতকরণে ক্রেস্ট ও সম্মাননা সনদ অর্জন করেন। কৃষির উপর বিভিন্ন স্তরে প্রশিক্ষণ রয়েছে তাঁর। মাইনুদ্দিন মফিজ জানান,এ বাগানে প্রাথমিকভাবে বারি-১ মাল্টা চাষ করা হয়েছে। এছাড়া কমলার জাতের মধ্যে আছে ভূটানী, চায়না থ্রি, কাস্মিরী-১। স্থানীয় বাজারে প্রায় ১২ লাখ টাকার মাল্টা বিক্রি করা হয়েছে। কমলা বিক্রি নামবে ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা। এ প্রজাতিগুলো উত্তরবঙ্গের নাটোর ও চুয়াডাঙ্গা থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।
অতিবৃষ্টির কারণে এবার উৎপাদন কম হয়েছে। অনুকূল আবহাওয়া পেলে আগামী সিজনে এ উৎপাদন আরো বেশী হবে। তিনি আরো জানান, শতভাগ বিষমুক্ত ফল উৎপাদন আমার লক্ষ্য। আমি করছিও তা-ই। দেখা যায় বেশীর ভাগ ফল আমরা আমদানি করি। তা-ও স্বাস্থ্যকর না। অসাধু ব্যবসায়ীরা এ ফলকে আর খাবার উপযোগী রাখেনা। আরো ২০ একর নতুন বাগান করার কাজ চলছে। সেখানে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি প্রয়োগ করা হবে।
অন্যান্য ফলের মধ্যে আছে আড়াই হাজার থাই পেয়ারা, আপেল কুল,টক বড়ই। এছাড়া উন্নত প্রজাতির চারাও উৎপাদন করছেন তারা। যে কেউ স্বল্প মূল্যে ফার্ম থেকে কিনতে পারবেন। থাই পেয়ারা সারা বছরই বিক্রি হচ্ছে।
জানা যায়, পড়াশোনায় মফিজ এসএসসির গণ্ডি পেরোতে পারেনি। ২ বছরের এক কন্যা সন্তানের জনক। কৃষক মফিজ জানান, আমি নতুন কিছু করতে পছন্দ করি। সে সাথে চ্যালেঞ্চও। কৃষি কাজের প্রতি একটা মায়া জন্মে গেছে। বরই বাগান, থাই পেয়ারা, মাল্টা বাগান, সবজী বাগানে প্রায় ২ কোটি টাকার মত আমার বিনিয়োগ।
দীর্ঘদিনের সঞ্চয়, পৌরসভায় দুই এলাকার জমি বিক্রির টাকা, এলাকায় জমি বিক্রি করে কৃষির দিকে ঝুঁকি। এ পরিমাণ টাকা দিয়ে আমি পছন্দসই ব্যবসা করতে পারতাম। কিন্তু ওই দিকে আমার মন টানেনা। এ নিয়ে কিছুটা পারিবারিক মনোমালিন্যও হয়েছে। এ কাজে আমি আনন্দ পাই।
ওই ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. নাসিরউদ্দিন জানান, মাইনুদ্দিন মফিজের উদ্যোগকে অসাধারণ উল্লেখ করে তিনি জানান, কৃষি বিভাগ সব সময় তাঁর
পাশে আছে।
মাল্টাও কমলা বাগানের বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা গোবিন্দ মন্ডল জানান, ভোলার মাটি অন্যান্য জেলার তুলনায় ভালো। বিশেষ করে এ ধরনের মাটি ফল চাষের
জন্য খুবই উপযোগী। তদারকিটা ঠিক থাকলে পোকা-মাকড়ের আক্রমন, ছত্রাক আক্রমন সহজেই মোকাবেলা করা সম্ভব। তবে বেশি লাভের আশায় ফল যথাসময়ের আগে তুললে ফলের গুনাগুন ঠিক থাকেনা। মফিজের উদ্যোগ খুবই ইতিবাচক। কৃষিবিভাগ কৃষি প্রযুক্তি,পরামর্শসহ সব ধরনের সহযোগীতা দিয়ে তাঁর পাশে আছে। যদি তাঁর লোনের প্রয়োজন সেক্ষেত্রেও কৃষি বিভাগ সহযোগীতা করবে।
যাযাদি/এআর