খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি উপজেলার সেমুতাং গ্যাসক্ষেত্রে কর্মরত প্রকৌশলী সানি মারমা। প্রায় ৮ বছর ধরে উপজেলার যোগ্যাছোলা ইউনিয়ন সদরের হেডম্যানপাড়ায় নিজ বাড়িতে মাশরুম চাষ করে সফল হয়েছেন তিনি।
২০১৭ সালে প্রথম ২০ প্যাকেট বীজে (স্পন) মাত্র ১ হাজার টাকা খরচ করে মাশরুম চাষ শুরু করেছিলেন। প্রথম বছরেই লাভবান হওয়ায় পরের বছর থেকে পর্যাক্রমে বানিজ্যিক আকারে চাষ শুরু করেন তিনি।
বর্তমানে প্রায় আড়াই হাজারের বেশি পলিব্যাগে বানিজ্যিকভাবে সারা বছর বিভিন্ন জাতের মাশরুম চাষ করছেন সানি মারমা। আশানুরূপ ফলন আসায় এবার মোটা অঙ্কের মুনাফা আশা করছেন তিনি।
তবে মাশরুম চাষে এমন সম্ভাবনা বাস্তবায়নে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে সারাবছরই চাষ করা সম্ভব বলে মনে করেন এ সফল চাষি। এতে বেকারত্ব দূর হওয়ার পাশাপাশি অর্থনীতিতে অবদান রাখা সম্ভব।
শনিবার (৬ জুলাই) সকালে সানি মারমার মাশরুম প্রজেক্টে গিয়ে দেখা যায়, দুটি আবদ্ধ বেড়া ঘরের মেঝেতে মাঝারি আকারের ২ হাজার ৫০০ পলিব্যাগে সারি সারি সাজানো 'মিল্কি হোয়াইট' জাতের মাশরুম।
প্রতিটি ব্যাগ থেকেই ছোট, বড় ও মাঝারি আকারের (৫-৮ ইঞ্চি দৈর্ঘ) মাশরুম গজিয়ে উঠেছে। প্রজেক্টে কর্মরত শ্রমিকরা কেউ কেউ পরিচর্যায় ব্যস্ত আবার কেউ কেউ ফসল (মাশরুম) উত্তোলনের কাছে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। এ থেকে প্রতি মাসে ৪০০ কেজি 'মিল্কি হোয়াইট' মাশরুম উৎপাদন করা হয়। যা প্রতি কেজি মাশরুম পাইকারি মূল্যে বিক্রয় হচ্ছে ৪০০-৪৫০ টাকা করে। এছাড়াও শীত মৌসুমে একই স্থানে ঝুলন্ত পলিব্যাগে চাষ করে থাকেন উচ্চ ফলনশীল 'ওয়েস্টার' জাতের মাশরুম। যা থেকে দ্বিগুণ আয় হয় সানি মারমার।
মাশরুম চাষি প্রকৌশলী সানি মারমা বলেন, '২০১৭ সালে বাংলাদেশ মাশরুম উন্নয়ন ইন্সটিটিউট ও বেসরকারি সংস্থা থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে চাকুরীর পাশাপাশি অবসর সময়ে গড়ে তুলেছি মাশরুমের প্রজেক্ট (খামার)।
চলতি মৌসমে (গ্রীষ্ম) খামারে ২৫০০টি প্যাকেটে চাষ হয়েছে। ৩-৪ কেজি ওজনের প্রতিটি প্যাকেটের বীজ ও খড়কুটা পানি স্প্রে বাবদ খরচ পড়েছে প্রায় ১০০ টাকা করে। আর তা থেকে প্রতি মাসে ৪০০-৪৫০ কেজি মাশরুম সংগ্রহ করছি।
পাইকারি দরে 'মিল্কি হোয়াইট' বিক্রি হচ্ছে ৪০০-৪৫০ টাকা এবং 'ওয়েস্টা' বিক্রি হতো ২৫০-৩০০টাকা। খরচ বাদে মাসে ১ থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত লাভ থাকে। অনেকে ফোনে অর্ডার করেন। উৎপাদন যত বেশি হবে; বিক্রিও তত বাড়বে।’
খামারে কর্মরত শ্রমিক শান্তি রাম ত্রিপুরা বলেন, 'আমরা ৪-৫ জন উৎপাদন মৌসমে পরিচর্য, ফলন উত্তোলন ও বাজারজাতে ব্যস্ত থাকি। খামার দেখে অনেক যুবকরাও উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। অনেক অসুস্থ ব্যক্তি মাশরুম খেয়ে উপকার পাওয়ার কথাও জানান। চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, ফটিকছড়ি, গুইমারাসহ আশপাশের অনেক উপজেলার ক্রেতা এবং কয়েকটি রেস্টুরেন্ট নিয়মিত এই খামার থেকে মাশরুম সংগ্রহ করেন। এছাড়াও মাশরুমের বীজ (স্পন) বিক্রয় করা হয়'।
বৃদ্ধ আব্দুর রহিম বলেন, ‘গত ছয় মাস ধরে নিয়মিত মাশরুম খাচ্ছি। আগে কখনো খাইনি বা দেখিনি। এখন বাড়ির পাশেই চাষ হচ্ছে। এটি সুস্বাদু ও কিছুটা গরু-ছাগলের ভুড়ির মতো। ডায়াবেটিস ও এলার্জি নিরাময়ের জন্য আমার কাছে খুবই উপকারী মনে হয়েছে। আগে নিয়মিত ওষুধ সেবন করতে হতো। এখন ওষুধ সেবনের পরিমাণ কমে গেছে।’
উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা অঞ্জন কুমার নাথ জানান, 'মাশরুম একটি পুষ্টিকর সুস্বাদু ও ওষুধি গুণসম্পন্ন খাবার। মাশরুম চাষে কোনো আবাদি জমির প্রয়োজন হয় না। কম খরচে কম জায়গায় চাষ করা যায়। মাশরুম চাষ লাভজন। পাহাড়ের মাটি ও আবহাওয়া মাশরুম চাষের জন্য বেশ উপযোগী! জেলার অন্যান্য উপজেলায় মাশরুম চাষে সরকারী প্রণোদনা থাকলেও একমাত্র মানিকছড়িতে তা নেই! কয়েক বছর আগে জাইকার অর্থায়নে মাশরুম চাষ উদ্বুদ্ধকরণে ৩দিনের প্রশিক্ষণ করা হলেও পরবর্তীতে আর কোন অগ্রগতি চোখে পড়েনি! নিজ উদ্যোগে অনেকে মাশরুম চাষে সফল হওয়ার খবর পেয়েছি'।
যাযাদি/ এম