সোনালী ধান ঘরে তোলার আগে বৃষ্টি চায় না কৃষক

প্রকাশ | ০৩ মে ২০২৪, ১৪:০৬

স্টাফ রিপোর্টার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
ছবি-যায়যায়দিন

চলমান তীব্র তাপপ্রবাহে জনজীবনে যখন হাসফাস অবস্থা, মানুষ যখন একটু স্বস্তির বৃষ্টির জন্য হাইহুতাশ করছে, দেশজুড়ে যখন চলছে ইসতিসকার নামাজ আদায় তবু এই মুহুর্তে বৃষ্টি চান না ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কৃষকরা।

মাঠে সোনালি  ধান,  হাওর, বিল থেকে ধান কেটে ঘরে তোলার পর বৃষ্টি এলেই ভালো বলে মনে করছেন কৃষকরা। কৃষকদের অভিমত আরো ৭ থেকে ১০দিন বৃষ্টি না আসলে তারা জমির ধান ঘরে তুলতে পারবেন।

কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে জেলায় ১ লাখ ১১ হাজার ৬৯৬ হেক্টর জমিতে ধানের আবাদ করা হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় ২৯১ হেক্টর বেশী। আর এ থেকে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ লাখ ১৫ হাজার ৫৪৩ মেট্টিক টন ধান। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলন ভাল হয়েছে। প্রাকৃতিক কোন বিপর্যয় না ঘটলে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছেন তারা।

জেলার বিভিন্ন হাওড়াঞ্চলসহ উজানে থাকা জমিতে গিয়ে দেখা যায়- তীব্র তাপদাহ উপেক্ষা করেই মাঠে ধান কাটছেন কৃষক। আর কিষাণিরা কেটে আনা ধান মাড়াই ও শুকানোর কাজে ব্যস্ত। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত কাজ করে যাচ্ছেন। তীব্র রোদ, ভ্যাপসা গরম কিছুই তাদের কাজে ব্যাঘাত ঘটাতে পারছে না।  ঘাম ঝরিয়ে ফলানো ফসল ঘরে তুলতে না হয় আরেকটু বেশি ঘাম ঝরাবেন। তবুও বজ্রসহ বৃষ্টি, শিলাবৃষ্টি চান না তারা।

কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে- এ বছর আবহাওয়া ভালো থাকায় এখন পর্যন্ত ভালো ফলনের আশা করছেন তারা। এমন অবস্থায় বজ্রসহ বৃষ্টি, শিলাবৃষ্টি হলে কৃষকের ব্যাপক ক্ষতি হবে। এছাড়াও বৃষ্টি ও উজান থেকে ঢল এলে হাড়াঞ্চলের নিচু এলাকার জমি তলিয়ে যাবে। এতে কৃষকরা বিপাকে পড়বেন। তাই সব মিলিয়ে রোদ আর গরম যত বেশিই হোক, কষ্টের ফসল ঘরে তুলতে পারলেই খুশি তারা।

নাসিরনগর উপজেলার গোয়ালনগর গ্রামের কৃষক রুবেল মিয়া জানান, হাওরের ধান কাটা শেষ পর্যায়ে। উজানের কিছু ধানি জমি আছে এগুলো কাটতে এক সপ্তাহ সময় লাগবে। এ সময়টাতে বৃষ্টি না হলে কষ্টের ফসল ঘরে তুলতে পারবেন তিনি। যদি এর মধ্যে বৃষ্টি হয় তাহলে তার অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে বলে জানান।

নাসিরনগর উপজেলার দাতমন্ডল গ্রামের কৃষক আব্দুল ওয়ারিশ বলেন, চলতি মওসুমে পাঁচ কানি জমিতে (৩০ শতাংশে ১ কানি) নতুন জাতের বঙ্গবন্ধু ধানের আবাদ করেছেন। আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় ফলনও ভাল। প্রতি কানি জমিতে ২১ মণ ধান হয়েছে। ইতিমধ্যে তারা কষ্টের সোনালী ফসল ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তিনি বলেন, বৃষ্টি আমরাও চাই তবে আর কিছুদিন পর। এমন রৌদ্রজ্জ্বল আকাশ যেন আর কটা দিন থাকে। তাহলে আমাদের ফসল ঘরে তুলতে পারব। তিনি বলেন, তীব্র গরমে ফসল কাটার জন্য পর্যাপ্ত শ্রমিক পাওয়া যায়না। যাদের পাচ্ছি তাদেরকে প্রতিদিন ৭শ টাকা করে দিয়ে ধান কাটাচ্ছি। কৃষি বিভাগ থেকে জানানো হয়েছে সামনে ঝড় বৃষ্টি আসতে পারে। তাই পাকা ধান কাটতে বলা হয়েছে।

এ ব্যাপারে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর,ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উপ-পরিচালক সুশান্ত সাহা বলেন, চলতি মওসুমে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। প্রতিটি জমি সোনালী ফসলের আভায় মুখরিত। তবে কৃষকের কষ্টের ফসল যাতে ঘরে তুলতে পারেন সেজন্য কৃষি বিভাগ থেকে নানা পরামর্শ দেয়া হয়েছে। একই সাথে উপজেলা কৃষি অফিসার, মাঠকর্মীসহ বিভিন্ন স্থানে মাইকিং ও প্রচারণার মাধ্যমে ৮০ ভাগ ধান পেকেছে এমন ধান কেটে ঘরে তোলার জন্য বলা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, ইতিমধ্যে হাড়াঞ্চলের ৮০ ভাগ ধান কাটা শেষ আশা করছি ৩/৪ দিনের মধ্যে অবশিষ্ট ধান কেটে ঘরে তোলতে পাড়বে কৃষক। এছাড়াও উজানে যেসব জমি রয়েছে এরমধ্যে ২৬ ভাগ ধান কাটা হয়েছে। সেগুলো চলতি মে মাসের মধ্যেই কাটা শেষ হবে।

যাযাদি/ এস