আবহাওয়া চাষের অনুকূলে থাকায় এ বছর চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলায় বোরো ধানের আশাতীত ফলন হয়েছে। তবে ঝড়-বৃষ্টির ফলে সৃষ্ট পাহাড়ি ঢলে ফসল তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় রয়েছেন কৃষকরা। তাই বৈরী আবহাওয়ার হাত থেকে ফসল রক্ষায় এরই মধ্যে স্থানীয় কৃষকরা আগাম জাতের বোরো ধান কাটা ও মাড়াই শুরু করে দিয়েছেন। বাজারে ধানের দাম বেশি থাকায় উৎপাদন খরচ পুষিয়ে লাভের মুখ দেখায় স্বস্তিতে রয়েছেন কৃষকরা।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, সাতকানিয়া উপজেলার ১৭টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা এলাকায় বোরো রোপণের অর্জিত লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৭২৫০ হেক্টর। তবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও অধিক ৭৩০০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। তারমধ্যে ৩৪০০ হেক্টর জমিতে হাইব্রীড জাত ও ৩৯০০ হেক্টর জমিতে উচ্চ ফলনশীল (উফসী) জাতের বোরো ধান চাষ হয়েছে। সঠিক সময়ে সেচের পানি সরবরাহ করতে পারায় কৃষকরা প্রতিটি জমিতে ব্যাপকভাবে বোরো চাষ করেন।
উপজেলার মাহালিয়া বিল, কোদালা বিল ও দক্ষিণ বিল ঘুরে সরেজমিনে দেখা যায়, বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে বোরো ফসলের সমাহার। এসব গোছাভরা পাকা ধান বৈশাখের সোনালি রোদের আলোয় আরও আলোকিত হয়ে উঠছে। আর কৃষক-শ্রমিকরা মাঠভরা এ পাকা ধান কাটতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
কথা হয় মাহালিয়া বিল, কোদালা বিল ও দক্ষিণ বিলের কৃষক বড়দুয়ারা গ্রামের কামাল উদ্দিন, কলঘরের আবুল হোসেন, গর্জন্যা পাড়ার এয়ার আলী, জালাল আহমদ ও ধুপি পাড়ার সুনীল দাশসহ একাধিক কৃষকের সাথে।
দক্ষিণ বিলের কৃষক কামাল উদ্দিন জানান, এ বছর তাদের ধানের ফলন খুব ভালো হয়েছে। ধান কাটা ও মাড়াই শুরু করেছেন। আশা করছেন বৈরী আবহাওয়ার আগেই ধান কাটা সম্পন্ন করে সোনালী ফসল ঘরে তুলতে পারবেন।
কোদালা বিলের কৃষক সুনীল দাশসহ বেশ কয়েকজন কৃষক বলেন, ঝড়-বৃষ্টির জন্য একটু আশঙ্কায় রয়েছি। তারপরও ধান কাটা চালিয়ে যাচ্ছি। আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় ফলন বেশ ভালো হয়েছে। বৈরী আবহাওয়ার আগেই ধান বাজারজাত করবো।
কৃষক আবুল হোসেন বলেন, শ্রমিক সংকটে অনেক কষ্ট রয়েছি। এবছর শ্রমিকদের মজুরিও বেশি। তবে শীঘ্রই আশেপাশের জেলা ও দক্ষিণাঞ্চল থেকে শ্রমিকরা আসলে এ সংকট দূর হবে এবং মজুরিও কিছুটা কমবে।
সাতকানিয়া উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা টিটু দাশ জানান, এবছর কৃষকরা হাইব্রিড ও উচ্চ ফলনশীল (উফসী) জাতের ধানের চাষ করেছেন। যে সকল কৃষক স্থানীয় কৃষি অফিসের পরামর্শে বোরো ধান রোপণ করেছেন তাদের ফলন চাহিদার চেয়েও কয়েকগুণ বেশি হবে। তাছাড়া অন্যান্য বছরের চাইতে এ বছর ধানের বাজারদর বেশি। তাই বোরো চাষীরা অনেক বেশি লাভবান হবেন।
এদিকে সাতকানিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান জানান, এবছর সাতকানিয়ায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বোরো ধানের আবাদ বেশি হয়েছে। বিলের প্রায় ১৫ শতাংশ ধান এরই মধ্যে কাটা সম্পন্ন হয়েছে। ফসলের অবস্থা এখনও পর্যন্ত ভালো। তবে বৈরী আবহাওয়ার হাত থেকে ফসল রক্ষায় জমির ধান পঁচাশি শতাংশ পাকার সঙ্গে সঙ্গেই কেটে নেয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ফলন তুলনামূলক ভালো হওয়ার আশা করছি।
যাযাদি/ এস