ফকিরহাটে সূর্যমুখীর হাসি, আগ্রহ বেড়েছে কৃষকের
প্রকাশ | ১৯ মার্চ ২০২৪, ১১:৩২
বাগেরহাটের ফকিরহাটে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে সূর্যমুখীর চাষ। অধিক লাভজনক হওয়ায় কৃষকের মুখে হাঁসি ফুটেছে। আর স্বল্প খরচে অধিক লাভ হওয়ায় দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে চাষবাদ। মাঠ জুড়ে হলুদ ফুলের সমারহ। কৃষকেরা ভাল ফলন আশা করছেন।
ফকিরহাট উপজেলা কৃষি বিভাগ সুত্রে জানা গেছে, উপজেলার ৮টি ইউনিযনে ১৬১ হেক্টর জমিতে মোট ১২৪০জন কৃষক চলতি মৌসুমে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছেন। গত মৌসুমে ১৫০ হেক্টর জমিতে মোট ১হাজার কৃষক এই চাষ করেছিলেন। গত বারের তুলনায় এবছর অনেক বেশী জমিতে আরো বেশী কৃষক সূর্যমুখীর চাষ করেছেন।
মৌভোগ ব্লকের কৃষক মো. আজাহার শেখ জানান, তেল জাতীয় ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্পের আওতায় তিনি এ বছর প্রথমবারের মত বানিজ্যিকভাবে সূর্যমূখী ফুলের চাষ করেছেন। তিনি ৫০শতক জমিতে সূর্যমূখী ফুলের চাষ করছেন। ফলনও ভাল হয়েছে বলে জানান।আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে লক্ষ্য মাত্রার চেয়ে বেশী লাভবান হবেন বলে জানান।
কৃষক হানিফ শেখ, মরিয়ম বেগম, জাহাঙ্গির আলম, রেজাউল শেখ, ও রাজু শেখ সহ অনেক কৃষক জানান, উপজেলা কৃষি বিভাগের সহযোগিতা ও পরামর্শে তারা হাইসান-৩৩ জাতের সূর্যমূখী ফুলের চাষ করেছেন। কৃষি কর্মকর্তারা সব সময় খোজ খবর নিয়ে থাকেন।
উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা বিপ্লব দাস ও রত্না রায় বলেন, তেল জাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্পের আওতায় এসব কৃষকদের প্রশিক্ষণ সহ উন্নত মানের মাড়াই যন্ত্র, বীজ, সার দেওয়া সহ সব ধরনের সহযোগিতা করা হয়েছে। প্রায় প্রতিটি জমিতে উৎপাদন ভাল হয়েছে। এটা অন্য ফসলের চেয়ে স্বল্প জীবন কাল ও লাভ জনক। সে কারণেই সূর্যমুখী ফুল চাষ করে কৃষকেরা লাভবান হবেন। উৎপাদিত সূর্যমুখী বীজ স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের চাহিদা পুরন করা যাবে বলে আশা করছেন কর্মকর্তারা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শেখ সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ফকিরহাট উপজেলায় প্রায় সব ধরণের ফসল উৎপন্ন হয়ে থাকে। তেল জাতীয় ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্পের আওতায় কৃষকরা অধিক পুষ্টিগুন সম্পন্ন সূর্যমুখী ফুলের চাষ করছেন। সূর্যমুখীর তেল অন্যান্য সাধারণ তেলের তুলনায় একটু আলাদা। রান্নার জন্য সয়াবিন তেলের চেয়ে সূর্যমুখী তেল অনেক বেশী পুষ্টি সমৃদ্ধ। সূর্যমুখীর ফুল শুধু তেল উৎপাদনের জন্যই চাষ হয় না। অনেকে বাড়ির আঙ্গিনায় ও অফিসের সামনে সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য সূর্যমুখী ফুল চাষ করে থাকেন অনেকে। সূর্যমুখী তেল আমাদের শরীরের হাড় সুস্থ ও মজবুত করে। কৃষকদের মাড়াই করার যন্ত্র সহ সকল প্রকার সহযোগিতা করা হয়েছে।
তেল জাতীয় ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্পের খুলনা অঞ্চলের মনিটরিং কর্মকর্তা কৃষিবিদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমন ধান কাটার পরে এসব জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করা হয়। বিশেষ করে পতিত জমিতে কৃষকদের এর চাষ করার জন্য পরামর্শ দেয়া হয়। অত্র অঞ্চলে সরিষা চাষের থেকে সূর্যমুখী আবাদ ভাল হয়। প্রতি বিঘা জমিতে আট থেকে নয় মন পর্যন্ত এর ফলন হয়ে থাকে। সূর্যমুখী ফুলের তেলের গুনগত মান ভাল। কৃষকদের এবার উচ্চ ফলনশীল জাতের বীজ প্রদান করা হয়েছে। এরআগে মাড়াই করার মেশিনের অভাবে অনেকে সূর্যমুখী চাষ করতে চাইতেন না। এখন মাড়াই করার যন্ত্র পেয়ে কৃষকরা সূর্যমুখী চাষে আগ্রহী হয়েছেন। কৃষি বিভাগ এসব কৃষকদের সব ধরনের পরামর্শসহ সহযোগিতা করে থাকেন বলে জানান এ কর্মকর্তা ।
যাযাদি/ এস