সীমান্ত জনপদ জৈন্তাপুর উপজেলার উৎপাদিত বিভিন্ন শাক-সবজি রপ্তানীর পাশাপাশি প্রতি বছরের ন্যায়ে চলিত বছর দেশের বিভিন্ন স্থানে তরজুম রপ্তানী কাজ শুরু করা হয়েছে। জৈন্তাপুরে চলিত বছরে শীত কালীন বিভিন্ন শাক-সবজি উৎপাদনের পাশাপাশি এবার তরমুজের বাম্পার ফলন হয়েছে।
উপজেলার নিজপাট, জৈন্তাপুর, চারিকাটা ইউনিয়নে অন্তত ৬০ হেক্টর পতিত অনাবাদী জমিতে এবার তরমুজ চাষাবাদ করা হয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিসের উৎসাহ-উদ্বীপনায় স্থানীয় কৃষকরা তরমুজ চাষে এগিয়ে এসেছেন। জৈন্তাপুর উপজেলার অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাপক ভাবে তরমুজ ফসল অবদান রাখছে। উপজেলার কয়েক হাজার পরিবার তরমুজ চাষাবাদ করে অর্থনৈতিক ভাবে অনেকটা লাভ হয়েছেন।
উপজেলা কৃৃষি অফিসের সঠিক তদারকিতে উপজেলার ৩টি ইউনিয়নের পতিত অনাবাদী জমি'তে তরমুজ উৎপাদন বেশি হওয়ায় কৃষকরা এবার মহাখুশি হয়েছেন। ইতোমধ্যে মাঠ থেকে সরাসরি তরমুজ বিক্রয় ও বাজার জাত প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে।
সিলেট সহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পাইকারগণ কৃষকদের মাঠ থেকে তরমুজ ক্রয় করে নিয়ে যাচ্ছেন।
উপজেলা কৃষি অফিসার শামীমা আক্তার বলেন, চলিত বছরে উপজেলায় অতিরিক্ত ৫ শত হেক্টর পতিত অনাবাদী জমিতে শীত কালীন অন্যান্য শাক-সবজি উৎপাদনের পাশাপাশি ৬০ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষাবাদ করা হয়েছে। তিনি জানান, পরিবেশ ও আবহাওয়া ভালো থাকায় এই বছর তরমুজ ফলন উৎপাদন ভালো হওয়ায় কৃষকরা অনেক খুশি হয়েছেন। তরমুজ উৎপাদনে অর্থনৈতিক ভাবে কৃষকরা অনেক লাভবান হচ্ছেন। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে সরকারি বরাদ্দের সবরকম সুযোগ সুবিধা কৃষকদের প্রদান করা হচ্ছে।
চলিত বছরে উপজেলার কেন্দ্রী,বাওন হাওর, বিরাই মারা, খারুবিল, ডুলটির পার,বিরাখাই ও আসামপাড়া হাওর, নিজপাট ইউপির কামরাঙ্গীখেল, দিগারাইল, হর্নি বাইরাখেল, রুপচেং, ডৌডিক ইন্দারজু, লুৎমাইল, চারিকাটা ইউপির বালিদাড়া, থুবাং, লালাখাল, গৌরি, রামপ্রসাদ এলাকায় ব্যাপক জায়গা জুড়ে তরমুজ চাষাবাদ হয়েছে।
উপজেলার জৈন্তাপুর ইউনিয়নের বিরাইমারা হওর, খারুবিল তরমুজ বাগান পরিদর্শন কালে স্থানীয় কৃষক মো: আজিজুল হক, জমির উদ্দিন, ইয়াহিয়া ও আজির উদ্দিন জানান, তারা যৌথ ভাবে ৪ জন কৃষক সম্মিলিত ভাবে ২২ বিঘা অনাবাদী জমি ৩ বছরের জন্য ১ লাখ ২০ হাজার টাকা মুল্য দিয়ে লীজ নিয়ে তরমুজ চাষ করছেন। মেশিন লাগিয়ে জায়গার বিন্না-জঙ্গল পরিস্কার করতে তাদের ৪২ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ২২ বিঘা জমির উপর ৬ হাজার তরমুজ গাছের চারা রোপন করা হয়। প্রতি'টি গাছে (৩-৪)টি করে ফসল উৎপাদন হয়েছে। বাজার থেকে বীজ ক্রয় করে গাছের পরিচর্ষ সহ অন্তত ৫ লাখ টাকা তাদের খরচ হয়। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে মনিটরিং এবং কীটনাশক প্রদান সহ বিভিন্ন ভাবে সহযোগিতা করা হয়েছে বলে জানান। কৃষক আজির উদ্দিন জানান, চলিত মাসে ৫ হাজার পিছ তরমুজ বিক্রয় করা হয়েছে ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকায় । তিনি বলেন, এখানে আরও অন্তত ১৩ হাজার ছোট বড় তরমুজ বাগানে রয়েছে। ইতোমধ্যে প্রথম চালন বিক্রয় করা হয়েছে। ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ দিকে দ্বিতীয় চালন বিক্রয় করা হবে।
কৃষি অফিস সূত্রে জানাগেছে, তরমুজ সহ উপজেলার ৯ হাজার, ৪শত ৯৫ হেক্টর জমি'তে শীত কালীন নানা শাক-সবজি উৎপাদন ও চাষাবাদ করা হয়েছে। তরমুজ চাষাবাদ করা হয়েছে ৬০ হেক্টর জায়গা জুড়ে। যার বাজার মূল্য অন্তত ১৮ কোটি টাকা হতে পারে বলে ধারনা করা হচ্ছে।
জৈন্তাপুর ইউনিয়ন উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন জানান, এই ইউনিয়নে ১৫ হেক্টর জমি'তে তরমুজ চাষাবাদ করা হয়েছে। তিনি বলেন, পতিত জমিতে জঙ্গল পরিস্কার করে কৃৃষকরা তরমুজ চাষে এগিয়ে এসেছেন। আমরা প্রতিনিয়ত তাদের বাগানে পরামর্শ ও মনিটরিং কাজ করে যাচ্ছি।
জৈন্তাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফখরুল ইসলাম জানান, জৈন্তাপুর ইউনিয়নে শীত কালীন নানা শাক-সবজি চাষাবাদ ও উৎপাদন হয়ে থাকে।
এবছর তরমুজ ফসল উৎপাদন অনেকটা ভালো হয়েছে। সরকারি ভাবে কৃষকদের পানির সেচ সুবিধা প্রদান করা হলে শীত কালীন রবি মৌসুমে তরমুজ শাক-সবজি সহ অন্যান্য পন্য উৎপাদন ও চাষাবাদে কৃষকরা আরও আগ্রহী হয়ে উঠবেন।যাযাদি/ এস