মাত্র ১শ’ গাছের চারা দিয়ে শুরু করা বিষমুক্ত ড্রাগন চাষী ইলিশয়াস এখন স্বাবলম্বী। তার বাগানে রয়েছে হাজার হাজার ড্রাগন গাছ। গাছে গাছে ঝুলছে লাল টুকটুকে পাকা ড্রাগন ফল। প্রশাসনের লোকসহ প্রতিদিন বাগান দেখতে ছুটে আসছে নানা বয়সী মানুষ। শুধু ড্রাগনই নয় আম আর পেয়ারা গাছেও ভরপুর ইলিয়াসের বাগান। বলছি চাওড়া ইউনিয়নের কাউনিয়া গ্রামের ড্রাগন চাষী ইলিয়াসের কথা। ইলিয়াস থাকেন পৌরসভার খোন্তাকাটা এলাকায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কুয়েত ফেরৎ শিক্ষিত (বিএ পাস) যুবক ইলিয়াস। ভাগ্যের চাকা ঘোরাতে ২০১২ সালে ৫লক্ষ টাকা ব্যায় করে টাকা রোজগারের আশায় গিয়েছিলেন কুয়েত। সেখানে ভাগ্যের চাকা ঘোরাতে না পেরে হতাস হয়ে ২০১৭ সালে দেশে ফিরে আসেন ইলিয়াস। দুই বছর বেকার ঘোরাঘুরির সময় কি করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না ইলিয়াস।
একসময় মোবাইল ফোনের ইউটিউবের মাধ্যমে সাইখ সিরাজের উপস্থাপনায় ড্রাগন বাগানের উপর একটি সচিত্র প্রতিবেদন দেখে আকৃষ্ট হন তিনি। এরপর পরিবারের সকলের সাথে কথা বলে সিদান্ত নেন ড্রাগন চাষ করবেন। যেই চিন্তা সেই কাজ। ২০১৯ সালে ইলিয়াস চাওড়া ইউনিয়নের কাউনিয়া গ্রামে ৫ হাজার টাকায় ৩৩ শতাংশ জমি নিয়ে ১০০ চারা রোপনের মধ্যে দিয়ে শুরু করেন ড্রাগন চাষ। পাশাপাশি এই বাগানের চারপাশে পেয়ারা, কাটিমন আম চাষও করেন।
শুরুতেই বাগানে লাভের মুখ দেখায় ইলিয়াসের উৎসাহ দিগুন বেরে যায়। এর পর তিনি প্রতিবছর জমির পরিমান বাড়াতে থাকেন। বাড়তে থাকে তার বাগানের পরিধি ও লাভের টাকার পরিমান।
বর্তমানে ইলিয়াস ২শ’৫০ শতাংশ জমির উপর ৩০লক্ষ টাকা ব্যায় করে গড়ে তোলেন কয়েক হাজার চারার ড্রাগনের বাগান। এই বাগানের সাথে রয়েছে থাই পেয়ারা, কাটি মন আম ও বাগানের মাঝখানে রয়েছে একটি পুকুর।
এখন আর ইলিয়াসকে ফেছনে ফিরে তাকাতে হয় না। কারো কাছে টাকার জন্য হাত পাততে হয় না। প্রতি বছর ড্রাগন বাগান থেকে লাভ করেন ৭-৮ লক্ষ টাকা। শুধু মাত্র ১ জন শ্রমিক রেখে কঠোর পরিশ্রমি ইলিয়াস দিন রাত নিজেই কাজ করেন বাগানে। মাটি কাটা, ফল তোলা, বাজারজাত করাসহ সকল কাজ করেন ইলিয়াস নিজেই।
শনিবার সকালে সরেজমিন ইলিয়াসের বাগান পরিদর্শন করে দেখা যায় সারি সারি ড্রাগন গাছে বাগান ভরপুর। প্লাস্টিকের ড্রামে সিমেন্টের খুটির উপর বসনো হয়েছে। গাছ। গাছের ডগায় ডগায় দুলছে লাল টুকটুকে ড্রাগন ফল। দেখলে যে কারো নজর কারবে এক নজর দেখার জন্য। পুরাতন বাগানের আশ পাশেই গরে তুলেছেন পেয়ারা আর কাটিমন আমের বাগান। মাঝ খানে রয়েছে ছোট পুকুর। পুকুর ভর্তি তেলাপয়িা, রুই কাতলাসহ ভিভিন্ন মাছে ভরপুর। হাতে নিরানি আর পরনে লুগি সদা হাস্যজ্জল টগবগে যুবক ইলিয়াস নিজেই কাজ করছেন বাগানে।
ইলিয়াসের বাগানের সফলতা দেখে আমতলীর বিভিন্ন এলাকায় অনেকেই এখন ড্রাগনসহ বিভিন্ন পলের বাগানের দিকে ঝুকছে। ইলিয়াসের বাগানের সফলতার গল্প শুনে বরগুনা সদ্য বিদায়ী জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান ও আমতলীর ইউএনও মুহাম্মদ আশরাফুল আলম সহ কৃষি দপ্তরের অনেইে এই বাগান পরিদর্শন করেছেন।
ইলিয়াস বলেন, বিদেশ থেকে এসে বেকার ছিলাম। কি করবো ভেবে পাচ্ছিলাম না। এসময় ইউটিউবে সাইখ সিরাজের ড্রাগন চাষে লাভ বেশী এটি দেখে আমি উদ্ধুদ্ধ হই। এর পর মাত্র ১০০শ’ ড্রাগন চারা দিয়ে শুরু করা আমার বাগানে এখন কয়েক হাজার ড্রাগন গাছ। বাগানে কোন ওষুধ কিংবা হরমোন জাতীয় বিষ প্রয়োগ করা হয় না। আয়ের টাকা দিয়ে বাগানে প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা খরচ করেছি।
এখন বছরে আমার বাগান থেকে আয় ১০-১২ লক্ষ টাকা। স্থানীয় আমতলী, কলাপাড়া, পটুয়াখালিসহ আশপাশের শহরের ফল বিক্রেতারা আমার বাগান থেকে এসে ফল নিয়ে যায়। অনেক ক্ষেত্রে আমি নিজেও বিভিন্ন দোকানে ফল পৌছে দেই। ইলিয়াস আরো বলেন, শিক্ষিত যুবকরা বেকার না থেকে এবং চাকরির পিছনে না ছুটে কৃষি কাজ করে অনেক লাভবান হওয়াা যায়।
আমতলী উপলো কৃষি কর্মকর্তা মো. ইছা বলেন, ইলিয়ান ড্রাগন বাগান করে অনেক দৃষ্টান্ত স্থান করেছেন। তিনি তার বাগানে কোন হরমোন জাতীয় ওষুধ কিংবা বিষ প্রয়োগ করেন না। বাজারে তার ড্রাগনের চাহিদাও রয়েছে প্রচুর। তার দেখা দেখি অনেকেই এখন ড্রাগন চাষের দিকে ঝুকছেন।
বিভিন্ন সময়ে অমারা ইলিয়াসকে সরকারী সহযোগিতা দিয়ে থাকি। সমাজে এরকম ইলিয়াসের মতো যদি কেই এগিয়ে আসে আমরা তাদেরকে কৃষি দপ্তরের পক্ষ তৈকে সকল ধরনের সহযোগিতা করবো।
যাযাদি/ এম