সরিষা চাষে অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতার স্বপ্ন বুনছেন পটিয়ার প্রান্তিক কৃষকরা
প্রকাশ | ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১১:৪৫
চট্টগ্রামের পটিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকায় নানা জাতের সরিষার ক্ষেত দেখে চোখ জুড়িয়ে যাচ্ছে। সরিষার ক্ষেতে ফুটেছে সরিষার ফুল। উপজেলার বিস্তীর্ণ ১৩০ হেক্টর জমিতে যেন হলুদের রঙছটা। স্বল্প সময় আর কম খরচে সরিষা চাষে অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতার স্বপ্ন বুনছেন প্রান্তিক কৃষকরা।
গত বছরের তুলনায় এ বছর পটিয়ায় বেড়েছে সরিষার আবাদ। আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে প্রান্তিক কৃষকেরা। উপজেলা কৃষি অফিসের বিনামূল্যে সার বীজ, বিশেষ প্রর্দশনীর মাধ্যমে কৃষকেরা সরিষা চাষে উদ্ভুদ্ধ হচ্ছে। এছাড়াও অনেকেই ব্যক্তি উদ্যোগে সরিষা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। বেশিরভাগ জমিতেই বিনা-১১, বারি-১৪, ১৭, ১৮ জাতের সরিষার আবাদ করছেন কৃষকরা।
চলতি মৌসুমে উপজেলার কচুয়াই, কাশিয়াইশ, জিরি ভাটিখাইন, কেলিশহর, হাইদগাঁও, খরনা, ইউনিয়নসহ পৌর এলাকার পতিত জমিতে বিভিন্ন জাতের সরিষার ভালো ফলন হয়েছে।
প্রান্তিক কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, উপজেলা কৃষি অফিসের সহয়তা ও প্রণোদনায় নতুন চাষীরাও সরিষা চাষ করতে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন। ফুল আসা সরিষা ক্ষেত গুলোতে হলদে আবরণে ভাসছে। বিগত অর্থ বছরে উপজেলায় মোট ৭২ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ হয়। আর চলতি বছরে ১৩০ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ করা হয়েছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলের পতিত জমিগুলোতে সরিষার ফুল আসায় পুরো গ্রাম হলদে রূপ ধারণ করেছে। ভালো ফলন হওয়ায় বেজায় খুশি কৃষকেরা। তারা আশা করছেন অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার সরিষার ফলন বেশ ভালো হয়েছে। জমি থেকে আশানুরূপ সরিষার ফলন পাবেন।
জানা যায়, চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সরিষা চাষে দিন দিন কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে। গত এক দশক আগেও উপজেলায় অল্প অল্প সরিষার আবাদ করতো কৃষকরা। তবে স্বল্প খরচে বেশি লাভের সম্ভাবনা থাকায় অনেক কৃষকই এখন সরিষা চাষে ঝুকে পড়ছেন। এছাড়া ও উপজেলার কেলিশহর, খরনা, শোভনদণ্ডী জিরি এবং পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় ও এ বছর অনেক কৃষক সরিষা চাষে নির্ভরশীল হচ্ছেন স্হানীয় কৃষকেরা।
পটিয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে উপজেলায় কয়েক জাতের সরিষা চাষ করা হয়েছে। তার মধ্যে বারী সরিষা- ১৪, ১৭,১৮ জাতের সরিষার চাষ এখানে বেশী হয়ে থাকে। এ ছাড়াও বীনা ১১ জাতের সরিষাও চলতি অর্থ বছরে ১৩০হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ করা হয়েছে। যা আগামীতে ৪/৫ শ হেক্টরে উন্নীতের লক্ষ্য নিয়ে মাঠপর্যায়ে কাজ করছে কৃষি বিভাগ।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের তথ্য মতে, চলতি মৌসুমে ১৩০ বিঘা জমিতে সরিষার চাষ হয়েছে। গত মৌসুমের তুলনায় এ বছর সরিষার আবাদ বেড়েছে। যা গত বছরের তুলনায় দ্বিগুণ। উপজেলার ১৭ টি ইউনিয়ন ও ১ টি পৌরসভায় প্রনোদনা ও প্রর্দশনীর মাধ্যমে বীজ ও সার দেয়া হয়েছে কৃষকদের মাঝে। যা বর্তমানে কৃষকের জমিতে দৃশ্যমান সরিষার আবাদ। বারি সরিষা ১৪, ১৬, ১৮ ও বীনা সরিষা ১১ জাতের সার বীজ উপজেলা কৃষি অফিস থেকে বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে। প্রতি হেক্টরে ১-১.৫০ টন সরিষার ফলন পাওয়া যাবে বলে। কৃষকের সরিষা চাষে প্রতি হেক্টরে ২০-২৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। তার থেকে আয় হবে ৭০-৭৫ হাজার টাকা। ৮৫-৯০ দিনে এ ফলন পাওয়া যাবে বলে।
সরিষা চাষে আর্থিক স্বচ্ছলতার স্বপ্ন দেখছেন উপজেলার কচুয়াই ইউনিয়নের উত্তর শ্রীমাই এলাকার প্রান্তিক কৃষক আবদুল জব্বার। ব্যক্তি উদ্যোগে ও প্রণোদনার বীজ দিয়ে ৪৪০ শতক জমিতে বারি-১৪ জাতের সরিষার আবাদ করেছেন এ কৃষক। কৃষি বিভাগ থেকে বীজ পাওয়ায় সন্তুষ্ট তিনি।
৪৪০ শতক জমিতে সরিষা চাষে ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে জানিয়ে তিনি আরো বলেন, সরিষা চাষে আগ্রহী হলেও আর্থিক সঙ্কটে অনেকেই সরিষা চাষ করতে পারছেন না। সরকারিভাবে প্রণোদনার পাশাপাশি ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা করা হলে কৃষকরা সরিষা চাষ করে আর্থিক স্বচ্ছলতা পেতো।
একই এলাকার সরিষা চাষি ইফতিয়ার হোসেন বলেন, অন্যান্য চাষাবাদের পাশাপাশি ৮০ শতক জমিতে এবার সরিষা চাষ করছি। বোরো ও আমনের মাঝামাঝি সময়ে পরিত্যক্ত জমিতে সরিষা চাষে বাড়তি আয়ের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। সরিষা চাষে সরকারি প্রণোদনা বাড়ানোর দাবি জানিয়ে এ কৃষক বলেন, স্বল্প সময়ে সরিষা চাষে বেশি লাভবান হওয়ার কারণে আমার মতো আরো অনেক কৃষকের ভাগ্য বদলে যেতে পারে।
উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা দীপন চৌধুরী বলেন, সরিষা আবাদে তেমন সেচের প্রয়োজন হয় না। কম সময়ে সরিষা চাষে ফলন পাওয়া যায়। সরিষা উৎপাদন করে দেশের সরিষার তৈলের চাহিদা পূর্ণ হচ্ছে। সরিষার তেলের রয়েছে অনেক ঔষধি গুণ।
সরিষার খৈল পশুখাদ্য ও জমির উর্বরা শক্তি বৃদ্ধির কাজে ব্যবহার হয়। সরিষার গাছ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এছাড়া যে জমিতে সরিষার পাতা ঝড়ে পড়ে সে জমির খাদ্য চাহিদা অনেকাংশে মিটিয়ে থাকে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ কল্পনা রহমান বলেন, আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশক্রমে খাদ্য স্বয়ং সম্পুর্ন হওয়ার পাশাপাশি সরিষা আবাদ করে তেল উৎপাদনেও স্বয়ং সম্পুর্ন হওয়ার। সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।বোরো ও আমনের মাঝামাঝি দুই মাস সময়ে পরিত্যক্ত জমিতে সরিষা চাষ করে বাড়তি আয়ের সুযোগ বেছে নিয়েছেন স্থানীয় কৃষকরা।
বিগত সময়ের তুলনায় চলতি মৌসুমের কৃষকদের মাঝে সরিষা চাষে আগ্রহ বাড়ছে। এবার সরিষা আবাদে লক্ষ্যমাত্রা ১৩০ হেক্টর হলেও অর্জিত হয়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। বিনা ও বারি জাতের সরিষার জন্য কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে প্রদর্শনী প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। প্রদর্শনী প্লটের বাইরেও প্রান্তিক চাষিরা ব্যক্তি উদ্যোগে সরিষা চাষে ঝুঁকছেন।
আরো জানা যায়, সরিষা মধ্যবর্তী ফসল হিসেবে পরিচিত। আমনের ফসল ঘরে তোলার পর বোরো চাষের জন্য দুই মাস সময় অপেক্ষা করতে হয়। বোরো ও আমনের মাঝামাঝি সময়ে পরিত্যক্ত জমিতে সরিষা চাষ করে বাড়তি আয়ের সুযোগ বেছে নিয়েছেন স্থানীয় কৃষকরা। সরিষা উৎপাদনে দেড় থেকে দুথমাসের মধ্যেই হয়ে যায়। প্রতি একর জমিতে সরিষা আবাদ করে ১০-১৫ মণ পর্যন্ত সরিষা উৎপাদিত হয়। প্রতি মণ সরিষার ১৫শ-১৮শ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
যাযাদি/ এস