দিনাজপুরে দিন দিন বাড়ছে শরিষার আবাদ

প্রকাশ | ১৯ জানুয়ারি ২০২৪, ১৪:১৭

মোঃ রেজাউল করিম রঞ্জু, দিনাজপুর থেকে

দিগন্ত জোড়া মাঠে হলুদের সমারোহ, শরষের আবাদ। গাছের শরীর জুড়ে হলুদ ফুলের সমারোহ। বাতাসে ভাসছে মিষ্টি গন্ধ। ফুলের সাথে মৌমাছির প্রেম। গত কয়েকদিন দিনাজপুরের চিরিরবন্দর, বীরগঞ্জ, কাহারোল সহ সদর  উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়ন ঘুরে এ অপরুপ দৃশ্য দেখা গেছে। শরিষা চাষে পরিশ্রম ও ব্যয় কম। অধিক লাভজনক হওয়ায় দিনাজপুরের মানুষ দিন দিন ঝুকছে শরিষার আবাদে। গত তিন বছরে প্রায় ৪৮ শতাংশ জমিতে শরিষার আবাদ বেড়েছে। সেইসাথে উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ৬০ শতাংশ। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র বলছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে জেলার ১৩টি উপজেলায় শরিষা আবাদ হয়েছে ১৩ হাজার ১৬২ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন ছিল ১৭ হাজার ৭৬৯ মেট্রিকটন। ২০২১-২২ অর্থবছরে আবাদ হয়েছে ১৬ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন ছিল ২৩ হাজার ৫৬৪ মেট্রিক টন। 

২০২২-২৩ অর্থবছরে আবাদ হয়েছে ২২ হাজার ৭৪০ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন ছিল ২৯ হাজার ৪৯২ মেট্রিক টন। চলতি মৌসুমে শরিষার আবাদ হয়েছে ২৭ হাজার ১৯৭মেট্টিক টন। সেখানে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ৪০ হাজার মেট্টিক টন। তবে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে এমন প্রত্যাশা সংশ্লিষ্ট্ কৃষি বিভাগের। জেলার সবচেয়ে বেশি ৪ হাজার ৭১২ হেক্টর জমিতে শরিষা আবাদ হয়েছে বীরগঞ্জ উপজেলায়। এছাড়াও হাকিমপুর, বোচাগঞ্জ, চিরিরবন্দর, খানসামা, কাহারোল, বিরল ও সদর উপজেলায় তুলনামুলক শরিষার আবাদ বেশি হয়েছে। এজেলায় বারি সরিষা- ১৪,১৭,১৮ ও বিনা সরিষা-৯,১১ জাতের শরিষা চাষ বেশি হয়েছে। দিনাজপুর জেলার চিরিরবন্দর উপজেলার আউলিয়াপুর এলাকার কৃষক পরেশ চন্দ্র রায় জানান, এবার দুই একর জমিতে বিনা-১১ জাতের শরিষা চাষ করেছেন। তাতে কাটামাড়াই পর্যন্ত খরচ পড়বে ১২-১৪ হাজার টাকা। সাধারণত ৮৫-৯০দিন পরে ফসল তোলা হয়। বৃহঃবার পর্যন্ত আজাদের শরিষার বয়স হয়েছে ৭২ দিন। এবার ফলনও ভাল হয়েছে। 

আশা করছেন বিঘা প্রতি ৯মণ শরিষা পাবেন। তিনি বলেন, গতবার ৩হাজার ২০০টাকা মণ হিসেবে শরিষা বিক্রি করেছি। সেই হিসেবে এবারও বিঘায় প্রায় ১৬-১৭ হাজার টাকা লাভের আশা দেখছেন তিনি। বীরগঞ্জ উপজেলার দেবীপুর গ্রামের কৃষক শহিদুল আলম এবার ৩ একর জমিতে বারি শরিষা-১৪ চাষ করেছেন। তিনি বলেন, শরিষা চাষে পরিশ্রম কম। আলুতে যেমন উৎপাদনের, দাম পাবার ঝুঁকি থাকে। শরিষাতে সেই ঝুঁকি নেই। এজন্য আমন ধান কাটার পরে আলু বাদ দিয়ে শরিষা লাগিয়েছি। তবে শুকিয়ে বিক্রি করতে পারলে তিনহাজার টাকার উপরে প্রতিমণের দাম পাওয়া যায়। জানালেন, কৃষি অফিস থেকে প্রদর্শনী প্লট পেয়েছিলেন। প্রণোদনা হিসেবে পেয়েছেন বীজ ও সার।  চিরিরবন্দর উপজেলার অমরপুর এলাকার শরিষা চাষী অমল চন্দ্র রায় বলেন, অপেক্ষাকৃত নিচু রস ধরে রাখে এমন মাটিতে শরিষার আবাদ ভাল হয়। জানালেন, এবার ৪বিঘা মাটিতে বারি- ১৫ জাতের শরিষা লাগিয়েছেন। অন্যান্য সময়ে ওই জমিগুলোতে আলু লাগাতেন। আলুতে সেচ নিড়ানী, পোকামাকড় বেশি হয়। ঝুঁকি বেশি থাকে।

 তবে শরিষায় ঝুঁকি কম। সবকিছু ঠিক থাকলে বিঘায় ৯-১০মণ পর্যন্ত শরিষা পাবেন। কৃষি বিভাগ জানান, সাম্প্রতিককালে ভোজ্য তেলের দাম বৃদ্ধি হওয়ায় কৃষি বিভাগ ‘তেল জাতীয় ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি’ ও ‘কৃষক পর‌্যায়ে উন্নতমানের ডাল-তেল ও মশলা বীজ উৎপাদন সংরক্ষন ও বিতরণ’ দুটি প্রকল্প গ্রহণ করেছেন। প্রকল্পের আওতায় চলতি মৌসুমে জেলার ৫২হাজার কৃষকের প্রত্যেককে প্রণোদনা হিসেবে ১ কেজি করে শরিষার বীজ, ১০কেজি ড্যাব ও ১০কেজি পটাশ সার সরবরাহ করা হয়েছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক নুরুজ্জামান বলেন, দিনাজপুরে কয়েক বছর ধরে শরিষার আবাদ বাড়ছে। 

ভোজ্যতেল উৎপাদন বাড়ানোর ক্ষেত্রে কৃষি বিভাগ অধিক গুরুত্ব প্রদান করেছে। কৃষক পর্যায়ে উদ্বুদ্ধকরণ সমাবেশ, গবেষণা, সেমিনার করা হয়েছে। এছাড়াও জেলায় ৮৫টি এসএমই সংগঠন(প্রতিটিতে ৪জন সদস্য) করা হয়েছে। যারা বেশি পরিমানে শরিষা উৎপাদন করে থাকেন। কৃষিবিভাগ তাদের উৎপাদিত শরিষা বীজ বাজারজাতকরনে মোড়ক, ওজন মেশিনসহ প্যাকেজিংয়ের যাবতীয় সরঞ্জামাদি সরবরাহ করছে। তিনি বলেন, এবার  উৎপাদনের যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে তা ছাড়িয়ে যাবে। কারণ এবার উচ্চ ফলনশীল জাত রাবি-১৮জাতের শরিষা বেশি চাষ হয়েছে। 

যাযাদি/ এস