বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

ধামইরহাটে আমন ধানের দাম পেয়ে কৃষকের মুখে হাসি

রেজুয়ান আলম, ধামইরহাট (নওগাঁ) প্রতিনিধি
  ১৭ নভেম্বর ২০২০, ২০:২৪

শস্যভান্ডার খ্যাত নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলা। এ উপজেলায় গ্রামে গঞ্জের মেঠো পথের চার দিকে তাকালেই দেখতে পাওয়া যায় সাদা নীল মেঘের কোলে উঁকি মারে মাঠ ভরা সোনালী পাকা ধান। প্রতি বছর এ সময় পাকা ধানের মৌ মৌ গন্ধে মৃদুল হাওয়ায় দোল খায় কৃষকের হাসি। আর দল বেঁধে ঘোমটা পরা নববধুর ঢেকির পাড়ে চালের আটা ভাঙ্গার ধুম পড়ে যায়।

এবার প্রকৃতির বিরূপ প্রবাহে দফায় দফায় ভারী বৃষ্টি ও বন্যায় ধানের বীজতলা নষ্ট হলেও কৃষকের ঘামঝরা পরিশ্রমে মাঠ ভরা সোনালী ধানে ভালো দাম পেয়ে হাসি ফুটেছে কৃষকের মুখে। মাঠের নতুন ফসল ঘরে তুলতে কৃষক কৃষাণীর যেন দম ফেলার সময়টুকুও নেই। সে কারণেই মাঠ ভরা ধান কাটা ও মাড়াই কাজে ধান চাষীরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন।

অন্যদিকে ঢেকিতে পার দেওয়া উঠোন ভরা সিদ্ধ ধান ভাঙ্গা অটায় ভাপা পিঠা আর বাহারি খাবারের আয়োজনে ষড়ঋতুর দেশে চলছে এখন হেমন্ত। চিরাচরিত গ্রামবাংলায় নবান্ন উৎসবে মেয়ে-জামাইয়ের আগমণ যেন প্রাণ ফিরে পায় গ্রাম বাংলায় অবারিত কৃষক-কৃষাণীর কোল।

উপজেলায় পুরোপুরি ধান কেনা বেচা শুরু না হলেও ফরিয়া ধান ব্যবসায়ীরা কৃষকের মাঠে মাঠে গিয়ে ধান ক্রয় করতে দেখা গেছে। তবে ধান কাটার এই মৌসুমে প্রথম ধাপে কৃষকেরা ধানের চড়া মূল্য পেলেও ধীরে ধীরে দাম কমে ধানের মূল্য এসে দাঁড়ায় প্রায়ই অর্ধেকে। এতে দেখা গেছে প্রতিবছর প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকেরা ধান চাষে সার বীজ ও শ্রমিকের মূল্য পরিশোধ করতে গিয়ে রীতিমতো হিমশিম খেয়ে যায়।

প্রতিবছর এ উপজেলার মাঠ ভরা ফসল দেশের চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ও সিন্ডিকেটের কাছে কৃষকরা বরাবরই জিম্মি হয়ে পরেন। অন্যদিকে সরকারের বেঁধে দেওয়া ধানের সঠিক মূল্য না পেয়ে বিভিন্ন এনজিও থেকে নেওয়া অর্থ পরিশোধ করতে গিয়ে কৃষকেরা হয়ে পড়ছেন সর্বস্বান্ত।

ধান ব্যবসায়ী শামসুজ্জোহা হাকিম বলেন, এখনো আমরা ধান কেনা বেচা শুরু করিনি। তবে স্বর্ণা-৫ ৯শ ৫০ থেকে হাজার ৫০ টাকা, বিনাধান-৭ হাজার ৫০ থেকে ১১শ ৪০, উচ্চ ফলনশীল ধানী গোল্ড ৯শ ৫০ থেকে ১ হাজার টাকা, কাটারি ভোগ ১১শ থেকে ১১শ ৫০ টাকায় বেচাকেনা চলছে। তিনি বলেন সিন্ডিকেট বলে কিছু নেই। আবহাওয়া ও আমদানির উপরে ধানের দাম ওঠানামা করে।

উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এবার উপজেলায় রোপা আমন ধানের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৯ হাজার ৭শত নব্বই হেক্টর। ১৯ হাজার ৩শত ৫ হেক্টর বিভিন্ন জাতের ব্রি ধান, বিনা ধান, স্বর্ণা, কাটারিভোগ, বি আর, জিরাশাইল স্থানীয় জাত চিনি আতপ, হাইব্রিড জাত, ধানী গোল্ড, এ্যরাইজসহ সর্বমোট ২০ হাজার ১শ ৪৫ হেক্টর জমিতে আবাদ হলেও অতি বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা ও বন্যায় উপজেলার ইসবপুর ইউনিয়নে ৭৪ হেক্টর, জাহানপুর ৩৫, আলমপুর ২ ও ধামইরহাটে ১২ হেক্টর জমির ধান পুরোপুরি নষ্ট হওয়ায় মোট ২০ হাজার ২২ হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধান অর্জিত হয়েছে। রোপা আমন মৌসুমে সরকার প্রতিটন ধান ২৬ হাজার টাকায় ক্রয় করবেন বলে জানা গেছে।

কৃষক আব্দুল হাই দুলাল জানান, এর আগে আমি আমার জমি থেকে প্রতিবছর দুইটি ফসল পেতাম। একই জমি থেকে বছরে তিন থেকে চারটি ফসল ঘরে তোলা সম্ভব সে বিষয়ে আমার আগে জানা ছিল না। কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ প্রদানে হাইব্রিড ধানী গোল্ড লাগার পরে সরষে লাগিয়েছিলাম তারপর ওই জমিতে খরালি ইরি লাগালাম। এই ধান কাটার পরে কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে একই জমিতে বর্ষালি ধান লাগিয়ে আমি সফল হয়েছি।

এ বিষয়ে কৃষি কর্মকর্তা সেলিম রেজা বলেন, সরকারের বেধে দেওয়া দরে রোপা আমন ধান কৃষকরা যেনো বেচাকেনা করতে পারেন সে বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে