শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

শীতকালীন সবজি চাষে সফল তালার কৃষক

তালা (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি
  ০৯ নভেম্বর ২০২০, ১৭:৫৮

চলতি মৌসুমে সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলায় শীতকালীন সবজি চাষ করে লাভবান হচ্ছেন স্থানীয় কৃষকরা। ফুলকপি, বাধাঁকপি, লালশাক, মূলা, বেগুন, আবার মাচায় ঝুলছে লাউ, শিম, পটল, শসা ও করলা সহ নানা রকমের নতুন নতুন শীতের সবজি ক্ষেত।

এমন সবুজ ক্ষেতের দৃশ্য এখন হরহামেশাই চোখে পড়ছে তালা উপজেলার খলিলনগর, খেশরা, জালালপুর, নগরঘাটা সহ তালা সদরের বেশিরভাগ গ্রামে। চলতি মৌসুমে সবজি চাষ করে লাভের মুখ দেখেছেন অনেক কৃষক। এ বছর অসময়ে প্রচুর বৃষ্টিপাতের কারণে অনেকে আবার পড়েছেন ক্ষতির মুখে।

চাহিদা মেটাতে অনেক গৃহিণী বসতভিটায় সবজি চাষ করছেন। বসতভিটার আশপাশে এসব সবজির চাষ করতে বেশি জায়গারও প্রয়োজন হয় না।

পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে এসব সবজি বাজারে বিক্রি করে বাড়তি আয় করেছেন কৃষকরা। লাভবান হওয়ায় দিন দিন বাড়ছে সবজির চাষবাদ।

তালা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে শুধু তালা উপজেলায় ১৬৬০ হেক্টর জমিতে সবজির আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে বেগুন ১৫৪ হেক্টর, ফুলকপি ১৮৫, বাঁধাকপি ১৬৫, বিটকপি ৫৫, টমেটো ৭৫, ওলকপি ১৬০, মুলা ১০৭, শিম ১০৮, লাউ ১৭৪, গাজর ২৬, পালন শাক ৮৫, লালাশাক ৯৫, সবুজ শাক ২০, মিষ্টি কুমড়া ১২৯, চালকুমড়া ৩২,বরবটি ৫১, করলা ৩৯, উচ্ছে ৩৬, ঢেড়শ ৪৪, ও ক্ষিরা ৩০ হেক্টরসহ অবশিষ্ট জমিতে বিভিন্ন ধরনের সবজির চাষ করেছে কৃষক। এ ছাড়া আলু ৫৫০ হেক্টর জমিতে ও ১৭৫ হেক্টর জমিতে ফরিদপুরি, তাহেরপুরি জাতের পেঁয়াজ চাষ হয়েছে।

কৃষক আব্দুর হালিম শেখ বলেন, ‘আমি চলতি মৌসুমে ৩ বিঘা জমিতে ফুলকপির চাষ করেছি। ব্যয় হয়েছে ৮০-৯০ হাজার টাকা। অসময়ে বৃষ্টিপাতের কারণে ফসল তৈরি করতে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। বৃষ্টির কারনে ফুলকপিতে মাজরা পোকার আক্রমণ হলে স্থানীয় তালা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে পরামর্শে পোকা দমন করতে সক্ষম হয়। তিনি আরো বলেন, ফুলকপি জমি থেকেই ৮৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে প্রায় চার লক্ষ টাকার মতো বিক্রয় হবে। ভালো দাম পাওয়ায় এ ফসল থেকে লাভের আশা করছি।

অন্য দিকে কৃষক ফজলুর রহমান বলেন, বৃষ্টির কারণে বিভিন্ন প্রজাতির সবজির গাছ ভালো হয়নি। গাছের শক্তিও তুলনামূলক কম। এ ফসলে লোকসানের মুখে পড়তে পারেন বলে উল্লেখ করেন তিনি । একই গ্রামের কৃষক শহিদুল গোলদার দুই বিঘা জমিতে ফুলকপির চাষ করেছেন। তার জমিতে কপির চারাগুলো সবে সতেজ হয়ে উঠছে।

কৃষক আব্দুল হান্নান সরদার, ১০ কাঠা করে মোট ২০ কাঠা জমিতে ফরিদপুরি ও তাহেরপুরি জাতের পেঁয়াজের চাষ করেছেন। পেঁয়াজের গাছগুলো এর মধ্যে অনেক বড় হয়েছে। মাস খনিকের মধ্যে এসব পেঁয়াজ জমি থেকে তুলে বাজারে বিক্রি করা যাবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন তিনি। এসব গ্রামের মাঠে প্রচুর ফরিদপুরি ও তাহেরপুরি পেঁয়াজের চাষ হলেও এবার অনেকটা কম হয়েছে।

অন্য কৃষক মোঃ শফিকুল ইসলাম জানান, এবার ফরিদপুরি পেঁয়াজের বীজের দাম অনেক চড়া। এক বিঘা জমিতে এ মৌসুমে রোপণের জন্য অন্তত্য ২৫ হাজার টাকার বীজ পেঁয়াজের প্রয়োজন হবে। এত চড়া দামে বীজ কিনে লোকসানে পড়ার শঙ্কায় আবাদ কম হয়েছে। এ ছাড়া অসময়ে বৃষ্টিতে তৈরি জমি নষ্ট হয়ে যায়। পরে ওই সব জমিতে আবারও হালচাষ করতে হচ্ছে।

উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজার ঘুরে দেখা গেছে, শীতের নতুন সবজি বেগুন ৫০ টাকা, ফুলকপি ৯০ , বাঁধাকপি ৪০, মুলা ৩০, শিম ৮০, মিষ্টি কুমড়া ৪০, পালংশাক ৪০, গাঁজর ১০০ ও শসা ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

উপসহকারী কৃষিকর্মকর্তা ইলোরা পারভীন বলছেন, পানি সাশ্রয়ী ফসলের চাষ বাড়ানো গেলে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন কমে যাবে। এতে রক্ষা পাবে পরিবেশের ভারসাম্য। এ জন্য সবজি, গমসহ পানি সাশ্রয়ী ফসল চাষে কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।

তালা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা হাজিরা খাতুন জানান, অন্যান্য বছরের তুলনায় তালায় এবার শীতকালীন সবজি চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে। এ চাষ সফল করার লক্ষ্যে ইতিমধ্যে কৃষকদের মধ্যে উন্নত জাতের বীজ, সার ও কীটনাশক সরবরাহ নিশ্চিত করা হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে