শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বাজেটে মেগা প্রকল্পে বরাদ্দ কমছে

যাযাদি রিপোর্ট
  ০৮ মে ২০২০, ০০:০০

করোনাভাইরাসের প্রভাব মোকাবিলায় একদিকে ৯৩ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনার প্যাকেজ বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ, অন্যদিকে রাজস্ব আদায়ে বড় ধরনের ঘাটতি- এই দুই কারণে আগামী অর্থবছর দশটি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে কৃচ্ছ সাধন করতে হচ্ছে সরকারকে। আগামী অর্থবছরের বাজেটে সরকারের মেগা দশটি প্রকল্পে চাহিদা থাকলেও কাঙ্ক্ষিত টাকা দিতে পারছে না অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়। ফলে প্রকল্পগুলো শেষ করার যে সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিল সরকার, সেই সময়ের মধ্যে প্রকল্পগুলোর কাজও শেষ হচ্ছে না।

পরিকল্পনা কমিশন থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে পদ্মা সেতুর জন্য পাঁচ হাজার কোটি টাকা রাখা হচ্ছে। যদিও চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) পদ্মা সেতুর জন্য রাখা হয়েছিল পাঁচ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা। সে হিসাবে পদ্মা সেতুতে বরাদ্দ কমছে ৩৭০ কোটি টাকা। করোনার প্রভাবে সরকারের অন্য সব প্রকল্প বাস্তবায়ন বন্ধ হলেও পদ্মা সেতু প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। গত সোমবার সেতুর ২৯তম স্প্যান স্থাপন করা হয়েছে। যার ফলে সেতুর চার হাজার ৩৫০ মিটার এখন দৃশ্যমান।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ-সিপিডির গবেষণায় উঠে এসেছে, চলতি অর্থবছর রাজস্ব ঘাটতি এক লাখ কোটি টাকা ছাড়াবে। বিভিন্ন খাতকে ছাড় দিতে গিয়ে আগামী অর্থবছরেও রাজস্ব আদায়ে নেতিবাচক প্রভাব থাকবে। যার ফলে পদ্মা সেতুতে চলতি অর্থবছরের তুলনায় কম টাকা বরাদ্দ দিতে হচ্ছে।

করোনার কারণে সব উন্নয়ন কর্মকান্ড স্থবির। কবে নাগাদ প্রকল্পগুলোর কাজ শুরু হবে সেটিও অনিশ্চিত। সরকারের অন্যতম একটি মেগা প্রকল্প হলো রাজধানীতে চলমান মেট্রা রেল প্রকল্প। রাজধানীর উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ মেট্রো রেল প্রকল্পটিতেও আগামী অর্থবছরে কাঙ্ক্ষিত বরাদ্দ দিতে পারছে না পরিকল্পনা কমিশন। আসছে ২০২০-২১ অর্থবছরে মেট্রো রেল প্রকল্পে পাঁচ হাজার ৬২২ কোটি টাকা রাখা হচ্ছে। অথচ চলতি অর্থবছরের এডিপিতে এই প্রকল্পে রাখা হয়েছিল সাত হাজার ২১২ কোটি টাকা। সেই হিসাবে বরাদ্দ কমছে এক হাজার ৫৯০ কোটি টাকা। জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগী সংস্থা জাইকার অর্থায়নে দেশের প্রথম এই মেট্রো রেল প্রকল্পের কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ করা নিয়ে তৈরি হয়েছে সংশয়। আগামী বছর ১৬ ডিসেম্বর প্রকল্পটি উদ্বোধনের কথা রয়েছে। কিন্তু করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে দুই মাস ধরে প্রকল্পটির কাজ পুরোপুরি বন্ধ। দৈনিক শ্রমিক ও মাসওয়ারি শ্রমিক সবাই বাড়িতে চলে গেছে। ১৬ মে পর্যন্ত সরকারি ছুটির পর আসছে ঈদুল ফিতরের ছুটি। ফলে কবে নাগাদ মেট্রো রেল প্রকল্পের কাজ পুনরায় শুরু হয় তা কেউ বলতে পারেনি। সরকারের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ মেগা প্রকল্প হলো পদ্মা রেল সংযোগ সেতু। ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই রেললাইন প্রকল্পে চলতি অর্থবছরের বাজেটে বরাদ্দ ছিল তিন হাজার ৯৯০ কোটি টাকা। কিন্তু আগামী অর্থবছরের বাজেটে সরকারের মেগা প্রকল্পটিতে বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে তিন হাজার ৮৩৪ কোটি টাকা। ফলে এই প্রকল্পে বরাদ্দ কমছে ১৫৬ কোটি টাকা।

\হমেগা প্রকল্পে সরকারের কৃচ্ছ্র সাধনের বিষয়ে জানতে চাইলে সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান বলেন, করোনার প্রভাব কাটিয়ে উঠতে সরকার ক্ষদ্র, মাঝারি, বৃহৎ শিল্পসহ কৃষি খাতে বড় ধরনের প্রণোদনা ঘোষণা দিয়েছে। বিভিন্ন খাতের জন্য ৯৩ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা সরকারকে ব্যবস্থা করতে হবে। তা ছাড়া করোনার প্রভাবে দেশের অর্থনীতি কার্যত অচল। কারখানার চাকা ঘুরছে না। বন্দর, দোকানপাট, শপিং মল, বিপণিবিতান বন্ধ। ২৬ মার্চ থেকে দেশব্যাপী চলছে টানা সাধারণ ছুটি। ফলে সরকারের ভ্যাট, আয়কর ও শুল্ক আদায়ও স্থবির। রাজস্ব আদায়ে বড় ধরনের ধস নেমেছে। যার প্রভাব থাকবে আগামী বছরও। এসব কারণে ইচ্ছা থাকলেও মেগা প্রকল্পে কাঙ্ক্ষিত টাকা দিতে পারবে না সরকার। সে জন্য সরকারকে কৃচ্ছ সাধন করতে হচ্ছে।

পরিকল্পনা কমিশন থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, সরকারের আরেক মেগা প্রকল্প হলো দোহাজারী থেকে ঘুমধুম পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণ প্রকল্প।

চলতি অর্থবছরের বাজেটে এই প্রকল্পের জন্য রাখা হয়েছিল এক হাজার ১০৫ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরের বাজেটে এই প্রকল্পের বিপরীতে এক হাজার ৫০০ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয় থেকে। কিন্তু এই টাকা পাওয়া নিয়ে আছে অনিশ্চয়তা। এ ছাড়া জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগী সংস্থা জাইকার অর্থায়নে দেশের অন্যতম কয়লাভিত্তিক বিদু্যৎকেন্দ্র মাতারবাড়ী বিদু্যৎকেন্দ্রের জন্য চলতি বাজেটে রাখা হয়েছিল তিন হাজার ৫৬ কোটি টাকা। আসছে বাজেটে এই প্রকল্পে চাহিদামাফিক টাকা দিতে পারছে না পরিকল্পনা কমিশন। চলতি অর্থবছর যে পরিমাণ বরাদ্দ রাখা আছে, সমপরিমাণ অর্থ আগামী অর্থবছর রাখা হবে বলে জানিয়েছেন কমিশনের কর্মকর্তারা। তবে রাশিয়ার অর্থায়নে চলমান দেশের সবচেয়ে বড় প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদু্যৎকেন্দ্রে চলতি অর্থবছরের তুলনায় আগামী অর্থবছর বরাদ্দ কিছুটা বাড়ছে। চলতি অর্থবছর এই প্রকল্পে বরাদ্দ ছিল ১৪ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরের বাজেটে এই প্রকল্পের বিপরীতে রাখা হচ্ছে ১৫ হাজার ৮২৮ কোটি টাকা।

পরিকল্পনা কমিশন থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার চূড়ান্ত করা হয়েছে। আগামী অর্থবছরের জন্য এডিপির আকার নির্ধারণ করা হয়েছে দুই লাখ পাঁচ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা। যা চলতি অর্থবছরের মূল এডিপির চেয়ে মাত্র ১.১৮ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে জোগান দেওয়া হবে এক লাখ ৩৪ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকা। বাকি ৭০ হাজার ৫০২ কোটি টাকা উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে পাওয়ার আশা করছে সরকার। পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আগামী অর্থবছরে কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে বরাদ্দও দেওয়া হবে কম। কৃষি ও স্বাস্থ্য খাতের প্রকল্পে গুরুত্ব দেওয়া হবে। তবে বিগত বছরগুলোতে মেগা প্রকল্পে যে হারে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল, আগামী বাজেটে তা সম্ভব নয়। পরিকল্পনা বিভাগের সচিব নূরুল আমিন কালের কণ্ঠকে বলেন, রাজস্ব আদায়ের দিক বিবেচনা করেই আমাদের এডিপি চূড়ান্ত করতে হচ্ছে। চলতি মাসের তৃতীয় সপ্তাহে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের সভায় (এনইসি) আগামী অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি অনুমোদন দেওয়ার কথা রয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<98698 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1