বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

গ্রেট ডিপ্রেশনের ছায়া মার্কিন অর্থনীতিতে

যাযাদি রিপোর্ট
  ২২ মার্চ ২০২০, ০০:০০

ক্রমেই খারাপের দিকে যাচ্ছে চলমান নভেল করোনাভাইরাস পরিস্থিতি। এতে মার্কিন অর্থনীতির অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা বাড়ছে। এমনকি তা চলে যেতে পারে ৯০ বছর আগেকার গ্রেট ডিপ্রেশনের (মহামন্দা) প্রাথমিক পর্যায়ের চেয়েও খারাপ অবস্থানে।

অনেক শিল্প-কারখানা আংশিক বা পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে পড়ায় সম্ভবত ইতিহাসের সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক সংকোচনের মুখোমুখি হতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অব্যবহিত পর প্রান্তিক অর্থনৈতিক প্রতিবেদন প্রকাশ শুরু করে মার্কিন সরকার। দেশটিতে ওই সময়ের পর সবচেয়ে বড় সংকোচনের আশঙ্কা তৈরি করেছে কভিড-১৯।

গত শতকের ত্রিশের দশকের শুরুর দিকে এক দীর্ঘায়িত পতন শুরু হয় বৈশ্বিক অর্থনীতিতে। ১৯৩২ সালে মার্কিন অর্থনীতি সংকুচিত হয়েছিল প্রায় ১৩ শতাংশ। এমনকি ওই দুর্যোগের পর্যায়েও চলে যেতে পারে আসন্ন দুর্বিপাকের মাত্রা।

ভার্জিনিয়ার ডেমোক্রেট জনপ্রতিনিধি ডন বায়ার বর্তমানে মার্কিন কংগ্রেসের জয়েন্ট ইকোনমিক কমিটির দায়িত্ব পালন করছেন। তার ভাষায়, যুক্তরাষ্ট্র এখন এমন এক পরিস্থিতির মুখোমুখি, যা ১৯৩০-এর গ্রেট ডিপ্রেশনের পর সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক সংকটে রূপ নিতে পারে।

অর্থনীতিতে ক্ষতির মাত্রা বাড়ছে। তাই ওয়াল স্ট্রিট-সংক্রান্ত পূর্বাভাসগুলো ক্রমেই খারাপ থেকে আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি নৈরাশ্য প্রকাশ করেছে জেপি মরগান। প্রতিষ্ঠানটির পূর্বাভাস বলছে, এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে যুক্তরাষ্ট্রের জিডিপি সংকুচিত হতে পারে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৪ শতাংশ।

আধুনিক যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত প্রান্তিক হিসেবে সবচেয়ে বাজে মাত্রার সংকোচন ঘটেছিল ১৯৫৮ সালের প্রথম তিন মাসে (জানুয়ারি-মার্চ)। সে মাত্রা ছিল ১০ শতাংশ। ওই সময়ে স্বল্পকালীন কিন্তু তীব্র মন্দায় ছিল মার্কিন অর্থনীতি। এক বছরেরও কম সময়ের মধ্যে কর্মসংস্থান হারিয়েছিল প্রায় ২০ লাখ মার্কিন নাগরিক।

এমনকি ২০০৭-০৯ সালের মন্দায় সবচেয়ে বাজে পরিস্থিতির কালেও মার্কিন অর্থনীতিতে সংকোচনের মাত্রা ছিল ৮ দশমিক ৪ শতাংশ। ২০০৮ সালের চতুর্থ প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) এ সংকোচনের মধ্য দিয়ে যায় যুক্তরাষ্ট্র।

জেপি মরগানের মতো এতটা না হলেও যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি নিয়ে নৈরাশ্যে ভুগছে ডয়েচে ব্যাংকও। প্রতিষ্ঠানটির হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) মার্কিন জিডিপি সংকুচিত হবে প্রায় ১৩ শতাংশ।

অন্যদিকে অক্সফোর্ড ইকোনমিকসের আশঙ্কা, এ পতনের হার দাঁড়াবে ১২ শতাংশে এবং কাজ হারাবে ১০ লাখ মানুষ। ১০ শতাংশ হারে সংকোচনের আশঙ্কা করছে ক্যাপিটাল ইকোনমিকস। এছাড়া বিনিয়োগ গবেষণা প্রতিষ্ঠান টিএস লোম্বার্ড ৮ দশমিক ৪ ও নেশনওয়াইড ৮ শতাংশ হারে সংকোচনের শঙ্কা প্রকাশ করেছে।

মার্কিন অর্থনীতি আসলে কখন ঘুরে দাঁড়াবে, সে বিষয়ে অর্থনীতিবিদদের মধ্যে যথেষ্ট দ্বিমত রয়েছে। যদিও ডোনাল্ড ট্রাম্পের হোয়াইট হাউজের বক্তব্যের সঙ্গে আসলে কেউই একমত হচ্ছেন না। বৃহস্পতিবার ডোনাল্ড ট্রাম্প কসম কেটে বলেছেন, নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আসামাত্র রকেটের গতিতে উড়তে শুরু করবে মার্কিন অর্থনীতি। একই ধরনের কথা বলছেন, ট্রাম্পের অর্থমন্ত্রী (ট্রেজারি সেক্রেটারি) স্টিভেন মানুচিনও। তার ভাষ্যমতে, বছরের চতুর্থ প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) 'গর্জনের সঙ্গে দানবীয়ভাবে' ঘুরে দাঁড়াবে মার্কিন অর্থনীতি।

তিনি বলেন, 'আমরা ভাইরাসটিকে মেরে ফেলব' এবং ফিরে আসব 'স্বাভাবিক পৃথিবী'তে।

ট্রাম্প প্রশাসন চাইছে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও ভোক্তাদের জন্য ১ লাখ কোটি ডলারের বেশি অর্থ সহায়তা দেয়ার মাধ্যমে অর্থনীতির আকাশ থেকে দুর্যোগের ঘনঘটা মুছে ফেলতে। যদিও বিক্রি কমছে। প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার সংখ্যা বাড়ছে। মাত্র তিন সপ্তাহে এক-তৃতীয়াংশ কমেছে ডাও জোনস ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যাভারেজের মান।

বর্তমান নিয়ে নৈরাশ্যে ভুগলেও এখনো ওয়াল স্ট্রিটের পূর্বাভাসদাতাদের মধ্যে ভবিষ্যৎ নিয়ে তুলনামূলক বেশি আশাবাদী ডয়েচে ব্যাংক। প্রতিষ্ঠানটি মনে করছে, বছরের শেষ ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) মার্কিন অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৫ শতাংশ। তবে এ আশা প্রকাশের পরও একটি 'কিন্তু' রেখে দিয়েছে ডয়েচে ব্যাংক। আর সেটি হলো, চলমান সংকটের অভূতপূর্ব প্রকৃতি।

অন্যদিকে টিএস লোম্বার্ডের প্রধান অর্থনীতিবিদ স্টিভ ব্‌িলেজর মতো পূর্বাভাসদাতারা মনে করছেন, ধীরগতির প্রত্যাবর্তনের আগে গ্রীষ্মকালজুড়েই সংকোচনের মধ্য দিয়ে যাবে মার্কিন অর্থনীতি। তিনি বলেন, সরকারের কোনো কর্মসূচিই এখন ক্ষতির শতভাগ পুনরুদ্ধারে সক্ষম হবে না, সেটি যত সুদূরপ্রসারীই হোক না কেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<93607 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1