মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্বের ২৫ শতাংশ বাজার দেশের সিরামিক শিল্পের

সিরামিক পণ্য উৎপাদন করছে ৬৬টি ব্র্যান্ড স্থানীয় বাজার প্রায় ৬০০০ কোটি টাকা ৫০টিরও বেশি দেশে যাচ্ছে সিরামিক পণ্য
ইমদাদ হোসাইন
  ০৮ ডিসেম্বর ২০১৯, ০০:০০

দেশের সিরামিক শিল্প বিশ্বের অন্যতম ভরসা হয়ে উঠছে। গত সাত বছরে বিশ্ববাজারের ২৫ শতাংশ বাজার দখলে নিয়েছে বাংলাদেশ। এই কয়েক বছরের এ খাতের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ২০০ শতাংশেরও বেশি।

এক দশক আগেও নামমাত্র রপ্তানি ছিল সিরামিকস পণ্যের। তবে ২০১৬ সাল থেকে পরিস্থিতি পাল্টাতে থাকে। গত তিন বছরে এ পণ্যের রপ্তানি বেড়েছে প্রায় ২০০ শতাংশ। বর্তমানে ৫০টিরও বেশি দেশে যাচ্ছে বাংলাদেশের সিরামিকস পণ্য।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য মতে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৫৮৫ কোটি টাকার পণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশী প্রতিষ্ঠান। রপ্তানি পণ্য হিসেবে এককভাবে সিরামিকস এখন সপ্তম। গত তিন বছরে প্রায় ২৬ শতাংশ করে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি রয়েছে এ খাতে। যদিও টেবিলওয়্যারই এখন পর্যন্ত মূল রপ্তানিকৃত সিরামিকস পণ্য।

বাংলাদেশ সিরামিক ম্যানুফ্যাকরাচার্স অ্যান্ড এক্সপোটার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিএমইএ) সভাপতি মো. সিরাজুল ইসলাম মোলস্না জানান, বর্তমানে দেশের বাজারের ৮৫ থেকে ৯০ ভাগ চাহিদা মেটায় সিরামিক শিল্প। আর বিশ্বের ৫০টি দেশে সিরামিক পণ্য রপ্তানি করে থাকে বাংলাদেশ। রপ্তানি আয় হয় মাসে গড়ে ৫০ মিলিয়ন ডলার।

সিরাজুল ইসলাম মেলস্না বলেন, 'সিরামিকের প্রধান বাজার ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) চীনা সিরামিকের একচেটিয়া দখল ঠেকাতে ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে ২০১৭ সালে। বিপরীতে শুল্কমুক্ত সুবিধা ভোগ করছে বাংলাদেশ। পাশাপাশি ১০ শতাংশ পর্যন্ত ইনটেনসিভ বড় প্রবৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে।'

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাংলাদেশে মূলত এখন তিন ধরনের সিরামিক পণ্য উৎপাদন হচ্ছে। টেবিলওয়্যার, টাইলস ও স্যানিটারি ওয়্যার। সিরামিক দিয়ে তৈরি হচ্ছে টাইলস, স্যানিটারিওয়্যার (বেসিন, কমোড), ফুলের টব, মটকা, কিচেন ওয়্যার, টেবিলওয়্যার, ডিনার সেট, টি সেট, কফি মগ, বাটি থেকে শুরু করে গৃহস্থালির বিভিন্ন জিনিসপত্র।

বিসিএমইএর তথ্যমতে, দেশে সিরামিক পণ্য বাজারজাত করছে ৬৬টি ব্র্যান্ড। স্থানীয় বাজারে প্রতিবছর প্রায় ৬০০০ কোটি টাকার পণ্য বিক্রি হচ্ছে। গত বছর রপ্তানিও হয়েছে ৫৮৫ কোটি টাকা।

সংগঠনটি আরও জানায়, ১৯৬০ এর দশকে পোর্সেলিন আর সিরামিকের বাসনপত্র উৎপাদনকারী তাজমা সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজ এর মাধ্যমে এ দেশে ব্যবসা শুরু হয়। আর এখন বৃহৎ শিল্পগুলোর একটিতে পরিণত হয়েছে সিরামিক খাত। সরাসরি ৫৫ হাজার কর্মীর পাশাপাশি সংযুক্ত শিল্প মিলিয়ে প্রায় ৫ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে এ খাতে। বছরে প্রায় ২৫ কোটি পিস টেবিল ওয়্যার, ১৫ কোটি স্কয়ার ফিট টাইলস এবং ৫০ লাখ পিস স্যানিটারি ওয়্যার উৎপাদন করছে স্থানীয় কোম্পানিগুলো। তবে টেবিলওয়্যার এর বড় অংশই রপ্তানি হচ্ছে ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে।

বাংলাদেশে সিরামিকস শিল্প নিয়ে সম্প্রতি একটি গবেষণা করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিষয়ক সংস্থা ইউএসএআইডি বাংলাদেশের সিরামিক পণ্য নিয়ে গবেষণায় বলছে, গত ৫ বছরে ২০০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। ২০১৮ সালের শেষে বাংলাদেশে সিরামিক শিল্পের বাজার আকৃতি দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে টাইলসের বাজার। সিরামিকের বাসনপত্রের বাজার ৫০০ কোটি টাকা ও স্যানিটারি পণ্যের বাজার ৯২০ কোটি টাকা বলে গবেষণা প্রতিবেদনে উলেস্নখ করেছে সংস্থাটি।

বিসিএমইএর তথ্য মতে, সামগ্রিকভাবে সিরামিকসের পণ্যের প্রবৃদ্ধি ২০-২২ শতাংশ। তবে শুধু টাইলসের ক্ষেত্রে এই প্রবৃদ্ধি ৩০-৩৫ শতাংশ।

সিরাজুল ইসলাম মোলস্না বলেন, 'গত ১০ বছরে দেশে কোনো টেবিল ওয়্যার প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেনি। এ সময়ের মধ্যে নতুন করে টাইলস উৎপাদনে এসেছে অন্তত ১০টি প্রতিষ্ঠান। আরো ১২টি প্রতিষ্ঠান বাজারে আসার অপেক্ষায়।'

বিসিএমইএ এর তথ্য মতে, টেবিল ওয়্যার, টাইলস ও স্যানিটারি ওয়্যার মিলিয়ে এখন দেশের বাজারে সবার শীর্ষে আছে গ্রেটওয়াল সিরামিকস। প্রতিষ্ঠানটি বছরে প্রায় দেড় কোটি স্কয়ার ফিট টাইলস ও ১০ লাখ পিস চারু ব্র্যান্ডের স্যানিটারি ওয়্যার উৎপাদন করছে। সম্প্রতি থাইল্যান্ডের বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ড কোটোর কারখানা স্থাপন করেছে গ্রেটওয়্যাল। টেবিল ওয়্যার উৎপাদনেরও পরিকল্পনা করছে তারা।

পণ্যভেদে বাজার অংশীদারিত্বের শীর্ষ প্রতিষ্ঠান বিচার করলে টেবিলওয়্যারে শীর্ষ অবস্থানে আছে বেক্সিমকো গ্রম্নপের শাইনপুকুর সিরামিকস। ২০১৮ সালে কোম্পানিটির টার্নওভার ১৫২ কোটি টাকা। ৫০০ কোটি টাকার মোট বাজারে এর অংশীদারিত্ব প্রায় ৩০ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে মুন্নু সিরামিকস। গত বছর মুন্নু সিরামিকসের বিক্রি ছিল ১৪০ কোটি টাকা। এছাড়া ফার সিরামিকস, স্টার সিরামিকসসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের উলেস্নখযোগ্য বাজার অংশীদারিত্ব রয়েছে।

টাইলসের ক্ষেত্রে গ্রেটওয়্যালের পরই রয়েছে এক্স মনিকা, বছরে ১ কোটি ২০ লাখ স্কয়ার ফিট টাইলস উৎপাদন করে প্রতিষ্ঠানটি। এরপর আকিজ সিরামিকসের উৎপাদন বছরে ১ কোটি ১০ লাখ স্কয়ারফিট। আরএকে সিরামিকসের ৮০ লাখ স্কয়ারফিট, স্টার সিরামিকসের ৮৫ লাখ স্কয়ারফিট, চায়না বাংলা সিরামিকসের ৭৫ লাখ স্কয়ার ফিট, ডিবিএল সিরামিকসের ৬৫ লাখ স্কয়ার ফিট।

স্যানিটারি ওয়্যারের বাজারে শীর্ষ প্রতিষ্ঠান আবুল খায়েল গ্রম্নপ। গ্রম্নপটির স্টেলা ব্র্যান্ড দেশের বাজারে শীর্ষ স্যানিটারি ওয়্যার বিক্রেতা। বছরে প্রায় ২০ লাখ পিস স্যানিটারি ওয়্যার উৎপাদন করছে তারা। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে আরএকে সিরামিকস। তাদের উৎপাদন সক্ষমতা ১৫ লাখ পিস।

একজন রপ্তানিকারক জানান, রপ্তানি বাজার সম্প্রসারণ ও স্থানীয় বাজার দখলে কাঁচামাল ও উপকরণের ওপর থেকে আমদানি শুল্ক কমানো যেতে পারে। বিদেশ থেকে তৈরি সিরামিক পণ্যের আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক বাড়ানো ও দেশীয় টাইলস্‌ উৎপাদনে আরোপিত ১৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহার করা উচিত।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<78948 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1