বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সরকারের কাছে ১১০৩ কোটি টাকা চায় বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়

নতুনধারা
  ০৭ ডিসেম্বর ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট

রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল শ্রমিক-কর্মচারীদের বকেয়া পরিশোধ এবং পাট কেনার অর্থ পেতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের শরণাপন্ন হয়েছে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়। এবার সব মিলিয়ে এক হাজার ১শ ৩ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে। টাকা পেলে বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের (বিজেএমসি) শ্রমিকদের বেতন-ভাতা দিয়ে আন্দোলন বন্ধ করাসহ নতুন পাট কেনা সম্ভব হবে বলে অর্থমন্ত্রণালয়কে জানানো হয়।

বিজেএমসির পাটকলগুলোর পাটের বকেয়া পরিশোধ, কমচারী ও কর্মকর্তাদের মজুরি, বেতন-ভাতা বকেয়া থাকায় বর্তমানে পাট ব্যবসায়ী, শ্রমিক কর্মচারীরা দাবিদাওয়া বাস্তবায়নের জন্য ঘেরাও, অবরোধ, কর্মবিরতি আর মানবন্ধনের মতো কর্মসূচি পালন করছেন। ফলে এ খাতে অশান্তি চরম আকার ধারণ করেছে।

বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে বকেয়া পরিশোধ ও নতুন পাট ক্রয়ে এক হাজার ১শ ৩ কোটি টাকা অর্থমন্ত্রণালয়ে চাওয়া হয়েছে। এর মধ্যে মৌসুমি পাট ক্রয়ের জন্য এক হাজার কোটি টাকা। এবং শ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের বকেয়া মজুরি ও বেতন-ভাতা পরিশোধের জন্য ১শ ৩ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে।

শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মুন্নুজান সুফিয়ান বলেছেন, বিজেএমসির বর্তমান পরিস্থিতি বিষয়ে এক জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় শ্রমিক, কর্মচারীদের বকেয়া মজুরি, বেতন-ভাতা, পাট ক্রয় এবং পাট ব্যবসায়ীদের বকেয়া পাওনা পরিশোধের জন্য অর্থ বিভাগে অর্থ বরাদ্দ চেয়ে পত্র দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সে অনুযায়ী পত্র দেয়া হয়েছে।

বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধের দাবিতে প্রথম ৫ মে থেকে উৎপাদন বন্ধ রেখে আন্দোলন করে খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের শ্রমিকরা। পরে পাটকল শ্রমিক লীগ এবং সিবিএ ও সিবিএবহির্ভূত (নন-সিবিএ) নেতাদের আহ্বানে ১৩ মে থেকে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে এই আন্দোলন।

বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের অধীন বিজেএমসির আওতায় ২৬টি পাটকলের মধ্যে বর্তমানে চালু আছে ২৫টি। এর মধ্যে ২২টি পাটকল ও ৩টি ননজুট কারখানা। পাটকলগুলোতে গত বছরের জুন পর্যন্ত ২৭ হাজার ৭২১ জন স্থায়ী শ্রমিক এবং ৩ হাজার ৭৩০ জন কর্মচারী ও কর্মকর্তা ছিলেন। এছাড়া তালিকাভুক্ত ২৩ হাজার ২৭৮ জন বদলি শ্রমিক ও ৬ হাজার ৫৪৮ জন দৈনিকভিত্তিক শ্রমিক কাজ করেন।

লোকসানের চক্র থেকে বের হতে পারছে না রাষ্ট্রায়ত্ত ২২টি পাটকল। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে পাটকলগুলো ৪৬৬ কোটি টাকার লোকসান গুনেছে এবং চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জুলাই থেকে ফেব্রম্নয়ারি পর্যন্ত আট মাসেই লোকসান হয়েছে ৩৯৫ কোটি টাকা।

বিজেএমসি জানায়, দুই অর্থবছর ধরে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোর আয় কমছে। পাট ও পাটপণ্য রপ্তানি ও স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১ হাজার ১৯৮ কোটি টাকা আয় করে পাটকলগুলো। পরের অর্থবছরে সেটি কমে ১ হাজার ১৯০ কোটি টাকায় দাঁড়ায়। গত বছর আরও কমে আয় হয়েছে ১ হাজার ১৬৪ কোটি টাকা।

গত অর্থবছরে বিজেএমসির আয় ছিল ১ হাজার ১৭৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৫৪ শতাংশ বা ৬৩৯ কোটি টাকা শ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকর্তার মজুরি ও বেতন বাবদ ব্যয় হয়েছে। বর্তমানে শ্রমিকের মাসিক মূল মজুরি ৪ হাজার ১৫০ টাকা। ২০১৫ সালের মজুরি স্কেল বাস্তবায়িত হলে মাসিক নিম্নতম মজুরি ৮ হাজার ৩০০ টাকায় দাঁড়াবে।

জানা গেছে, সরকারি পাটকলে লোকসানের বড় কারণ কাঁচা পাট কেনায় অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতি। পাটকলগুলো পাট কেনে দেরিতে ও বেশি দামে। এছাড়া সরকারি পাটকলের উৎপাদনশীলতা কম, উৎপাদন খরচ বেশি, যন্ত্রপাতি পুরানো এবং বেসরকারি খাতের তুলনায় শ্রমিকের মজুরি বেশি। লোকসান ও অব্যবস্থাপনার কারণে শ্রমিকদের মজুরি দিতে পারে না পাটকলগুলো। অবিক্রীত পণ্য গুদামে পড়ে থাকে।

বিজিএমসি সূত্র জানায়, প্রতি বছরই পাটের মৌসুমে কাঁচাপাট কিনতে ও শ্রমিকের বেতন-ভাতা দিতে অর্থমন্ত্রণালয়ের শরণাপন্ন হতে হয় বিজেএমসিকে। গত এক দশকে আর্থিক সংকট কাটাতে করপোরেশনকে ৭ হাজার ৪৭৭ কোটি টাকা দিয়েছে সরকার।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<78706 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1