শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ঘুরে দাঁড়াচ্ছে পাট খাত

জুলাই-অক্টোবরে ৩১ কোটি ৪৪ লাখ ডলারের পাটপণ্য রপ্তানি হয়। যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৮ দশমিক ৮৮ শতাংশ বেশি
ইমদাদ হোসাইন
  ১৭ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০

রপ্তানি আয় বাড়াতে সরকারি উদ্যোগ, পাট পণ্যের বৈচিত্র্যায়ন, মানসম্পন্ন কাঁচামালের সহজলভ্যতা ও শক্ত ব্যবস্থাপনার কারণে দীর্ঘদিন ধুঁকতে থাকা পাট খাত ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে এ খাতের রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধি গত বছরের একই সময়ে চেয়ে ইতিবাচক।

তথ্য অনুযায়ী, জুলাই থেকে অক্টোবর মাসে ৩১ কোটি ৪৪ লাখ ডলারের পাটপণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৮ দশমিক ৮৮ শতাংশ বেশি। একই সময়ের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ২১ শতাংশ বেশি। বিশ্ববাজারের চাহিদা অনুযায়ী বহুমুখী পাটপণ্য উৎপাদনে সক্ষমতার অভাবকে এই খাতের মূল সমস্যা বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

ইপিবির তথ্য বলছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে পাট খাতের রপ্তানি আয় কমেছিল ২০ শতাংশ। ওই সময়ে ৮১ কোটি ৬২ লাখ ডলারের পাটপণ্য রপ্তানি করেছিল বাংলাদেশ, যা আগের অর্থবছরের (২০১৭-১৮) অর্থবছরের তুলনায় অনেক কম। ওই অর্থবছরে (২০১৭-১৮) মোট ১০২ কোটি ২৬ লাখ টাকার পাটপণ্য রপ্তানি হয়।

বাংলাদেশ জুট গুডস এক্সপোটার্স অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র সহসভাপতি লুৎফুর রহমান যায়যায়দিনকে বলেন, পাট পণ্যের ইতিবাচক ধারায় আসার কারণ হলো আন্তর্জাতিক বাজারে পাট সুতার দাম বাড়া ও ডলারের ভ্যালুয়েশন। এই দুটো কারণেই পাট খাতে কিছুটা প্রবৃদ্ধি বেড়েছে। তবে শঙ্কা এখনো কাটেনি।

তিনি আরও বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে পাটের দাম বাড়তে থাকলে ক্রেতারা কম কেনেন। ফলে চাপের মুখে পড়েন দেশের রপ্তানিকারকরা। পাট খাতে সামান্য প্রবৃদ্ধি হলেও ভালো নেই রপ্তানিকারকরা। সরকারের সার্বিক ব্যবস্থাপনা এখনো অপ্রতুল। আর দেশের বাজারে যারা পাটপণ্য সরবরাহ করেন তারাও ভালো নেই। পলিথিনের সহজলভ্যতার কারণে পাটের দিকে মানুষের আগ্রহ কম। পলিথিন বাজার থেকে সরাতে সরকারের উদ্যোগ অপ্রতুল বলেও জানান তিনি।

দেশের রপ্তানি আয়ের ক্ষেত্রে পোশাক ও চামড়া খাতের পরই পাট খাতের অবস্থান। বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশনের (বিজেএমসি) তথ্যমতে, ২০১৭ সালে ৯ দশমিক ২ মিলিয়ন বেল পাট উৎপাদন হয়েছিল, যা ২০১৬ সালের চেয়ে ৫ মিলিয়ন বেল বেশি। দেশের বাজারে ২৪০ প্রকারের পাটপণ্য উৎপাদন হয়ে থাকে। গড়ে প্রতি বছর ৬ লাখ ৬৩ হাজার ইউনিট পণ্য উৎপাদিত হয়।

ভারতের অ্যান্টি ডাম্পিং শুল্ক, উৎপাদন খরচ বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন কারণে পাট পণ্য রপ্তানিতে মন্দাভাব বিরাজ করছিল বহুদিন থেকেই। তবে রপ্তানি উন্নয়ন বু্যরোর (ইপিবি) তথ্য বলছে চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ৯ শতাংশ।

পাট খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আমাদের দেশে সবচেয়ে বেশি রপ্তানি আয় পোশাক খাত থেকে হলেও পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানির গুরুত্ব অনেক বেশি। পোশাক খাত থেকে অর্জিত রপ্তানি আয়ের বড় অংশ চলে যায় কাঁচামাল আমদানিসহ কনসালটেন্সি ফি ও অন্যান্য সেবা বাবদ। অন্যদিকে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি আয়ের পুরো অংশই দেশে থেকে যায়। তাই এ বিষয়ে সরকার ও পাট খাতের সঙ্গে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসতে হবে। পাট ও পাটজাত পণ্য উৎপাদন যেহেতু শ্রমঘন তাই এ খাত কর্মসংস্থান সৃষ্টিতেও বড় ভূমিকা রাখতে পারে।

জানা গেছে, ইউরোপসহ পশ্চিমা দেশের জনগণ প্রাকৃতিক তন্তু ব্যবহারের প্রতি সচেতন হওয়ায় সেখানে পাট পণ্যের প্রতি আগ্রহ বাড়ছে। বর্তমানে দেশে রাষ্ট্রায়ত্ত খাতে মোট ২২টি পাটকল চালু রয়েছে এবং বেসরকারি খাতে প্রায় ২০০ পাটকল আছে। বর্তমানে আফগানিস্তান, আলজেরিয়া, অস্ট্রিয়া, বেলজিয়াম, বেনিন, ব্রাজিল, বুলগেরিয়া, কানাডা, চিলি, চীন, কংগো, কোস্টারিকা, মিসর, ইতালি, ইন্দোনেশিয়া, ইথোপিয়া, গাম্বিয়া, জার্মানি, গোয়েতেমালা, হাইতি, ভারত, আয়ারল্যান্ড, ইরান, জাপান, জর্ডান, কোরিয়া, লিবিয়া, মালয়েশিয়া, মেক্সিকো, মরক্কো, মিয়ানমার, নেদারল্যান্ড, পাকিস্তান, পোল্যান্ড, পর্তুগাল, রোমানিয়া, রাশিয়া, সৌদি আরব, সুদান, দক্ষিণ আফ্রিকা, তাইওয়ান, তাজাকিস্তান, থাইল্যান্ড, তুরস্ক, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, উগান্ডা, উজবেকিস্তান ও ভিয়েতনামে বাংলাদেশ পাট ও পাটপণ্য রপ্তানি করছে।

২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য মোট ৮২ কোটি ৪০ লাখ ডলারের পাট পণ্য রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ইপিবি। এর মধ্যে ৩১ কোটি ৪৪ লাখ ডলারের পাটপণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। তবে রপ্তানি বাড়াতে পণ্য উৎপাদনে বৈচিত্র্য আনার বিকল্প নেই বলে মনে করছেন জুট মিলস করপোরেশনের কর্মকর্তারা। বিশ্বের ৫০টি দেশে পাট ও পাটপণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ। রপ্তানি বাড়াতে নতুন বাজার খোঁজার প্রয়োজন দেখছে জুট মিলস করপোরেশন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<75843 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1