শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

১৮ দিনেই এক বিলিয়ন রেমিট্যান্স

যাযাদি রিপোর্ট
  ২২ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০

এ নিয়ে চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের সাড়ে ৯ মাসে রেমিট্যান্সের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৪৫০ কোটি (১৪.৫০ বিলিয়ন) ডলার। রপ্তানি আয়ে ধাক্কা খেলেও প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স প্রবাহে ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রয়েছে। চলতি মাসের ১৮ দিনেই ১০০ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন তারা। এ নিয়ে চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের সাড়ে ৯ মাসে রেমিটেন্সের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৪৫০ কোটি (১৪.৫০ বিলিয়ন) ডলার।

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, এই অর্থবছরে রেমিট্যান্সের পরিমাণ ২০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে।

চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) ৪৫১ কোটি ৮ লাখ (৪.৫১ বিলিয়ন) ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।এই অংক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৬ দশমিক ৫৯ শতাংশ বেশি। প্রতিবছর দুই ঈদের পর রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে যায়। আগস্টে কোরবানির ঈদের পর ধারণা করা হয়েছিল, সেপ্টেম্বরে প্রবাসীরা কম রেমিট্যান্স পাঠাবেন। কিন্তু এবার তেমন হয়নি। সেপ্টেম্বরে ১৪৬ কোটি ৮৪ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন তারা। যা মাসের হিসাবে বাংলাদেশের ইতিহাসে চতুর্থ সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স।

এর আগে গত মে মাসে রোজার ঈদকে সামনে রেখে ১৭৪ কোটি ৮১ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। যা ছিল মাসের হিসাবে বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।

দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স এসেছিল জুলাই মাসে; ১৫৯ কোটি ৭৭ লাখ ডলার। তৃতীয় সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স এসেছিল ২০১৮ সালের মে মাসে ১৫০ কোটি ৫০ লাখ ডলার।

আর চলতি অক্টোবর মাসের ১৮ দিনে (১ অক্টোবর থেকে ১৮ অক্টোবর পর্যন্ত) ৯৯ কোটি ৮৫ লাখ ডলার (প্রায় ১ বিলিয়ন) রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। সবমিলিয়ে ২০১৯-২০ অর্থবছরের ৯ মাস ১৮ দিনে এক হাজার ৪৪৩ কোটি ৫১ লাখ (১৪.৪৩ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স এসেছে বাংলাদেশে। দুই শতাংশ হারে প্রণোদনা, জনশক্তি রপ্তানি বৃদ্ধি এবং বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স প্রবাহে সুখবর দিয়ে শেষ হয় ২০১৮-১৯ অর্থবছর। গত অর্থবছরে আগের বছরের চেয়ে ৯ দশমিক ৬০ শতাংশ বেশি রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা।

২০১৭-১৮ অর্থবছরে রেমিট্যান্সে প্রবৃদ্ধি ছিল আরও বেশি; ১৭ দশমিক ৩২ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, গত অর্থবছরের ধারাবাহিকতায় চলতি অর্থবছরেও রেমিট্যান্স বাড়ছে। সাধারণত ঈদের পর প্রবাসীরা কম রেমিট্যান্স পাঠান। কিন্তু এবার দুই ঈদের পরও রেমিট্যান্স বেড়েছে। 'এটা খুই ভালো খবর। প্রণোদনা দেয়ার কারণেও রেমিট্যান্স বাড়ছে। এ ছাড়া বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার হয়েছে। সেসব দেশে অবস্থানকারী আমাদের প্রবাসীরা এখন বেশি মজুরি পাচ্ছেন; বেশি অর্থ দেশে পাঠাচ্ছেন।'

এ ছাড়া সাম্প্রতিক সময় জনশক্তি রপ্তানি বাড়ায় রেমিট্যান্স প্রবাহে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে বলে মনে করেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম।

৭ অক্টোবর 'বাংলাদেশ ব্যাংক রেমিট্যান্স অ্যাওয়ার্ড' প্রদান অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল বলেন, সারা বিশ্বে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স আহরণ করে ভারত। যার পরিমাণ প্রায় ৮০ বিলিয়ন ডলার। এরপর দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে শ্রীলংকা, তারা বছরে ৬৭ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স অর্জন করে। 'অথচ আমরা বছরে মাত্র ১৫-১৬ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স আহরণ করি। রেমিট্যান্স বাড়ানোর বিষয়ে আমাদের আরও নজর দিতে হবে।' 'তবে বর্তমানে যে প্রবৃদ্ধি হচ্ছে, এতে করে এবার ২০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হবে বলে আশা করছি।'

\হবাংলাদেশ ব্যাংক রোববার রেমিট্যান্সের যে তথ্য প্রকাশ করেছে, এতে দেখা যায়, ১ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্সের মধ্যে ২২ কোটি ৩৮ লাখ ডলার এসেছে রাষ্ট্রায়ত্ত চার বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে। বিশেষায়িত কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে এক কোটি ৯৫ লাখ ডলার। ৪০টি বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৭৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার। ৯টি বিদেশি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে এক কোটি দুই লাখ ডলার।

প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সে ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে। প্রবাসীরা ১০০ টাকা দেশে পাঠালে দুই টাকা প্রণোদনা পাবেন। বাজেটে এ জন্য তিন হাজার ৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো রেমিট্যান্সে এ ধরনের প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক এ-সংক্রান্ত একটি নীতিমালা ঘোষণা করেছে। ৬ আগস্ট সেটা প্রকাশ করা হয়েছে; এতে বলা হয়েছে, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সে প্রণোদনা পেতে এক হাজার ৫০০ ডলার পর্যন্ত কোন ধরনের কাগজপত্র লাগবে না।

তবে রেমিট্যান্সের পরিমাণ এই অংকের বেশি হলে প্রাপককে প্রেরকের পাসপোর্টের কপি এবং বিদেশি নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠানের নিয়োগপত্র অবশ্যই জমা দিতে হবে। আর ব্যবসায়ী ব্যক্তির ক্ষেত্রে ব্যবসার লাইসেন্সের কপি দাখিল করতে হবে।

গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এক হাজার ৬৪১ কোটি ৯৬ লাখ (১৬.৪২ বিলিয়ন) ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।

এই অংক আগের বছরের (২০১৭-১৮) চেয়ে ৯ দশমিক ৬ শতাংশ এবং অতীতের যেকোনো বছরের চেয়ে বেশি। বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনই এক বছরে এই পরিমাণ রেমিট্যান্স আসেনি। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এক হাজার ৪৯৮ কোটি ১৭ লাখ (১৪.৯৮ বিলিয়ন) ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী প্রবাসীরা। ওই অংক ২০১৬-১৭ অর্থবছরের চেয়ে ১৭ দশমিক ৩২ শতাংশ বেশি ছিল।

রিজার্ভ ৩২.২০ বিলিয়ন ডলার

রেমিট্যান্স বাড়ায় বাংলাদেশ ব্যাংকের বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়নও (রিজার্ভ) সন্তোষজনক অবস্থায় রয়েছে। রোববার রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩২ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার।

অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) আগস্ট-সেপ্টেম্বর মেয়াদের এক বিলিয়ন ডলারের বেশি আমদানি বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ ৩২ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে এসেছিল। গত কয়েকদিনে বেড়ে তা ফের ৩২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে।

বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, ইরান, মিয়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলংকা ও মালদ্বীপ- এই ৯টি দেশ বর্তমানে আকুর সদস্য। এই দেশগুলো থেকে বাংলাদেশ যেসব পণ্য আমদানি করে, তার বিল দুই মাস পরপর আকুর মাধ্যমে পরিশোধ করতে হয়।

চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) রপ্তানি আয় কমেছে ৩ শতাংশ। এই তিন মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় কমেছে ১১ শতাংশ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<72180 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1