বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ডিএসইর সার্ভিল্যান্স বিভাগের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ

আহমেদ তোফায়েল
  ২০ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০
ডিএসই ভবন, ঢাকা -ফাইল ছবি

অনেক কোম্পানির শেয়ারদর অস্বাভাবিকভাবে বাড়লেও ডিএসইর সার্ভিল্যান্স বিভাগের ভূমিকা এক্ষেত্রে প্রশ্নবিদ্ধ বলে অভিযোগ করছেন ব্রোকার এবং বিনিয়োগকারীরা। পাশাপাশি এখনো লেনদেন চলাকালে স্পর্শকাতর তথ্য ফাঁস হওয়ার বিষয়ে ডিএসই সতর্ক নয় বলে মনে করেন তারা। অথচ বাজারে অস্বাভাবিক লেনদেনের সঙ্গে জড়িত কারসাজি চক্রকে শনাক্ত করার দায়িত্ব হচ্ছে সার্ভিল্যান্স বিভাগের।

অন্যদিকে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর দরবৃদ্ধি নিয়ে প্রাথমিক নিয়ন্ত্রক সংস্থা ঢাকা স্টক একচেঞ্জের (ডিএসই) শোকজ নিয়ে বিরূপ আচরণের অভিযোগ রয়েছে।

গত আগস্ট মাসের একটি ঘটনার উলেস্নখ করে এক বিনিয়োগকারী জানান, শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির দরবৃদ্ধি নিয়ে ঢাকা স্টক একচেঞ্জের (ডিএসই) শোকজ নিয়ে পক্ষপাতিত রয়েছে। সম্প্রতি বেশ কিছু কোম্পানির দরবৃদ্ধি নিয়ে তথ্য বিশ্লেষণ করে এমন চিত্র ফুটে উঠেছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, গত দুই থেকে আড়াই মাসে ডিএসইতে সবচেয়ে বেশি দর বেড়েছে মুন্নু স্টাফলার্সের। এই সময়ে কোম্পানিটির ৬৪১ টাকা থেকে ২১০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। কিন্তু কোম্পানিটিকে ডিএসইর পক্ষ থেকে একবার শোকজ করা হয়েছে। এরপর এক প্রকার ঘুমিয়ে পড়ে ডিএসই কর্তৃপক্ষ ও সার্ভিলেন্স বিভাগ। একইকথা খাটে মুন্নু সিরামিকের ক্ষেত্রেও। মুন্নু সিরামিকের দর ১১৫ টাকা থেকে ২৪০ টাকায় উঠেছে। এই কোম্পানির দরবৃদ্ধি নিয়েও ডিএসই না দেখার ভান করেছে।

গত আগস্ট মাসে স্ট্যান্ডার্ড সিরামিক নামের কোম্পানির আংশিক উৎপাদন বন্ধের খবর দেওয়া হয়। এরপরও তিন মাসে ১৫০ টাকার কোম্পানির দর ৪৭১.১০ টাকায় ওঠে। কিন্তু ডিএসইর সার্ভিলেন্স বিভাগ নিশ্চুপ থাকে। আলহাজ টেক্সটাইল, স্টাইল ক্রাফট, ওয়াটা কেমিক্যালের মতো কোম্পানির শেয়ারদর আকাশচুম্বী। কিন্তু কার চোখে কিছু পড়ে না।

অভিযোগ রয়েছে, ডিএসইর কর্তৃপক্ষ ও সার্ভিলেন্স অনেক কিছুই দেখেও না দেখার ভান করে থাকে। কোনো গোষ্ঠী বা চক্রকে সুবিধা দিতেই প্রতিষ্ঠানটির এমন আচরণ বলে অভিযোগ করছেন বিনিয়োগকারীরা।

এদিকে পুঁজিবাজারে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ার লেনদেন শুরুর দিন থেকেই অস্বাভাবিক হারে দর বাড়তে দেখা যায়। শুরুর দিনই ১০ টাকার শেয়ার ৫০-৬০ টাকা হয়ে যাওয়ার উদাহরণ রয়েছে। নতুন তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ারদরে এ অস্বাভাবিক উত্থান ঠেকাতে লেনদেন শুরুর দিন থেকেই উদ্যোক্তা ও পরিচালক বাদে অন্য সব শেয়ার লক ফ্রি করে দেয়ার সম্প্রতি প্রস্তাব করা হয়েছে।

বিনিয়োগকারীদের অভিযোগ, তারল্য সংকটের কারণে বাজারে পর্যাপ্ত বিনিয়োগ আসছে না। অন্যদিকে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থাহীনতা বিরাজ করছে। ফলে বাজারে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরিয়ে আনার জন্য আইসিবির পাশাপাশি অন্যান্য প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীকে সক্রিয় ভূমিকায় দেখা যাচ্ছে না। পুঁজিবাজারে গত ১০ বছরে তেমন কোনো ভালো কোম্পানির আইপিও আসেনি বলে ব্রোকাররা অভিযোগ করেন। ফলে তাদের ঘুরেফিরে গুটিকয়েক কোম্পানিতে বিনিয়োগের জন্য গ্রাহকদের পরামর্শ দিতে হয় বলে জানান।

এদিকে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক প্রায় ৯ মাসে কমেছে ১ হাজার ২০০ পয়েন্ট। একই সময়ের ব্যবধানে বাজার মূলধন বা শেয়ারের বাজারমূল্য কমেছে প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা।

এভাবেই দেশের শেয়ারবাজার সূচক তলানিতে নেমে যাচ্ছে। কারণ বাজারের ওপর বিনিয়োগকারীদের আস্থা নেই। সূচক যেমন তলানিতে, আস্থাও তলানিতে। এখন এই অনাস্থা গিয়ে ঠেকেছে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার ওপর। এতে প্রতিদিনই কমছে শেয়ারের দাম, সে সঙ্গে কমছে সূচক ও লেনদেনও।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থার ওপরই বিনিয়োগকারীদের এখন সবচেয়ে বেশি অনাস্থা। ফলে বর্তমান কমিশনের কোনো উদ্যোগেই এখন বিনিয়োগকারীরা আস্থা খুঁজে পাচ্ছেন না। আবার বাজারে যে কারসাজির ঘটনা ঘটছে, সেসব ঘটনায়ও কারও দৃষ্টান্তমূলক কোনো শাস্তি হয়নি। এ অবস্থায় বাজারে নতুন বিনিয়োগ তো আসছেই না, উল্টো মানহীন কোম্পানির মাধ্যমে বাজার থেকে নানাভাবে টাকা বেরিয়ে যাচ্ছে।

শেয়ারবাজার পরিস্থিতি নিয়ে গত ১৬ সেপ্টেম্বর বৈঠক করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বৈঠকে বাজারের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আলোচনা হয়। এর মধ্যে অন্যতম ছিল, বাজারে ভালো কোম্পানি আনা ও ব্যাংকের বিনিয়োগ বৃদ্ধি। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংক শেয়ারবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ বাড়াতে নগদ অর্থ জোগান দেওয়ার উদ্যোগ নেয়। আইনি সীমার মধ্য থেকে যেসব ব্যাংকের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে, তাদের রেপোর বিপরীতে নগদ অর্থ সরবরাহ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দেওয়া এ সুবিধা নিতে এখন পর্যন্ত একটি ব্যাংক ছাড়া আর বেশি কেউ আগ্রহ দেখায়নি। একমাত্র বেসরকারি খাতের সিটি ব্যাংক বিনিয়োগের জন্য রেপোর বিপরীতে ৫০ কোটি টাকা নিয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<71914 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1