শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
হুটসুইট ও 'উই আর সোশ্যাল' এর প্রতিবেদন

ইন্টারনেটের গতি বাড়ছে বিশ্বে, কমছে বাংলাদেশে

ষ বিশ্বের তুলনায় দেশে গতি কমেছে তিনগুণ ষ স্টেকহোল্ডাররা একে অপরের দিকে আঙুল তুলে দায় এড়াচ্ছেন ষ দেশের মোবাইল ও ব্রডব্যান্ডের দুই সেবাতেই গড় গতি ৯.০৬ এমবিপিএস ষ সবচেয়ে বেশি গতি আইসল্যান্ডে
আহমেদ তোফায়েল
  ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০০:০০
ছবি : ইন্টারনেট

বাংলাদেশ বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশের তুলনায় ইন্টারনেটের গতির দিক থেকে অনেক পিছিয়ে। বিশ্বে যখন ইন্টারনেটের গড় গতি প্রতি সেকেন্ডে ২৫.০৮ মেগাবাইটস (এমবিপিএস) তখন বাংলাদেশে মোবাইল ও ব্রডব্যান্ডের দুই সেবাতেই গড় গতি ৯.০৬ এমবিপিএস। অর্থাৎ বাংলাদেশের তুলনায় বিশ্বের ইন্টারনেট গতি তিনগুণ বেশি। ইন্টারনেটের কম গতির জন্য স্টেকহোল্ডাররা একে অপরের দিকে আঙুল তুলে দায় এড়াচ্ছে।

অনলাইন নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান হুটসুইট ও 'উই আর সোশ্যাল' সম্প্রতি এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে জানিয়েছে বিশ্বে যখন ইন্টারনেট গতি ধীরে ধীরে বাড়ছে বাংলাদেশে তখন কমছে। তাদের হিসাবে, সারা বিশ্বে ব্রডব্র্যান্ডে ইন্টারনেটের গড় গতি ৫৪ দশমিক ৩৩ এমবিপিএস, অথচ বাংলাদেশে এই চিত্র ২৫.০৮ এমবিপিএস। বিশ্বে মোট ১২টি দেশে ফিক্সড ইন্টারনেট সংযোগের গড় গতি ১০০ এমবিপিএস, আর ১০টি দেশের মোবাইল সংযোগে ইন্টারনেটের গড় গতি ৫০ এমবিপিএস।

এ প্রসঙ্গে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের (আইএসপিএবি) সভাপতি এমএ হাকিম জানান, দেশে ইন্টারনেটের সবচেয়ে ভালো সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জ ট্রান্সমিশন লিংক পাওয়া। এ জন্য ন্যাশনওয়াইড টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক (এনটিটিএন) থেকে লাইসেন্স নিতে হয়।

এনটিটিএন দেশের টেলিকমিউনিকেশন খাতে ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠার জন্য জন্য কাজ করে আসছে। বর্তমানে এখাতে ৫টি লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠান আছে। এদের মধ্যে সামনের সারির দুটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠান দুটি হলো- ফাইবার অ্যাট হোম এবং সামিট কমিউনিকেশন লিমিটেড। আর বাকি তিনটি সরকারি মালিকানাধীন। তবে তাদের কাভারেজ খুবই সীমিত আকারে।

এমএ হাকিম জানান, ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটে তাদের প্রতিষ্ঠান ১০০ এমবিপিএস গতির ইন্টারনেট সরবরাহ করে থাকে। কিন্তু এই তিন শহরের বাইরে অন্য কোথাও ট্রান্সমিশন লিংকের কারণে ১০ এমবিপিএস সরবরাহ করাও অনেক কঠিন সাধ্য। খরচও বেশি পড়বে বলে জানান তিনি।

তিনি আরও বলেন, 'এনটিটিএন ছিল ইন্টারনেট শিল্পের জন্য অনেক বড় আস্থার জায়গা। কিন্তু তারা পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারেনি। ব্রডব্যান্ড কিংবা মোবাইলে নেট সেবার মানেও উন্নতি হয়নি। আগে মোবাইল ফোন অপারেটরগুলো এনটিটিএনের মতো ইন্টারনেট সেবার ক্ষেত্রে ট্রান্সমিশন প্রতিষ্ঠা করতে পারত। কিন্তু ২০১৩ সাল থেকে সরকার তাদের সেই সেবা বন্ধ করে দিয়েছে। এই সুযোগে এনটিটিএন অপারেটর দুটি দ্বৈতভাবে ৫ বছর আগের তুলনায় ইন্টারনেট সেবার দাম বাড়িয়েছে ৩০ শতাংশ।'

সিঙ্গাপুরের উদাহরণ টেনে এমএ হাকিম জানান, সিঙ্গাপুর বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দ্রম্নতগতির ইন্টারনেট সেবা দিয়ে থাকে। তাদের ইন্টারনেটের গতি গড়ে ১৯১ এমবিপিএস। এটির জন্য সিঙ্গাপুর সরকার কয়েক বিলিয়ন ডলার খরচ করেছে। প্রতিটি ঘরে ফাইবার অপটিক ক্যাবলের মাধ্যমে ইন্টারনেট সংযোগ নিশ্চিত করেছে তারা। কিন্তু বিপরীতে বাংলাদেশ সরকার কয়েক হাজার কোটি টাকা খরচ করে মাত্র একটি নেটওয়ার্ক উন্নয়নে কাজ করেছে। কিন্তু লাভের হিস্যা গিয়ে জমা হচ্ছে দুটি এনটিটিএন অপারেটরের ঘরে। বিনিময়ে কোনো উপকারই হচ্ছে না সাধারণ নাগরিকদের।

আইএসপিএবির মতের সঙ্গে একমত মোবাইল অপারেটরগুলোও। তারা বলছে, তারাও বিশ্বাস করে এনটিটিএনই সেরা সার্ভিস দেয়ার জন্য যথেষ্ট ছিল।

একটি মোবাইল অপারেটর কোম্পানির সিনিয়র একজন কর্মকর্তা এই প্রসঙ্গে জানান, ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্কিং ইকোসিস্টেমের এই ইসু্যটি গত ২৩ জানুয়ারি দেশের সেরা তিনটি মোবাইল ফোন অপারেটর কোম্পানির মাধ্যমে টেলিকম নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে তুলে ধরা হয়েছে। সেখানে কোর ফাইবার এবং উচ্চ মূল্যের ইন্টারনেট সেবার মতো বাধাগুলো দূর করার অনুরোধ করা হয়েছে।

যোগাযোগ করা হলে এনটিটিএন অপারেটরগুলো জানিয়েছে, মোবাইল ফোন অপারেটরগুলো ইচ্ছে করেই গতি কমিয়ে রেখেছে। তারা যথেষ্ট বিনিয়োগেও অনাগ্রহী। অবশ্য অপারেটরগুলো জানিয়েছে, ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট কানেকশনের ক্ষেত্রে অন্য ইসু্য কাজ করছে।

ফাইবারঅ্যাটহোমের সূত্রে জানা গেছে, ৭০ শতাংশ ঘটনার ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে ফাইবার অপটিক সংযোগের বিপরীতে তারা মাইক্রোওয়েব (রেডিও ট্রান্সমিশন) ব্যবহার করার চেষ্টা করে থাকেন। মাইক্রোওয়েব নেটওয়ার্কের নির্ভর হলে ইন্টারনেট স্পিড বাড়ানো কিছুতেই সম্ভব হবে না। ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগের বিষয়ে তারা বলেন, কিছু চ্যালেঞ্জ এখনও রয়ে গেছে। তবে সেটিকে অত বড় বাধা হিসেবে দেখছি না।

প্রতিবেদনে কি আছে?

সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজম্যান্ট পস্ন্যাটফর্ম হুটসুইট ও ডিজিটাল মার্কেটিং এজেন্সি 'উই আর সোশ্যাল' এর তৈরি করা প্রতিবেদন 'দ্য ডিজিটাল ২০১৯' এ দেখা যায়, মোবাইল ইন্টারনেট সংযোগে সবচেয়ে বেশি গতি রয়েছে আইসল্যান্ডে। তাদের গড় গতি ৭২ দশমিক ৭৭। যেটি কিনা বাংলাদেশের চেয়ে আটগুণ বেশি।

এই প্রতিবেদনে আরও দেখা যায়, ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের বেশিরভাগই মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার করে থাকেন। এদের সিংহভাগই ব্যবহার করেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। বাংলাদেশে উলেস্নখযোগ্য হারে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়ছে বলেও জানানো হয়েছে ওই প্রতিবেদনে। বাংলাদেশে এই ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১২ শতাংশ। ফলে বাংলাদেশ বিশ্বে নবম অবস্থানে আছে। যেখানে ভারত, চীন এবং যুক্তরাষ্ট্র যথাক্রমে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে আছে।

ওই প্রতিবেদনে প্রকাশ হয়েছে, বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৫৭ শতাংশ এখন ইন্টারনেট সেবার আওতায়। বিশ্বের মানুষ অনলাইনে প্রতিদিন গড়ে সাড়ে ছয় ঘণ্টা সময় ব্যয় করে।

প্রতিবেদনের পরিসংখ্যানে আরো দেখা গেছে, বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীদের অধিকাংশেরই বয়স ১৮ খেকে ২৪ বছরের মধ্যে। আর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও মানুষের বয়স একটি আরেকটির সঙ্গে জড়িত। ১৮ খেকে ২৪ বছরের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর ৪৭ শতাংশই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যস্ত থাকে। যাদের মধ্যে ৩৩ শতাংশ পুরুষ আর ১৪ শতাংশ নারী। আর মোট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীদের ৭৪ শতাংশই পুরুষ।

প্রতিবেদনটি বলছে, বাংলাদেশ বিশ্বের ফেসবুক ব্যবহারকারীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বৃদ্ধি পাওয়া দেশ হিসেবে রেকর্ড করেছে। অবশ্য এ অবস্থান ভারত ও ফিলিপাইনের পর। এই সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়ছে। ২০১৮ সালে বিশ্বে ৩৬০ মিলিয়ন নতুন ইন্টারনেট ব্যবহারকারী বেড়েছে।

প্রতিবেদনের একটি উপাত্ত বলছে, বিশ্বব্যাপী মোট জনসংখ্যার ৫৭ শতাংশ এখন ইন্টারনেট ব্যবহার করে থাকে। এমন তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে, জাতিসংঘ, ইউএস সেনসাস, বিশ্ব ব্যাংক, মার্কেট রিসার্স কোম্পানি গেস্নাবাল ওয়েব ইনডেক্স এবং পরিসংখ্যান সাইট ইন্টারনেট ওয়ার্ল্ড স্টেট এর কাছ থেকে। বিশ্বের মধ্যে ইউনাইটেড আরব আমিরাতের ৯৯ শতাংশ মানুষই ইন্টারনেট ব্যবহার করে থাকে। অন্যদিকে ঘানার ৩৫ শতাংশ মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<38114 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1