বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

২৩ হাজার কোটি টাকার রেকর্ড প্রবাসী আয়ে

যাযাদি রিপোর্ট
  ০৫ আগস্ট ২০২০, ০০:০০

ঈদের আগের মাস জুলাইয়ে প্রায় ২৬০ কোটি ডলারের প্রবাসী আয় (রেমিট্যান্স) এসেছে। বাংলাদেশি টাকায় যার পরিমাণ ২২ হাজার ৯৫ কোটি টাকা। কোনো একক মাসে এত বেশি প্রবাসী আয় আগে কখনো আসেনি। এর আগে একক মাসে সর্বোচ্চ প্রবাসী আয় এসেছিল (ঠিক আগের মাসেই) ১৮৩ কোটি ডলার (প্রায় ১৫ হাজার ৫৫৫ কোটি টাকা)। সে হিসাবে এক মাসেই প্রবাসী আয় বেশি এসেছে প্রায় সাড়ে ছয় হাজার কোটি টাকা।

করোনাভাইরাসের মধ্যে এত প্রবাসী আয়ে উচ্ছ্বাস দেখা গেছে ব্যাংক কর্মকর্তাদের মাঝে। এত আয় আসায় ব্যাংকগুলোতে ডলারের উদ্বৃত্ত দেখা দিয়েছে। এ জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার কিনে দাম স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছে। এর মধ্যে ডলারের বিপরীতে টাকা কিছুটা শক্তিশালী হয়েছে। দীর্ঘদিন ৮৪ টাকা ৯৫ পয়সায় প্রতি ডলারের দাম আটকে রেখেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক, এখন কমে হয়েছে ৮৪ টাকা ৮০ পয়সা।

তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যা আয় আসছে, তা সাময়িক। এতে উচ্ছ্বাসের কিছু নেই। করোনার কারণে অনেক প্রবাসীকে দেশে ফেরত আসতে হচ্ছে। তারা সঞ্চয় ভেঙে টাকা দেশে ফেরত পাঠাচ্ছেন। বিদেশে যা সম্পদ করেছেন, সবকিছু বিক্রি করে দেশে ফেরত আসছেন। দেশ ফেরত এসব মানুষকে কাজে লাগানো এখন বড় চ্যালেঞ্জ।

সার্বিক বিষয়ে রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিটের (রামরু) চেয়ারম্যান তাসনিম সিদ্দিকী বলেন, করোনায় অনেকে সঞ্চয় ভেঙে পাঠাচ্ছে। আবার এখন হুন্ডি, স্বর্ণ চোরাচালান কমে গেছে। এর ফলে বৈধ পথে আয় আসা বেড়েছে। এর মানে এটা না যে, অভিবাসীরা ভালো আছেন। কিছুদিন পরে আর এত আয়ও আসবে না। ফলে এসব বিষয় নিয়ে ভাবতে।

জানা যায়, করোনাভাইরাসের প্রকোপের মধ্যে গত জুন মাসে প্রবাসীরা ১৮৩ কোটি ডলার পাঠান। এর আগে কোনো একক মাসে এত আয় আসেনি। সব মিলিয়ে ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রবাসীদের ১ হাজার ৮২০ কোটি ডলার আয় দেশে আসে, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ১১ শতাংশ বেশি। আর গত জুলাইয়ে সেই রেকর্ড ভেঙে প্রবাসী আয় এসেছে ২৫৯ কোটি ৯৫ লাখ ডলার।

ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি আয় আসে। আর জুলাই মাসে ব্যাংকটির মাধ্যমে এসেছে ৮০ কোটি ডলার, যা যে কোনো সময়ের তুলনায় সর্বোচ্চ। ব্যাংকটির উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু রেজা মো. ইয়াহিয়া বলেন, প্রণোদনার কারণে বৈধ পথে আয় বেড়েছে। এ ছাড়া করোনার কারণে অনেকে জমানো টাকাও দেশে পাঠাচ্ছে। অনেকে দেশে ফেরত আসছেন, এর বিপরীতে নতুন করে জনশক্তি না পাঠাতে পারলে এত আয় আসবে না।

যেসব দেশ থেকে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় আসে, সেসব দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে রেমিট্যান্স হাউস ও ব্যাংকগুলো বন্ধ করা হয়েছিল। এখন অনেক দেশ খুলে দিয়েছে। তবে বাংলাদেশি শ্রমিকরা পড়েছেন বিপদের মুখে। অনেকে কাজ হারিয়ে ফিরে আসছেন। প্রবাসী আয় আহরণের শীর্ষ ১৫টি উৎস দেশ হলো সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই), যুক্তরাষ্ট্র, কুয়েত, যুক্তরাজ্য, মালয়েশিয়া, ওমান, কাতার, ইতালি, বাহরাইন, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ আফ্রিকা, ফ্রান্স, দক্ষিণ কোরিয়া ও জর্ডান।

ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, সংকটে থাকলেও ঈদের কারণে অনেকেই টাকা পাঠিয়েছেন। আবার বন্যা ও করোনার কারণে অনেক সাহায্যও আসছে। যারা দেশে চলে আসছেন, তারাও টাকা পাঠিয়ে দিচ্ছেন। কারণ, বহন করে বেশি টাকা আনা যায় না। এ জন্য আয় বেড়েছে। সামনের দিনে প্রবাসী আয় পরিস্থিতি খুব খারাপ হয়ে পড়বে।

বৈধ পথে প্রবাসী আয় বাড়াতে চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা ঘোষণা করে সরকার। সে অনুযায়ী, ১ জুলাই থেকে প্রবাসীরা প্রতি ১০০ টাকার বিপরীতে ২ টাকা প্রণোদনা পাচ্ছেন। বাজেটে এ জন্য ৩ হাজার ৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। এর সঙ্গে যুক্ত করে অনেক ব্যাংক আরও ১ শতাংশ বেশি প্রণোদনা দিচ্ছে।

রাষ্ট্রমালিকানাধীন অগ্রণী ব্যাংকের মাধ্যমে জুলাই মাসে ৪২ কোটি ডলার আয় আসে। যা যে কোনো মাসের চেয়ে বেশি। ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শামস-উল ইসলাম বলেন, আমাদের ব্যাংকের মাধ্যমে এক মাসে এত আয় আগে আসেনি। চার শাখার মাধ্যমে ৩ কোটি ডলারের বেশি আয় এসেছে। আমরা সরকারের ২ শতাংশের সঙ্গে অতিরিক্ত ১ শতাংশ প্রণোদনা দিয়ে যাচ্ছি। এর ফলে আয় আসা বেড়েছে। তবে মনে হয় না, এরপর কোনো মাসে এত প্রবাসী আয় আসবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<107678 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1