শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কর্মসংস্থান হারানো শ্রমিকের ৯০ ভাগই পোশাক খাতের

যাযাদি রিপোর্ট
  ০৬ জুন ২০২০, ০০:০০

১ জুন পর্যন্ত দেশের সব শিল্পখাত মিলিয়ে এখন পর্যন্ত সাড়ে ১৭ হাজারেরও বেশি শ্রমিক কর্মসংস্থান হারানোর তথ্য পেয়েছে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীন কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর (ডিআইএফই)। এর মধ্যে ৯০ শতাংশেরও বেশি শ্রমিক পোশাক খাতের। মূলত কারখানাগুলো উৎপাদন সক্ষমতা ব্যবহার করতে না পারার পাশাপাশি কাজের ঘাটতিতে কর্মসংস্থান হারাতে যাচ্ছেন খাতটির প্রচুর শ্রমিক। পোশাক খাতের উদ্যোক্তা প্রতিনিধিদের দাবি, কারখানা বন্ধ হওয়ার পাশাপাশি টিকে থাকতে ব্যয় সংকোচনের তাগিদে শ্রমিক ছাঁটাইয়ে বাধ্য হচ্ছেন কারখানা মালিকরা। চলমান পরিস্থিতি নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করে তারা বলছেন, এ প্রেক্ষাপটে পোশাক খাতের ৪০ লাখ শ্রমিকের মধ্যে ২০ শতাংশ বা আট লাখ শ্রমিক ছাঁটাই হয়ে যেতে পারেন।

শ্রম ও শিল্পসংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, আসন্ন মন্দা মোকাবেলায় শিল্প-কারখানাগুলো ব্যয় সংকোচনের পরিকল্পনা নিয়েছে। আবার উৎপাদন সক্ষমতা অনুযায়ী পর্যাপ্ত কাজও নেই কারখানাগুলোয়। এ কারণে ধীরে ধীরে বাড়ছে শ্রমিক ছাঁটাইয়ের ঘটনা। বর্তমানে কারখানাগুলো সাকল্যে উৎপাদন সক্ষমতা মাত্র অর্ধেক ব্যবহার করতে পারছে। অব্যবহূত থেকে যাচ্ছে বাকি অর্ধেক। এরই ধারাবাহিকতায় অদূর ভবিষ্যতে আরো শ্রমিক ছাঁটাই হবে বলে মনে করছেন শিল্প মালিক প্রতিনিধিরা। অনেক ক্ষেত্রেই কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে, আবার অনেক ক্ষেত্রে ব্যয় কমিয়ে কারখানা টিকিয়ে রাখার তাগিদে আইনানুগ পদ্ধতিতেই এ ছাঁটাইয়ের সংখ্যা আরো বাড়বে বলে দাবি করছেন তারা।

নিটওয়্যার খাতের কারখানা মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর প্রথম সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম জানালেন, কোনো কারখানাই সক্ষমতার পূর্ণ ব্যবহার করতে পারছে না। ৩৫ শতাংশ সক্ষমতায় কারখানা সচল রেখেছে এমন ঘটনাও আছে। বড় কারখানাগুলোও ৬০ শতাংশের বেশি সক্ষমতা ব্যবহার করতে পারছে না। এ প্রেক্ষাপটে শ্রমিক ছাঁটাই হবেই।

তিনি বলেন, এরই মধ্যে যা হয়েছে তাসহ চলমান পরিস্থিতিতে ৪০ লাখ শ্রমিকের অন্তত ২০ শতাংশ কাজ হারাতে পারেন বলে আশঙ্কা করছি।

শ্রম ও শিল্পসংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থার একাধিক সূত্র জানিয়েছে, প্রায় সব পোশাক কারখানায় শ্রমিক ছাঁটাইয়ের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে বাছাই করা হচ্ছে এক বছরের কম সময় ধরে কাজ করছেন এমন শ্রমিকদের।

এদিকে পোশাক খাতের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি ড. রুবানা হক ৪ জুন পোশাক শ্রমিকদের কভিড-১৯ পরীক্ষার জন্য স্থাপিত এক ল্যাব উদ্বোধনকালে বলেন, পোশাক কারখানায় বিপুল পরিমাণ ক্রয়াদেশ বাতিল হয়েছে। কিছু ক্রয়াদেশ ক্রেতারা আবার দেবেন বলে জানিয়েছেন। এর পরও ৯৯ শতাংশ কারখানাকে ৫৫ শতাংশ ক্যাপাসিটিতে চালাতে হবে। ম্যাকেঞ্জির তথ্য বলছে, বিশ্বে কনজাম্পশন কমবে ৬৫ শতাংশ। কনজাম্পশন যদি ৬৫ শতাংশ কমে, তাহলে আমরাও আশা করতে পারি না, পোশাকের চাহিদা বাড়বে। জুনে আমরা ৫৫ শতাংশ ক্যাপাসিটিতে আছি, জুলাইয়ে কী হবে আমরা জানি না, বুঝতেই পারছি এক ধরনের ধাক্কা আমাদের সামলাতে হবে।

শ্রমিক ছাঁটাই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ছাঁটাই শুরু হবে জুন থেকে। এটা অনাকাঙ্‌িক্ষত বাস্তবতা। কিন্তু করার কিছু নেই। কারণ ৫৫ শতাংশ ক্যাপাসিটিতে কারখানা চললে আমাদের কাছে ছাঁটাই ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না। এদিকে করোনার প্রাদুর্ভাবে কারখানা বন্ধের পর জেলাভিত্তিক শ্রমিক ছাঁটাইয়ের তথ্য সংগ্রহের উদ্যোগ নেয় ডিআইএফই। সংস্থাটির হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, নভেল করোনাভাইরাসজনিত সংকটে শ্রমিক ছাঁটাই না করার বিষয়ে সরকারের নির্দেশনা থাকলেও এরই মধ্যে অনেক শ্রমিক কর্মসংস্থান হারিয়েছেন।

মোট ২৩ জেলা থেকে ১ জুন পর্যন্ত এ শ্রমিক ছাঁটাইয়ের তথ্য সংগ্রহ করে ডিআইএফই। এর মধ্যে যে কয়টি জেলা থেকে শ্রমিক ছাঁটাইয়ের তথ্য পাওয়া গেছে, তার মধ্যে রয়েছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদী। জেলাগুলোর মোট ৬৭টি কারখানার ৮২ হাজার ৭৯২ শ্রমিকের মধ্যে ছাঁটাই হয়েছেন ১৭ হাজার ৫৭৯ জন। ছাঁটাইকৃতদের মধ্যে পোশাক খাতের শ্রমিক ৯০ শতাংশেরও বেশি।

তথ্যমতে, ঢাকা জেলায় মোট ২৬টি কারখানায় শ্রমিক ছাঁটাই হয়েছে ৭ হাজার ৪৮৮ জন। এসব কারখানার মোট শ্রমিক সংখ্যা ২০ হাজার ৫ জন। চট্টগ্রাম এলাকার মোট তিনটি কারখানা থেকে ছাঁটাই হয়েছেন ১৫১ জন শ্রমিক। এ কারখানাগুলোয় কর্মরত শ্রমিক ছিলেন ২ হাজার ৫৮১ জন।

ডিআইএফইর তথ্য বলছে, সবচেয়ে বেশি শ্রমিক ছাঁটাই হয়েছে গাজীপুর জেলায়। এখানকার মোট ৩০টি কারখানার কর্মরত ৫৩ হাজার ৮৮৭ শ্রমিকের মধ্যে ছাঁটাই হয়েছেন ৯ হাজার ১৯৩ জন।

অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জ এলাকায় ছাঁটাইয়ের ঘটনা ঘটেছে মোট ছয় কারখানায়। কারখানাগুলোয় কর্মরত ৫ হাজার ৭৩০ শ্রমিকের মধ্যে কর্মসংস্থান হারিয়েছেন ১৯৩ জন। এছাড়া নরসিংদী এলাকায় দুটি কারখানায় কর্মরত ৫৮৯ শ্রমিকের মধ্যে ছাঁটাই করা হয়েছে ৫৫৪ জনকে।

এ বিষয়ে ডিআইএফই মহাপরিদর্শক শিবনাথ রায় বলেন, ৬৭ কারখানায় ছাঁটাই হওয়া শ্রমিকের সংখ্যা ১৭ হাজার ৫৭৯ জন। এ সংক্রান্ত সব তথ্য-উপাত্ত নিয়ে আমরা আলোচনায় বসব। আইন অনুসরণের বিষয়গুলো যাচাই-বাছাই করা হবে। শ্রমিক ছাঁটাইয়ের ক্ষেত্রে যদি আইনের লঙ্ঘন হয়ে থাকে, তাহলে সংশ্লিষ্ট কারখানা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<101415 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1