১১জন ব্যাটসম্যান মিলে খেললেন ১২.১ ওভার। অর্থাৎ ৭৩ বল। এই ৭৩ বল খেলে করতে পারলেন মাত্র ৬ রান। হার ২৪৯ রানে। সাউথ এশিয়ান গেমসে মেয়েদের টি২০ ফরম্যাটে বাংলাদেশের বিপক্ষে এমন স্কোরবোর্ড মালদ্বীপের। বৃহস্পতিবার অনূর্ধ্ব-২৩ পর্যায়ের লড়াইয়ে দ্বীপ দেশটিকে উড়িয়ে এসএ গেমসে জয়ের হ্যাটট্রিক করেছে বাংলাদেশ। শুরুতে শ্রীলংকা আর দ্বিতীয় ম্যাচে নেপালকে গুঁড়িয়ে আগেই ফাইনাল নিশ্চিত হয়ে যাওয়ায় মালদ্বীপ ম্যাচ ছিল শুধুই নিয়মরক্ষার। তাতে ফাইনালের আগে ব্যাটিং প্রস্তুটিটা ভালোই করেছে লাল-সবুজরা। একপেশে ভঙ্গিতে আরেকটি ম্যাচ জিতল বাংলাদেশ নারী দল।
চলতি এসএ গেমসে রেকর্ড গড়ে বাংলাদেশ নারী দল বৃহস্পতিবার মালদ্বীপকে ২৪৯ রানে হারিয়ে স্বর্ণপদকের মঞ্চে উঠে গেলেন সালমা-নিগার-ফারজানারা। বাংলাদেশের ২ উইকেটে ২৫৫ রানের পাহাড়সম রানের জবাবে মালদ্বীপ গুটিয়ে যায় মাত্র ৬ রানে! ম্যাচে সেঞ্চুরি করেছেন বাংলাদেশের দুজন। মিডলঅর্ডারে নিগার সুলতানা ৬৫ বলে হার নামা ১১৩ রান করেন। চার নম্বরে ব্যাট করতে নামা ফারজানা হকের ব্যাট থেকে আসে ৫৩ বলে অপরাজিত ১১০ রান। টি২০তে এটাই বাংলাদেশ নারী দলের সর্বোচ্চ দলীয় রান। আর ২৪৯ রানের বিশাল এই জয়টাও আরেকটি রেকর্ড। এত বড় ব্যবধানে এই প্রথম কোনো ম্যাচ জিতল বাংলাদেশ!
টি২০তে এবারই প্রথম বাংলাদেশ নারী দলের কেউ সেঞ্চুরি পেল। যদিও এই ম্যাচটি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাবে না। সংগতভাবে ক্রিকেটারদের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে এই শতক যোগ হবে না। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সিনিয়র মিডিয়া ম্যানেজার রাবিদ ইমাম এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
মেয়েদের টি২০তে বাংলাদেশের হয়ে জোড়া সেঞ্চুরি করেছেন নিগার সুলতানা ও ফারজানা হক। আগে টিম টাইগ্রেস টি২০ দলের কারও সেঞ্চুরি ছিল না। দুই ব্যাটারের অপরাজিত সেঞ্চুরিতে ভর করে ২৫৫ রানের বিশাল স্কোর গড়ে বাংলাদেশ। জবাব দিতে নেমে কাঁপতে কাঁপতেই শেষ মালদ্বীপ। সালমা-সুমাইয়া-রিতুদের বোলিং তোপে মাত্র ৬ রানে অলআউট তারা।
২৫৬ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে প্রথম দুই ওভারে কোনো রানই নিতে পারেননি মালদ্বীপের দুই ওপেনার। উল্টো এই দুই ওভারে দুটি উইকেট হারায় তারা। সেই যে শুরু, তারপর রানের গতির চেয়ে বেশি গতিতে উইকেট হারিয়ে গুটিয়ে যায় ৬ রানে।
বাংলাদেশের হয়ে প্রথম ওভারেই ৩ উইকেট তুলে নেন রিতু মনি। ওভারের দ্বিতীয় ও তৃতীয় বলে পেয়েছিলেন পরপর উইকেট। পরের উইকেটটি পান ষষ্ঠ বলে। শেষপর্যন্ত ৪ ওভারে ৩ মেডেনে ১ রানে ৩ উইকেট ডানহাতি মিডিয়াম পেসারের। ৩ উইকেট নিয়েছেন সালমা খাতুনও। ৩.১ ওভারে ১ মেডেনে ২ রান খরচ তার। রাবেয়া ও নাহিদা নিয়েছেন একটি করে উইকেট। মালদ্বীপের দুই ব্যাটার হয়েছেন রানআউট, আউট হওয়াদের সাতজন রানের খাতাই খুলতে পারেননি।
এর আগে বাংলাদেশের হয়ে টি২০তে সেঞ্চুরি আনেন নিগার সুলতানা ও ফারজানা হক। অসাধারণ মাইলফলক স্পর্শ করে নিগার ১১৩ ও ফারজানা ১১০ রানে অপরাজিত থাকেন।
বৃহস্পতিবার নেপালের পোখারায় টস জিতে আগে ব্যাটিং করে বাংলাদেশ। শুরুটা হয় খুবই বাজে। ১৯ রানেই হারিয়ে ফেলে দুই উইকেট। দলীয় ১০ রানের মথায় প্রথমে আউট হন শামীমা সুলতানা ৫ করে। এরপর ৭ রান করে ফেরেন সানজিদা ইসলাম। দুই ?ওপেনার হারিয়ে বাংলাদেশ যখন চাপে তখনই জুটি গড়েন নিগার ও ফারজানা। দুজনে ১৮ ওভার ক্রিজে থেকে ২৩৬ রানের জুটি গড়ে অবিচ্ছিন্ন থাকেন। মাত্র ৩৫ বলে ফিফটি হাঁকানো নিগার সুলতানা প্রথমবারের মতো টি২০ সেঞ্চুরি তুলে নেন ৫৯ বলে। ফারজানার প্রথম টি২০ সেঞ্চুরি আসে ৪৯ বলে। দুজনে মিলে শেষদিকে রীতিমতো ঝড় তোলেন। এর মধ্যে শেষ পাঁচ ওভারে আসে ৮০ রান। যার মধ্যে ১৫তম ওভার থেকে আসে ২৪ রান। দুজনের জুটিতে আসে ২৩৬ রান। মাত্র ৬৫ বলে ১৪টি চার ও তিনটি ছক্কায় ১১৩ রান করেন নিগার। আর ৫৩ বলে ২০টি চারের সাহায্যে ১১০ রানে অপরাজিত থাকেন ফারজানা। শেষপর্যন্ত নির্ধারিত ওভারে দুই উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশের স্কোর দাঁড়ায় ২৫৫ রান।
মালদ্বীপকে নিয়ে এবার প্রায় সব দলই ছেলেখেলায় মেতেছে। নেপালের মেয়েদের কাছে মাত্র ১৭ রানে গুটিয়ে গিয়েছিল তারা। শ্রীলংকার বিপক্ষেও করতে পেরেছিল মাত্র ৩০ রান। আর বাংলাদেশের বিপক্ষে আরও করুণ অবস্থা তাদের।
শুধু তাই নয়, তাদের বিপক্ষে রান বন্যার খেলাতেও মেতেছিল দলগুলো। শ্রীলংকা তো করেছিল ২৭৯ রান। তাই তাদের বিপক্ষে খুব ভালো কিছু করবেন এমনটা প্রত্যাশিতই ছিল বাংলাদেশের মেয়েদের কাছে। অনেকটা পূরণও হয়েছে সে আশার।