ইচ্ছের কথাটা লুকিয়ে রাখেননি সৌরভ গাঙ্গুলি। প্রিন্স অব ক্যালকাটা আগেও বলেছেন তিনি বোর্ডের দায়িত্ব নিতে চান। এমন কী ভারতীয় ক্রিকেট দলের কোচও হতে আপত্তি নেই তার। সেই ইচ্ছের একটি সহসাই পূরণ হচ্ছে সাবেক এই অধিনায়কের।
সোমবারই ছিল সভাপতি পদে মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ দিন। কিন্তু তার আগেই জানা গেল- বোর্ড সভাপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে না। সর্বসম্মতিক্রমেই সৌরভই হচ্ছেন ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ডের (বিসিসিআই) সভাপতি। তারই ধারাবাহিকতায় হাসিমুখেই মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন সৌরভ গাঙ্গুলি। প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে না পড়ে বিসিসিআই প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন তিনি। ভারতীয় ক্রিকেটের সফলতম সাবেক এই অধিনায়কের সভাপতি হওয়া এখন আনুষ্ঠানিকতাই মাত্র। ৪৭ বছর বয়সী সৌরভই হবেন ভারতের কনিষ্ঠতম বোর্ড প্রেসিডেন্ট।
শুরুতে দৃশ্যপটে না থাকলেও রোববার রাতে চলে আসে তার নাম। এমনিতে শোনা যাচ্ছিল বিসিসিআই সভাপতি হতে পারেন ব্রিজেশ প্যাটেল। কিন্তু তিনি রোববার রাতে সরে দাঁড়িয়েছেন। গত শনিবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর সঙ্গে বৈঠক করেন সৌরভ। এর পরদিন মধ্যরাত পর্যন্ত চলা বোর্ড সভায় নাটকীয়ভাবে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি হিসেবে একক মনোনয়নের জন্য চূড়ান্ত হয় সৌরভের নাম।
এভাবে আচমকা ভারতীয় ক্রিকেটের শীর্ষ চেয়ারে বসতে পারায় খুশি প্রিন্স অব ক্যালকাটা। দায়িত্বটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবেই নিয়েছেন তিনি। সবকিছু ঠিক থাকলে ১০ মাসের জন্য বিসিসিআই প্রধানের দায়িত্ব পাবেন সৌরভ।
বলা হচ্ছে, ২০২১ পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনের কথা মাথায় রেখেই বোর্ডের নতুন সভাপতি পদে বসানো হচ্ছে সৌরভকে। এটা ক্ষমতাসীন বিজেপির গেমপস্ন্যান। সৌরভকে দিয়ে জনপ্রিয়তা আরও বাড়িয়ে নিতে চায় তারা। এ জন্যই চারদিকে গুঞ্জন সামনে পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচন থাকায় তৃণমূলের বিপক্ষে বিজেপির হয়ে প্রচারণার শর্তেই কি হলো এমন মোড় ঘোরানো কিছু?
অবশ্য প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হলেও ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে অব্যাহতি দিতে হবে সিএবি প্রেসিডেন্টকে। শীর্ষ আদালতের নিয়মানুসারে টানা ছয় বছর বোর্ডের কোনওরকম পদে দায়িত্ব সামলানোর পর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির 'কুলিং পিরিয়ডে' যেতে হয়! সিএবি দায়িত্বে দুই মেয়াদে রয়েছেন সৌরভ।
দায়িত্বটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবেই নিচ্ছেন সৌরভ গাঙ্গুলি। দায়িত্ব বুঝে নেওয়ার আগেই সাবেক এই অধিনায়ক জানাচ্ছিলেন, 'গত কয়েক বছরে বোর্ডের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এমন এক সময়ে প্রেসিডেন্ট হতে পেরে আমি খুশি। কিছু করার দারুণ সুযোগ এসেছে। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় হোক বা অন্য ভাবেই হোক, এটি বড় দায়িত্ব। বিসিসিআই বিশ্ব ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় সংস্থা। ভারত হল ক্রিকেটের পাওয়ারহাউস। সভাপতির দায়িত্ব রীতিমতো চ্যালেঞ্জিং।'
এর আগে মাথা উঁচু করেই নেতৃত্ব দিয়েছেন ভারতের। অধিনায়ক থেকে এবার বোর্ড প্রেসিডেন্ট। কোনটাকে এগিয়ে রাখবেন দাদা? এমন প্রশ্নের মুখে সোজা ব্যাট করলেন সৌরভ বললেন, 'দেখুন, দেশের অধিনায়ক হওয়ার ব্যাপারই আলাদা। তার সঙ্গে কোনো কিছুর তুলনা হয় না। তবে আমি কখনো ভাবিনি বোর্ড প্রেসিডেন্ট হতে পারব।'
সৌরভের সভাপতি হওয়ার আগাম খবরে অভিনন্দন জানিয়ে রেখেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। টুইটারে লিখেছেন, 'বোর্ড প্রেসিডেন্ট পদে সর্বসম্মতভাবে নির্বাচিত হওয়ার জন্য অভিনন্দন সৌরভকে। তুমি ভারত ও বাংলাকে গর্বিত করেছ। একটা দুর্দান্ত ইনিংসের অপেক্ষায় থাকলাম তোমার।'